এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পুরুলিয়ার কৃতীদের মধ্যে রয়েছে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের দেবাশিস পরামানিক ও জেলা স্কুলের স্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই পেয়েছে ৪৪২ নম্বর। আর ছাত্রীদের মধ্যে জেলার অন্যতম সেরা পুরুলিয়া শান্তময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সুপ্রীতি দত্ত। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৪০।
পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডের পূর্ত দফতরের আবাসনের বাসিন্দা স্বাগত পঞ্চম শ্রেণি থেকেই জেলা স্কুলের ছাত্র। বিজ্ঞানের এই ছাত্রের প্রিয় বিষয় পদার্থবিদ্যা। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকে পদার্থবিদ্যার (৯০) চেয়ে অঙ্কে (৯৮) ও রসায়নে (৯৭) সে বেশি নম্বর পেয়েছে। তার কথায়, “আমার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।” প্রতিটি বিষয়ে টিউশন থাকলেও পাঠ্যবইই তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি আর একটি শখ স্বাগতর। সেটা হল, অবসরে সময় পেলেই গোয়েন্দা গল্পে ডুব দেওয়া। প্রিয় গোয়েন্দা? “অবশ্যই ফেলুদা! ফেলুদা ছাড়াও অনেকে গোয়েন্দা আছেন। তবে, ফেলুদার কোনও তুলনা হয় না।” বাবা পতিতপাবন বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ত দফতরের কর্মী। বললেন, “ও কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চাইবে, সেটা ও নিজেই ঠিক করবে।” |
স্বাগতর মতো পুরুলিয়া শহরেরই নাপিতপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুপ্রীতিরও প্রিয় বিষয় পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন। পদার্থবিদ্যায় সে পেয়েছে ৮৪, রসায়নে ৯০, গণিতে ৯৮। সুপ্রীতির কথায়, “ভবিষ্যতে রসায়ন নিয়ে পড়তে চাই।” বিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাললাগে রবীন্দ্রসঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। গল্পের বই নিয়ে সময় কাটানোও তার খুব প্রিয়। বাবা মারা গিয়েছেন মাস আটেক আগে। পরিবারের উপর দিয়ে পরীক্ষার আগে মানসিক ঝড় বয়ে গিয়েছে। “এ রকম মানসিক অবস্থার মধ্যেও সুপ্রীতি এই ফল করেছে এবং তাতেই তার কৃতিত্ব আরও বেশি”, বলছিলেন শান্তময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিয়তি মিত্র।
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্র দেবাশিস সাঁতুড়ি ব্লকের কোটালডি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা রঞ্জিত পরামানিক জানান, ছেলের শরীর খারাপ। তাই সোমবার সে মার্কশিট নিতে বিদ্যাপীঠে যেতে পারেনি।
|
সাফল্যে মনে পড়ছে দিদির কথা
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
বারো বছর আগে থ্যালাসেমিয়া কেড়ে নিয়েছে প্রিয় দিদিকে। তার পর থেকে দিদির ছবিতে পুজো করেই জীবনে
|
অমৃতা দাস। |
একের পর এক সিঁড়ি অতিক্রম করে চলেছে বাঁকুড়া মিশন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী অমৃতা দাস। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম এবং জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান পাওয়া অমৃতা তার এই সাফল্য প্রয়াত দিদি অর্পিতাকেই উৎসর্গ করেছে। অমৃতার মা চিত্রা দাস বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেডেন্ট। বাবা তারাপদচন্দ্র দাস হাওড়ার একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। বাঁকুড়ায় নার্সিং কোয়ার্টারে মা ও ছোট ভাই কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে থাকে অমৃতা। প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা করে টিউশন নিয়েছিল অমৃতা। মা-ও তাকে বাড়িতে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন। অমৃতার কথায়, “আমি মনে করি দিদির আশীর্বাদেই আমি সফল হয়েছি। তাই এই সাফল্য তাকেই উৎসর্গ করলাম।” ছোট মেয়ের এই সাফল্যের দিনেও বড় মেয়ের কথা মনে করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে চিত্রাদেবীর। তিনি বলেন, “ওর দিদিই ওকে সব সময় পথ দেখাত। আজ ও থাকলে সবার চেয়ে বেশি খুশি হত।” ভবিষ্যতে বাবার মতোই ডাক্তার হতে চায় অমৃতা। এবং চায় দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। তবে, পদার্থবিদ্যা তার প্রিয় বিষয়। |