আটকানো হল জেলা সভাধিপতির গাড়িও, অভিযুক্ত তৃণমূল
ইলামবাজার, খয়রাশোলে সিপিএম অফিসে ভাঙচুর
বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে দেবেন না, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের এই নির্দেশের পর থেকেই অশান্তি থামার লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না বীরভূম জেলায়।
রবিবার অনুব্রতবাবু ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরে সোম ও মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইলামবাজার ও খয়রাশোলে সিপিএমের জোনাল কমিটির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অনেকগুলি মোটরবাইক। ইলামবাজারে এ দিন মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময় বামফ্রন্টের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর, অপহরণ, পথ আটকানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা ফ্রন্ট নেতৃত্ব। ঘটনার পরে ইলামবাজারে পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হলেও জেলা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাম নেতারা।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বীরভূমে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন শুরু হওয়ার কথা। দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ইলামবাজারে। বস্তুত, এ দিন সকাল থেকেই ইলামবাজার ব্লক অফিসে আসার পথে বিভিন্ন মোড়ে ব্যারিকেড করে রেখেছিলেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ ইসলামের অভিযোগ, “সকাল থেকেই আমাদের প্রার্থীদের পথ আটকাচ্ছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাঁদের অনেককে মারধর করা হয়। এমনকী, বাস থেকে প্রার্থীদের নামিয়ে মনোনয়ন সম্পর্কিত কাগজপত্রও কেড়ে নেওয়া হয়।” সকাল দশটা নাগাদ সিপিএমের ইলামবাজার জোনাল কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় একদল লোক। মারধর করা হয় উপস্থিত কর্মীদের। শেখ ইসলামের দাবি, “বামফ্রন্টের প্রার্থী অজিত কুমার ও শেখ ইয়াসিনকে অপহরণ করা হয়। আমরা বিষয়টি বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। পরিকল্পিত করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে তৃণমূল।”

ইলামবাজারে গণ্ডগোলের পরে পুলিশি টহল।
এ দিনই বাড়ি থেকে ইলামবাজারে জোনাল অফিসে যাওয়ার পথে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের গাড়ি আটকেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জোনাল অফিসে বসে দুপুরে অন্নপূর্ণাদেবী বলেন, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঘড়ুই মোড়ে আমার পথ আটকায়। আমাকে রীতিমতো শাসানো হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলার সর্বত্র এই ভাবেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে তৃণমূল।”
সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি জাফরুল ইসলামের দাবি, “আসলে ওরা প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না। কাউকে মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এই ব্লকে কেউ মনোনয়ন জিতে না পারলে আমাকে ফোন করতে পারেন। দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারেন। কিন্তু বসে বসে মিথ্যা অভিযোগ ও মনগড়া কাহিনি মানুষ আর নেবেন না। তা ছাড়া, পুলিস ও প্রশাসন তো রয়েছে সমস্যার সমাধানে।”
ইলামবাজার ব্লকেরই জয়দেব-কেঁদুলি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী কৃপাসিন্ধু বাগদিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, “বুধবার ওই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে অপহরণ করে তৃণমূল তাদের কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল। মনোনয়নের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মনোনয়নপত্রও ছিঁড়ে দেয় ওরা।” অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূল।
