পরিকল্পনা ছিল জেলায় জেলায় অগ্নি-পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কথামত কয়েক দফায় টাকাও পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু কাজে লাগানো যায়নি দিল্লি থেকে পাঠানো এই যৌথ প্রকল্পের টাকা। পড়ে আছে ট্রেজারিতে। সময়ভিত্তিক প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থা ফেরৎ নেওয়ার বদলে আগামী দিনে তা খরচ করার অনুমতি চায় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি মহাকরণে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্য চিঠি পাঠাবে দিল্লিতে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অগ্নি-নির্বাপনের পরিকাঠামোর হাল যে রীতিমত নড়বড়ে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা স্বীকার করেছেন। এর জন্য পুরো দায় তিনি চাপিয়েছেন বামফ্রন্ট সরকারের উপর। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মিরিকে দমকলকেন্দ্রের শিলান্যাস করেছেন। দ্রুত সেটি কার্যকরী করার নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবর্ষ থেকে তিন বছরে রাজ্যে কেন্দ্র-সহায়তার পরিকল্পনার ছবিটা ধূসর।
দমকলের প্রতিটি ছোট গাড়ির দাম প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন জেলায় এ রকম ৩০টি গাড়ি, ৫০০ লিটার মাপের জলাধার, ৩০টি ‘কম্বিটুলস’ (‘হ্যান্ডকাটার’) প্রভৃতি কিনতে ৪ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। ২০০৯-’১০ থেকে তিন অর্থবর্ষে ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ হিসাবে মোট অর্থের ৭৫ শতাংশ দিতে রাজি হয় কেন্দ্র। টাকাও আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (প্রায় ৮০ শতাংশ) টাকা এসেছে ’১১-’১২ অর্থবর্ষে-। পরিমাণটি ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার মত। প্রায় সাড়ে ১০ মাস বর্তমান সরকারের শাসনকালে কাজ প্রায় না-হওয়ার জোগাড়।
কেন এই হাল? অগ্নি-নির্বাপণ দফতরের এক অভিজ্ঞ কর্মী বলেন, “সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবই এর মূল কারণ। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও সে সবের রূপায়ণের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। সেই ধারার খুব একটা উন্নতি এখনও হয়নি।”
দমকল দফতরের যুগ্ম সচিব সাদিক আহমেদ অবশ্য দাবি করেছেন, “২০১০-’১১ এবং ’১১-’১২ অর্থবর্ষে যে বাজেট রাজ্যের অর্থ দফতর তৈরি করেছিল, তাতে এই বিশেষ যৌথ প্রকল্পের উল্লেখ ছিল না। এই প্রকল্পের টাকা ঠিক কোন খাতে খরচ করা হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল।” সমস্যাটা এবার কাটানো গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এই সঙ্গে বলেন, “পড়ে থাকা কেন্দ্রীয় টাকা খরচ করতে চেয়ে শীঘ্রই অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডিজি-র কাছে আবেদন করা হবে।”
কী ভাবে জেলার অগ্নি-নির্বাপন পরিকাঠামো সাজা হবে? দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “উঁচু বাড়ির অগ্নি-নির্বাপনে বা আপৎকালীন কাজে বিশেষ মই জেলায় প্রায় নেই। হাওড়া, শিলিগুড়ি, চন্দননগর ও দূর্গাপুরের মত বেশ কিছু জায়গায় বহুতল তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের অন্তত ৫-৭ জেলায় এ রকম উঁচু ও আধুনিক মই আনা হবে।” রাজ্যের ১১১টি দমকলকেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কলকাতায়, ৯৯টি-ই জেলায়। দমকল-মন্ত্রী জাভেদ খান এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ময়নাগুড়ি, ফালাকাটা, ভদ্রেশ্বর প্রভৃতি জায়গায় দমকলকেন্দ্র করেছি। শীঘ্র করা হবে আরও গোটা ২৫ কেন্দ্র।” তিনি বলেন, রাজ্যে নয়া সরকার আসার পর দফতরের টাকায় বিভিন্ন জেলায় অগ্নি-নির্বাপনের গোটা ১২ গাড়ি কেনা হয়েছে। আরও গোটা ৭০ গাড়ি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। |