শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেন ইতিহাসের অধ্যাপক বেঞ্জামিন জাকারিয়া। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র দেন তিনি। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেসিডেন্সিতে এসেছিলেন বেঞ্জামিন।
ইতিহাসের প্রবীণ শিক্ষক, প্রেসিডেন্সির এমেরিটাস অধ্যাপক রজতকান্ত রায়কে বিভাগীয় বৈঠকে অপমান করার অভিযোগ ওঠে বেঞ্জামিনের বিরুদ্ধে। রজতকান্তবাবুর উদ্দেশে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁর সামনে ওই তরুণ অধ্যাপক টেবিলের উপরে পা তুলে দেন বলেও অভিযোগ। যদিও রজতকান্তবাবু তাঁর প্রাক্তন ছাত্র বেঞ্জামিনের বিরুদ্ধে কখনওই মুখ খোলেননি। ইতিহাস বিভাগের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা লিখিত ভাবে উপাচার্যের কাছে বেঞ্জামিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বলে প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর।
গত মাসে যখন তাঁর বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগ ওঠে, তখন বেঞ্জামিন দেশে ছিলেন না। তাই ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে তখন মুখ খোলেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন বেঞ্জামিন। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকার বুধবার তাঁকে একটি চিঠি দেন। পরে উপাচার্য বলেন, “চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেঞ্জামিন জাকারিয়ার একসঙ্গে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তার পরে তিনি ইস্তফাপত্র জমা দেন।”
বেঞ্জামিন অবশ্য তাঁর ইস্তফার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। ইস্তফাপত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নানা রকম অনিয়ম চলছে। ছাত্রদের স্বার্থের কথা ভেবেই সেগুলি নিয়ে এখনই বাইরে কিছু বলতে চাই না। অভ্যন্তরে থেকে সে সব সামলানোর চেষ্টা করেছি।” যদিও মালবিকাদেবী অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আবার, রজতকান্তবাবুর সঙ্গে তাঁর দুর্ব্যবহার নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা কার্যত অস্বীকার করেছেন বেঞ্জামিন। তাঁর কথায়, “রজতকান্তবাবুর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আমরাই সামলাব। উনি আমার শিক্ষক ছিলেন। আমি যখন দেশে ছিলাম না, তখন আমাদের প্রসঙ্গে একটা ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে মুখ খোলেন কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটা আমি বুঝতেই পারছি না।” যদিও তখন সেই ঘটনার কথা বেঞ্জামিন স্বীকার করেছিলেন বলেই জানিয়েছিলেন উপাচার্য।
গত চার মাসে প্রেসিডেন্সি থেকে চার জন শিক্ষক চলে গিয়েছেন। কেউ গিয়েছেন পদ নিয়ে গোলমালের জেরে, কেউ ছেড়েছেন আশানুরূপ বেতন না পাওয়ায়। অনেকেই দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না। তাঁরা ছেড়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা ছাত্রছাত্রীদের একাংশের। তবে অন্য অধ্যাপকের সঙ্গে সরাসরি গোলমালে জড়ানোর অভিযোগে ইস্তফার ঘটনা নজিরবিহীন। উপাচার্য বলেন, “এক অধ্যাপকের সঙ্গে বিচ্ছেদ হল ঠিকই। এটা একটা অন্য রকম ঘটনা। অন্য কোনও শিক্ষককে নিয়ে এমন সমস্যা হয়নি। তাই এই শিক্ষকের চলে যাওয়ায় আমি শঙ্কিত নই। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালই হবে।”
|