এ দিন দুপুরে সিপিএমের জোনাল অফিসে হামলা হয় খয়রাশোলেও। সিপিএমের দাবি, হামলাকারীরা পার্টি অফিসের বাইরে রাখা অন্তত ১২-১৪টি মোটরবাইক ও বেশ কিছু সাইকেল ভাঙচুর করে। এবং সেটা পুলিশের সামনেই। সিপিএমের খয়রাশোল জোনাল কমিটির সম্পাদক তপন দাশগুপ্ত ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন ঘোষের অভিযোগ, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের দলের প্রার্থীরা পার্টি অফিসে জড়ো হয়েছিলেন। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তাঁরা যাতে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত না হন, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনের সাহায্য চাই। পুলিশ আশ্বাস দেওয়ার পরে প্রার্থীরা যখন মনোনয়ন জমা দিতে বেরিয়েছেন, তখনই হামলা চালায় তৃণমূল। পার্টি অফিস লক্ষ করে ইটবৃষ্টি হচ্ছিল। যথেচ্ছ বাইক, সাইকেল ভাঙে।”
গোটা ঘটনায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলেও অভিযোগ সিপিএম নেতৃত্বের। সাধনবাবুদের দাবি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েও হেনস্থা হন তাঁদের প্রার্থীরা। তৃণমূলের মারে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। কিছু প্রার্থী ভয়ে পালিয়ে যান। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি জেলা পুলিশ সুপার মূরলীধর শর্মা। তিনি বলেন, “খয়রাশোলে উত্তেজনা ছিল। সিপিএমের আভিযোগ, তাদের পার্টি অফিসে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে পুলিশের সামনে। সেটা ঠিক নয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। তবে হামলাকারীদের দেখতে পায়নি।”

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ছবি মিলিয়ে মহম্মদবাজার ব্লক অফিসে প্রার্থীদের ঢোকাচ্ছে পুলিশ।
এ দিনই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সিউড়ি ২ ব্লক ও মহম্মদবাজারে সিপিএম-তৃণমূলের
মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে পারে বলে আগে থেকেই পুলিশের কাছে খবর ছিল। প্রত্যাশা মতোই
দুই দলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
খয়রাশোলে নেতৃত্বে খয়রাশোল ব্লক তৃণমূল সভাপতি আশোক মুখোপাধ্যায় ছিলেন বলে সিপিএমের অভিযোগ। অশোকবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “আমি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।” তাঁর আরও দাবি, “এ দিন সকাল থেকেই ব্লক অফিসে কয়েক হাজার লোক জড়ো করেছিল সিপিএম। তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল। ক্রমাগত আমাদের লোকেদের প্ররোচিত করছিল। নিজেদের জোনাল আফিসের সামনেও ওরা জড়ো করেছিল কয়েক হাজার লোক। তাদের প্ররোচনায় হয়তো কেউ কিছু করে থাকতে পারে।” দলের জেলা সহ-সভপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ও জোনাল পার্টি অফিসে হামলা চালানোর ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, “সিপিএম ইচ্ছে করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে মনে হয় আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এ দিন খয়রাশোলে তৃণমূল, সিপিএম দু’দলই মনোনয়ন জমা দিয়েছে। দিনের শেষে সিংহভাগ মনোনয়নপত্র সিপিএমই জমা দিয়েছে। তৃণমূল প্রতিরোধ করলে তো এমন হত না!”
অন্য দিকে, বোলপুর মহকুমার চারটি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির জন্য মনোনয়ন জমার কাজ মহকুমাশাসকের দফতরে করার আর্জি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দিনই জানানো হয়েছে বোলপুর ব্লক কংগ্রেসের তরফে। দলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে কোনও বিরোধী দলই মনোনয়ন দিতে পারছে না। আর ব্লক অফিস হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক দিয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখছে। ব্লকে ব্লকে প্রার্থীদের মারধর, মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হছে। তাই অবিলম্বে এসডিও অফিসে পুলিশ পাহরায় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীদের মনোনয়ন গ্রহণ করা হোকএই মর্মে আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছি।”
এ দিন অবশ্য বোলপুর এসডিও অফিসে বীরভূম জেলা পরিষদের ১১টি আসনের (বোলপুর মহকুমার মধ্যে থাকা) মধ্যে ৬টি আসনে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও প্রার্থীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। মহকুমার বিডিও-দের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ আছে। তাঁদের কাছেও এই সম্পর্কিত কোনও রিপোর্ট জমা পড়েছে বলে খবর নেই। তবে, পুলিশকে আরও সতর্ক হতে বলা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.