|
|
|
|
তারাবাজি |
লিয়র নিয়ে মিনার্ভার আশ্বাস ভুয়ো |
‘রাজা লিয়র’ নাটকের শো বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বনাম
ব্রাত্য বসুর মধ্যে চাপানউতোর চলছেই। এ বার অভিমত জানালেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় |
বিভাগীয় সম্পাদক সমীপেষু
আনন্দplus
মিনার্ভা রেপার্টরি থিয়েটারের প্রযোজনা ‘রাজা লিয়র’-য়ের মঞ্চস্থ হওয়া না-হওয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমাকেও দর্শকেরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন ‘রাজা লিয়র’-য়ের শো হচ্ছে না?’’
এমন ভাবে কথাগু লো তাঁরা বলেন মনে হয় আমিই যেন ইচ্ছে করে শো করছি না। যেন আমার ওপরেই ‘রাজা লিয়র’-য়ের শো হওয়া, না-হওয়া নির্ভর করছে। এই প্রসঙ্গে মাঝেমধ্যে কাগজে নানা চাপানউতোর হয়। কিছু লেখা পড়ি। কিন্তু সব সময় সব লেখা পড়া হয়ে ওঠে না নানা ব্যস্ততায়।
একটা কথা বলতে পারি, বহু পরিশ্রম করে ‘রাজা লিয়র’ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। স্ক্রিপ্ট তৈরির সময় আমি নিজেও তার সঙ্গে নানা ভাবে জড়িয়ে পড়ি, কাজ করি। যাই হোক মঞ্চস্থ হওয়ার পর দেখা গেল দর্শক আসাধারণ ভাবে সেই নাটক গ্রহণ করলেন। কিন্তু একটা সমস্যা হল মিনার্ভায় বসার আসন এত কম যে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে শো হলেও নাটক ঠিক লাভের মুখ দেখে উঠতে পারছিল না।
|
‘রাজা লিয়র-য়ের ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই নাটক নিয়েই যত বিতর্ক |
নাটকটিকে মিনার্ভা থেকে সরিয়ে বাইরের কোনও সরকারি হলে শো করা যায় কি না, তা নিয়ে নাটকের পরিচালক এবং মিনার্ভা রেপার্টরি থিয়েটারের উপদেষ্টামণ্ডলীর দু’একজনের মধ্যে কথা হয়। আমাদের ধারণা ছিল বাইরের হলে নিঃসন্দেহে লাভজনক হয়ে দাঁড়াবে এই নাটকের অভিনয়। সেই সময় রবীন্দ্রসদনে দু’টো শো হয়। এবংপ্রচুর টাকা লাভ হয়। কিন্তু এর পরেপরেই সরকারের পরিবর্তন হয়। এবং পাঁচ মাস টানা নাটকের অভিনয় বন্ধ থাকে। এমনকী ‘রাজা লিয়র’-য়ের যে ভিডিও রেকর্ডিং করার কথা হয়েছিল, দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়।
সেই যে তখন নাটকের শো পাঁচ মাস নাগাড়ে বন্ধ রইল, তাতে আর কার কী ক্ষতি হয়েছে জানি নাকিন্তু আমার বেশ অসুবিধে হয়ে পড়ল। ‘রাজা লিয়র’ করতে প্রচণ্ড শারীরিক সক্ষমতা লাগে। সেই শারীরিক সক্ষমতার অভ্যাস থেকে বঞ্চিত হলে অভিনয় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ৫ মাস বাদে যখন শো করতে হয় তখন সেই সক্ষমতা অভ্যেসে আনার জন্য যতগুলো দিন রিহার্সাল দিতে হয় আমার মতো পেশাদারের পক্ষে ততগুলো দিন অনুশীলন করা সম্ভব ছিল না।
যাই হোক, সেই সময় শোনা গিয়েছিল নতুন নাটককে জায়গা দেওয়া জন্যই ‘রাজা লিয়র’-য়ের শো বন্ধ করতে হয়েছিল মিনার্ভা রেপার্টরি থিয়েটারকে। কিন্তু নাটক তো অন্য যে কোনও সরকারি হলেও মঞ্চস্থ করা যেত। নাটক বন্ধ করে দেওয়ার তো কোনও প্রয়োজন ছিল না। বাইরের হলে যখন শুরু হল, তখন এই নাটকের প্রত্যেকটা শো হাউসফুল হয়। শুধু যে হাউসফুল হয় তাই নয়, টিকিটের কাউন্টার খোলার দু’এক ঘণ্টার মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। এতই চাহিদা ছিল সে সব শো-এর। কিন্তু সেই সময় কাগজে ‘রাজা লিয়র’ নাটকের বিজ্ঞাপন প্রচার করাও বন্ধ করে দেওয়া হল। কোনও বড়কাগজে অন্তত ‘রাজা লিয়র’য়ের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়নি বেশ কিছু দিন। তা সত্ত্বেও নাটকের জনপ্রিয়তা এতটুকু চিড় খায়নি। লোকমুখে প্রচার আর টিকিটের কাউন্টার খুললেই সব আসন ভরে যেত।
এর পর একটা সময় দেখলাম আমার কাছ থেকে নাটকের ডেট নেওয়ার পর বিনা নোটিশে শো বাতিল হয়ে যেত। কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আমার সঙ্গে কোনও আলোচনাও করত না। পরবর্তী কালে এক জন কর্মচারী নিযুক্ত হন এই ব্যাপারে। তিনি অনেক বার আমার কাছ থেকে ডেট নিয়েছেন, কিন্তু শো হয়নি। আমার যত দূর জানা ছিল মিনার্ভা রেপার্টরি কোম্পানির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে চুক্তি তখনও বলবৎ ছিল। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের আগেই নেওয়া কল শো-য়ের তারিখে কেন শো হল না, তা আজও আমার বোধের বাইরে। এবং শুনলাম কাগজে বলা হচ্ছে যে ‘রাজা লিয়র’-য়ের শো বন্ধ করা হয়নি। এও জানলাম যে মিনার্ভা রেপার্টরির ছেলেমেয়েদের পুনরায় নিযুক্ত করা হবে পরীক্ষা নিয়ে। তার পর আবার ‘রাজা লিয়র’ হবে। আমার কথা হল, নতুন যাঁরা আসবেন তাঁদের সঙ্গে নতুন ভাবে মহড়া দিয়ে নতুন ভাবে প্রোডাকশন নামাতে হবে, এটা তো একটা অবাস্তব অবস্থা। তার জন্য কি আমার সময় হবে নাকি?
এইটুকুই বলতে পারি, ‘রাজা লিয়র’ নিয়ে যে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র থেকে তা আমার কাছে ধোপে টিকছে না। এবং ভুয়ো বলে মনে হচ্ছে।
ধন্যবাদান্তে
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
|
|
|
|
|
|
|