বিঘে দেড়েক জমির যৎসামান্য আয় চলে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন বাবার চিকিৎসায়। বোন এবং নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড়ে মায়ের সঙ্গে দিন-রাতের কিছুটা সময় কাঁথাস্টিচের কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। এত সব প্রতিকূলতা দূরে সরিয়ে মাধ্যমিকে স্কুলের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে রিয়া।
নানুরের কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রিয়া ঘোষ বঙ্গছত্র লবঙ্গ লতিকা হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পাশ করেছে। ১৯৬৮ সালে জুনিয়র স্কুল হিসেবে শুরু হয়। ২০০৬ সালে স্কুলটি মাধ্যমিকে উন্নীত হয়। এ বার স্কুল থেকে ৮৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। পাশ করেছে ৬২ জন। কিন্তু সবাইকে পিছনে ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রিয়া। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬১৪। প্রধান শিক্ষক দানব্রত ঘোষ বলেন, “শতাংশের হিসেবে এর আগে আর কোনও পড়ুয়া রিয়ার সমান নম্বর পায়নি। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সে আরও ভাল ফল করত।” ছুটির পরে স্কুল খুললে কৃতী এই ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক সজল দে। |
কুলিয়া গ্রামে রিয়াদের খড়ের চালের মাটির বাড়ি। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিঘে দেড়েক জমিই তাদের সম্বল। ওই জমি থেকে পাওয়া ফসল বিক্রির টাকা চলে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা প্রভাতবাবুর চিকিৎসায়। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া বোন কেয়া এবং নিজের পড়াশোনা-সহ দু’বেলা ভাতের জন্য মা কাঞ্চনদেবীর সঙ্গে কাঁথাস্টিচের কাজ করতে হয় রিয়াকেও। এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষক সর্বোপরি প্রধান শিক্ষক এবং দুই গৃহশিক্ষক সুকদেব দাস ও সুকুমার ভাণ্ডারি ভীষণ সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছে রিয়া। প্রধান শিক্ষক বইখাতা জুগিয়েছেন। বিনা বেতনে পড়িয়েছেন দুই গৃহশিক্ষকও। রিয়ার কথায়, “ওঁদের সাহায্য ও উৎসাহ ছাড়া ভাল ভাবে রেজাল্ট করা তো দূরের কথা মাধ্যমিকের চৌকাঠ ডিঙাতে পারতাম কি না সন্দেহ ছিল।” শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন রিয়ার। ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ অনেক। তাই এখন তার ইচ্ছে বোলপুরে ভুগোল নিয়ে পড়াশোনা করা।
রিয়ার কথায়, “নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া নিতান্তই বিলাসিতার ব্যাপার। অভাবের সংসারে পড়াশোনা চালানো যে কতটা কঠিন তা আমি জানি। তাই শিক্ষিকা হয়ে আমারই মতো দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” কাঞ্চনদেবী বলেন, “মেয়েকে উচ্চশিক্ষা দেওায়ার মতো সামর্থ আমাদের নেই। মেয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না জানি না!” |