প্রয়োজনে জমির প্রয়াত মালিকের মূর্তি গড়ে মাঠের সামনে স্থাপন করতে আপত্তি নেই তাঁদের। কিন্তু ওই মাঠের জমি যাঁদের, তাঁদের দখল দিতে নারাজ তাঁরা। আপত্তি ওই জমিতে খেলার মাঠ ছাড়া অন্য কিছু হতে দিতে। আর তার জেরেই ওই জমির মালিক বা তাঁর প্রতিনিধিদের সেই মাঠে কার্যত ‘প্রবেশ নিষেধ’ করে দিলেন পাড়ার বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুরসভার মেয়র পারিষদ ও এলাকার কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দারও হুমকি দেন, জমির মালিকের প্রতিনিধিরা ওই জমিতে কোনও কাজ করতে পারবেন না। এ নিয়ে ফুলবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই বিতর্ক ধনদেবী খন্না রোডের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ কাঠা জমি ঘিরে। ঝামাপুকুর লেনের বাসিন্দা বরুণ মজুমদারের দাবি, জমিটি তাঁর দাদু আশুতোষ মজুমদার (দেব) কেনেন ছয়ের দশকে। প্রকাশনার ব্যবসায়ী আশুতোষবাবু ওই জমির পাশে আর একটি ৩০ কাঠা জমি কেনেন। একটি জমিতে নির্মাণ হলেও পাশেরটি ফাঁকাই থাকে। বরুণবাবু বলেন, “ব্যবসার কাজেই ওই জমি কেনা হয়। কিন্তু ল্যান্ড সিলিংয়ের জন্য এত দিন কিছু করতে পারিনি। মামলা চলার পরে আমরা এখন ওখানে নির্মাণের অনুমতি পেয়েছি। পুরসভাও সেখানে নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি ওখানে পাঁচিল তুলতে গিয়ে বাধা পান। আমাদের কয়েক জনকে মারধরও করা হয়।” বরুণবাবুর খেদোক্তি, “জমিটি আমার দাদু দাম দিয়ে কিনেছিলেন। মামলা-মোকদ্দমায় আমাদের বহু খরচ হয়েছে। সব দিক থেকে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পাড়ার বাসিন্দারা গায়ের জোর খাটিয়ে আমাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।” |
ধনদেবী খন্না রোডের সেই জমি। ছবি: শৌভিক দে |
খেলার মাঠ ছাড়া ওই জমিতে অন্য কিছু করতে দিতে নারাজ এলাকাবাসী। কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার বলেন, “ওই মাঠটি ছাড়া এলাকায় অন্য কোনও মাঠ নেই। এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলের খেলাধুলো হয় সেখানে। হয় ফুটবল টুর্নামেন্টও। হঠাৎ করে এখন জমিতে জোর করে দখল নিতে গেলে পাড়ার ছেলেরা বাধা দেবেই। মাঠের সামনে জমি-মালিকের মূর্তি বসাতেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু খেলার মাঠের চরিত্র বদলানো যাবে না।”
কিন্তু স্রেফ খেলাধুলোর যুক্তি দিয়ে কি এ ভাবে এক জনের জমির ‘দখল’ নেওয়া যায়? পুরসভা থেকে নির্মাণের অনুমতি মেলার পরে কোন যুক্তিতে বাধা দিলেন তাঁরা? স্বপনবাবু বলেন, “আইন তো মানুষের জন্য। এই খেলার মাঠটি মানুষ দীর্ঘদিন ব্যবহার করছেন। মাঠ সুরক্ষিত রেখে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে জমির মালিক পুরসভায় গিয়ে আলোচনা করতে পারেন। বিকল্প রাস্তা নিশ্চয়ই মিলবে। কিন্তু পাড়ার লোকের স্বার্থে গায়ের জোরে এখানে কিছু করা যাবে না।” মজুমদার পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে গায়ের জোর খাটাচ্ছেন এলাকাবাসীই। বরুণবাবুর অভিযোগ, ওই ৩০ কাঠা জমিটি তাঁরা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন। কেউ বা কারা এক দিকের পাঁচিল ভেঙে আমাদের জমিতে ঢুকে খেলাধুলো শুরু করে। কাউন্সিলর স্বপনবাবুর যুক্তি, “জায়গাটি আগাছায় ভরে যায়। দুষ্কৃতীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। আমরাই জায়গাটি পরিষ্কার করে খেলার মাঠ করেছি।” জবাবে বরুণবাবু বলেন, “এলাকার পুর-প্রতিনিধি মাঠ পরিষ্কার করে সামাজিক কর্তব্য পালন করে ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু তার জন্য কোন যুক্তিতে জায়গাটি এলাকাবাসীর হয়ে যায়?” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি ভাল করে জানা নেই। কাগজপত্র দেখে তারপরই মন্তব্য করব।” |