মনোনয়নপত্র পেশের সময়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে সরব হল উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার প্রায় সব বিরোধী দলই। মঙ্গলবার কোচবিহারের হরিণচওড়ায় সকাল ১০টা থেকে প্রায় দু’ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, মালদহে বিরোধী দলগুলির তরফে প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছে। আজ, বুধবার কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ভোটের মনোনয়নপত্র পেশ শুরু। সোমবার মালদহে মনোনয়ন পেশ শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে সর্বত্র কড়া পুলিশ পাহারার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তাতে অবশ্য আশ্বস্ত নন কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, “কোচবিহার ১ ব্লকের জিরানপুরে দলীয় অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এক নেতার বাড়িতেও হামলা হয়। চিলকিরহাট ঘুঘুমারি হাড়িভাঙার মত বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তার দাবিতে অবরোধে বাধ্য হয়েছি।”
বিজেপির অভিযোগ বক্সিরহাটের জোড়াইয়ে দলের এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ নিতে থানা গড়িমসি করেছে। ভানুকুমারি জোড়াই হরিরহাট রসেরকুঠি ঢাংঢিংগুড়ি পুন্ডিবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল দে বলেন, “তুফানগঞ্জ ১, ২ এবং কোচবিহার ২ ব্লকে তৃণমূলের ওই সন্ত্রাস চরম আকার নিয়েছে। সর্বদল বৈঠকে থানার অভিযোগ নেওয়ার গড়িমসির কথাও বলা হয়েছে। ফলে আগ্রহীদের কত জন নির্বিঘ্নে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে।” |
জেলায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবারও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “দিনহাটা ১ মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি ব্লক ছাড়া জেলার বাকি ৯টিই সন্ত্রাস কবলিত ফলে গোলমালের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী ও পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল জানান, মনোনয়ন পর্ব সুষ্ঠুভাবে মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
একই ভাবে উত্তর দিনাজপুর জেলায় মনোনয়ন পত্র বিলি ও জমা দেওয়ার সময়ে গোলমালের আশঙ্কা করছে কংগ্রেস ও সিপিএম। তাঁদের আশঙ্কা, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র তুলতে ও জমা দিতে বাধা দেওয়ার জন্য হামলা চালাতে পারে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রতিটি বিডিও অফিস ও মহকুমাশাসকের দফতরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ ভৌমিক জানান, প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তুলতে বা জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলে প্রশাসনিক কাজকর্ম অচল করে দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালীন সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ছাড়াও পর্যাপ্ত র্যাফ মোতায়েন থাকবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, নির্বিঘ্নে নির্বাচন শেষ করার জন্য দলের তরফে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকে কোনও রং বিচার না করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের জন সমর্থনে আতঙ্কিত হয়ে বিরোধীরা অপপ্রচার চালিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।”
এদিন বালুরঘাটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক কল্লোল মুখোপাধ্যায় পৌঁছন। তিনি কুমারগঞ্জ ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। সিপিএমের তরফে মনোনয়নে প্রার্থীদের বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জেলা সিপিএম বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করে ‘একটি’ আসনে ‘একাধিক’ প্রার্থী ঠিক করেছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। সিপিএম সূত্রের খবর, একজন প্রার্থী কোনও কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারলে দ্বিতীয় জন দাঁড়িয়ে যাবেন। গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর এবং বংশীহারীর মতো বেশ কিছু অঞ্চলে সিপিএম এক আসনের জন্য তিন জন করে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। জেলা সিপিএম সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী অবশ্য বিকল্প প্রার্থী রাখার বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের অভিযোগ, “ইতিমধ্যে ফোনে প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হলেও ভীত নই।” তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য জানান, বিরোধীদের অহেতুক ভয় বা হুমকি দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর কটাক্ষ, “জনভিত্তি হারিয়ে ওঁরা কুৎসা রটানোর ছক কষেছেন। আমরা কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি।”
মালদহে গত দু’দিনে ৩৬০ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সোমবার গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭৪ জন ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬ জন মনোনয়ন দেন। |