আগের দিনই দলীয় কর্মিসভায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের পাশে বসিয়ে বিরোধীদলগুলিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই মন্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেল বীরভূমে। সোমবার জেলায় নানা ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শুরু হতেই গণ্ডগোলের খবর আসতে শুরু করে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিরোধীদলগুলির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও রাজনৈতিক মহল বলছে, রবিবার জেলা সভাপতির ওই উস্কানিমূলক মন্তব্যেই সাহসী হয়ে নানা এলাকায় হামলা চালিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই। |
হাসপাতালে জখম কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি গণেশ মণ্ডল। ছবি: অনির্বাণ সেন |
সোমবার সকালে সাড়ে ১১টা নাগাদ সাঁইথিয়ার আমোদপুরে স্থিত ব্লক অফিসে কংগ্রেসের কয়েক জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, ব্লক অফিসের কাছেই তৃণমূলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক তাঁদের উপরে আক্রমণ করে। কংগ্রেসের লোকজনদের বেধড়ক মার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় এক পঞ্চায়েত প্রধান-সহ বেশ কয়েক জন কংগ্রেসকর্মী আহতও হন। তাঁদের মধ্যে তিন জন সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার প্রতিবাদে সাঁইথিয়া চৌরাস্তা মোড়ে পথ অবরোধ করে কংগ্রেস। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে সেই অবরোধ।
ওই ঘটনায় সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি আছেন কংগ্রেস পরিচালিত ফুলুর পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল সালাম, হাতড়া এলাকার অঞ্চল সভাপতি গণেশ মণ্ডল ও এলাকার কংগ্রেস কর্মী অহিদ মল্লিক। এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল সালাম বলেন, “কয়েকশো জন তৃণমূলকর্মী ছিল। আমাকে একা পেয়ে বেধড়ক মেরেছে। নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। বুকেও আঘাত লেগেছে।” বাকি দুই জখম কংগ্রেস কর্মীর শরীরের নানা জায়গায় আঘাত লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলির দাবি, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। উল্টে সিপিএম ও কংগ্রেসকর্মীরাই আমাদের দলীয় কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে।” ঘটনা হল, ওই ঘটনার পরে দেখা যায় এ দিন ব্লক অফিসে মোট ১৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পেরেছেন। যাঁদের প্রত্যেকেই তৃণমূলের প্রার্থী। ঘটনাটি ব্লক অফিসের বাইরে ঘটেছে বলে এড়িয়ে গিয়েছেন সাঁইথিয়ার বিডিও।
একই দিনে বোলপুর, ইলামবাজার ও লাভপুর ব্লক এলাকার একাধিক জায়গায় বিজেপিকর্মীদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই অভিযোগের তির শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ দিন দুপুরে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রতীক সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে লাভপুর ব্লকে যাচ্ছিলেন স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র জেলা সম্পাদক কাশীনাথ মিশ্র। সেই সময়ে ব্লক অফিসেরই অদূরে একদল দুষ্কৃতী তাঁকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। কাশীনাথবাবু গুরুতর জখম অবস্থায় লাভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের যোগদান আটকাতেই তৃণমূলের লোকজন আমাকে মারধর করে।” ওই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নন। সম্ভবত ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়।” এ দিকে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, “এ দিন দুপুরে বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকে দলের দুই কর্মী মনোনয়নপত্র তুলতে গিয়েছিলেন। ওই সময় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের মারধর করে।” লাভপুর ও ইলামবাজার ব্লকেও বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, “জয়দেব-কেন্দুলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আমাদের দুই প্রার্থীকে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। তাঁদের খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন মহম্মদবাজারেও মনোনয়নপত্র তুলতে আসা সিপিএম কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সাঁইথিয়ার বিধায়ক, সিপিএমের ধীরেন বাগদির অভিযোগ, “আমাদের দুই কর্মী ব্লক অফিস থেকে মনোনয়নপত্র তুলতে যাচ্ছিলেন। পথে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের আটকে মারধর করে। মনোনয়নপত্র তুলে ফেরার পথে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তা ছিনিয়ে নিয়ে আর এক কর্মীর কাছ থেকে ছিঁড়ে দেওয়া হয়।” সমস্ত ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন। |