|
|
|
|
সুমন, রাখালের পালে আর কতবার বাঘ পড়বে |
ব্রাত্য বসু-র প্রতি সুমন মুখোপাধ্যায়-এর খোলা চিঠির জবাবে মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের
সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদ জানালেন তাঁদের বক্তব্য। সঙ্গে তুলে ধরলেন বেশ কিছু পরিসংখ্যানও |
বিভাগীয় সম্পাদক সমীপেষু, আনন্দplus
আপনাদের সংবাদপত্রে প্রকাশিত মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি ব্রাত্য বসুর প্রতি সুমন মুখোপাধ্যায়ের খোলা-চিঠির প্রেক্ষিতে আমাদের এই পত্র। মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের উপদেষ্টা পরিষদের (পরিচালন সমিতি নয়) সদস্য হিসেবে পাঠকদের কয়েকটি বিষয় জ্ঞাত করানোই এই পত্রের মূল উদ্দেশ্য।
১) সুমন বলছেন— ‘পরিবর্তন-এর পর পাঁচ মাস অভিনয় বন্ধ রইল। কী কারণে ঠিক জানা যায়নি।’
তার উত্তরে বলছি—
ক) ২০১১-র মে মাসে সরকারের পরিবর্তন হলেও মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয় ২০১১র অগস্ট মাসে।
খ) ২০১১-র সেপ্টেম্বর মাসে মঞ্চস্থ হয় নতুন নাটক ‘দেবী সর্পমস্তা’।
গ) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের প্রতি শনিবার-রবিবার নিয়মিত ‘দেবী সর্পমস্তা’র অভিনয় শুরু হয়।
ঘ) নভেম্বর মাস থেকে নব-নির্মিত উপদেষ্টা পরিষদ নির্দেশকের সঙ্গে আলোচনা করে ‘রাজা লিয়র’কে মিনার্ভার বাইরে নিয়ে আসেন।
আশা করি পাঠকেরা বুঝতে পারবেন কেন এই পাঁচ মাস ‘রাজা লিয়র’এর কোনও অভিনয় হয়নি।
|
|
|
সুমন মুখোপাধ্যায় |
ব্রাত্য বসু |
|
২) সুমন বলেছেন—‘রেপার্টারির সভাপতি ব্রাত্য বসু কোন হিসেবে বললেন ২৪ মাসে ২৪টা অভিনয়, ৭ মাসে ২০টা অভিনয়ের থেকে বেশি?
এই প্রশ্নের উত্তরে জানাই—
ক) যখন ‘রাজা লিয়র’ মঞ্চস্থ হয়, তখন সেই প্রযোজনাটি ছিল মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের অধীনে মিনার্ভা রেপার্টরির একমাত্র প্রযোজনা।
খ) নতুন সরকার আসার পরে যে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় সেটি ‘দেবী সর্পমস্তা’। এই নাটকটি শুধুমাত্র রেপার্টারির ছেলেমেয়েদের নিয়েই তৈরি। নতুন উপদেষ্টা পরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী নয়, রেপার্টরিতে নিযুক্ত ছেলেমেয়েদেরই রেপার্টারির নাটকগুলিতে ব্যবহার করা।
নভেম্বর ২০১১ থেকে মে ২০১২ পর্যন্ত প্রতি মাসে ‘রাজা লিয়র’য়ের ২টি করে নিজস্ব অভিনয় হয়েছে ও আমন্ত্রিত অভিনয় হয়েছে ২টি। অন্যদিকে ওই একই সময়ে ‘দেবী সর্পমস্তা’র নিজস্ব অভিনয় হয়েছে ১৭টি ও ২০টি আমন্ত্রিত অভিনয়।
ঘ) জুন ২০১২-তে রেপার্টরির আরও একটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়- ‘চন্দ্রগুপ্ত’। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘চন্দ্রগুপ্ত’য়ের ২৪টি অভিনয় হয়। ‘দেবী সর্পমস্তা’র ১১টি এবং ‘রাজা লিয়র’য়ের ২টি।
আশা করি পাঠক বুঝতে পারবেন প্রথম নাটক হিসেবে ‘রাজা লিয়র’, প্রথম সাত মাসে ২০টি অভিনয়, পরবর্তীকালে রেপার্টরির আরও দু’টি প্রযোজনার সঙ্গে অভিনীত হওয়া ২৪টি অভিনয় কোনও ভাবেই সময়ের নিরিখে সরল অঙ্কের প্রতিতুলনায় বিচার করা যায় না।
৩) সুমন বলছেন, ‘ব্রাত্যকে টেক্সট করেছিলাম ‘রাজা লিয়র’ বন্ধ করছিস কেন? তার কোনও উত্তর পাইনি।’
সুমন এই প্রশ্ন তুলেছেন মিনার্ভা রেপার্টরির পুনর্গঠনের প্রেক্ষিতে।
এই প্রশ্নের যৌক্তিকতা কতটা?
ক) ‘রাজা লিয়র’ বন্ধ হয়নি। আগের সরকারের নিয়ম অনুযায়ী রেপার্টরিতে নিযুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মেয়াদ ছিল তিন বছর। সেই মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে রেপার্টরির পুনর্গঠন অবশ্যম্ভাবী ছিল। তাই সাময়িক ভাবে শুধু ‘রাজা লিয়র’ নয়, ‘দেবী সর্পমস্তা’ আর ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক দু’টিও বন্ধ আছে।
খ) রেপার্টরি পুনর্গঠন হওয়ার পর ‘রাজা লিয়র’ ও ‘দেবী সর্পমস্তা’র পরিচালকদের প্রযোজনা দু’টি পুনর্নির্মাণ করার জন্য অনুরোধ করা হবে। ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’ থেকে ‘হার্বাট’, ‘কাঙাল মালসাট’ থেকে ‘রাজা লিয়র’— ‘বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে’ এই শব্দাবলি কি পাঠককে রাখালের গল্পই মনে করাচ্ছে না? সুমন, রাখালের পালে আর কতবার বাঘ পড়বে?
এ বার দেখে নিই ‘সরকারি খরচে’ মিনার্ভা রেপার্টরির তিনটি প্রযোজনার তুলনামূলক খতিয়ান—
‘রাজা লিয়র’—প্রযোজনা ব্যয় ১৪ লক্ষ। নভেম্বর ২০১০- মে ২০১১, ক্ষতির পরিমাণ- ২.৫ লক্ষ (বিজ্ঞাপন ও হল খরচ ছাড়া)। নভেম্বর ২০১১- লাভের পরিমাণ ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার (নিজস্ব অভিনয়), দেড় লক্ষ (আমন্ত্রিত অভিনয়), (বিজ্ঞাপন ও হল খরচ ছাড়া)। ‘দেবী সর্পমন্তা’— প্রযোজনা ব্যয় ৪ লক্ষ। সেপ্টেম্বর ২০১১- লাভের পরিমাণ- ২ লক্ষ ৬০ হাজার (নিজস্ব অভিনয়), ৩ লক্ষ ২০ হাজার (আমন্ত্রিত অভিনয়), (বিজ্ঞাপন ও হল খরচ ছাড়া)। ‘চন্দ্রগুপ্ত’— প্রযোজনা ব্যয় সাড়ে ৮ লক্ষ। জুন ২০১২- ক্ষতির পরিমাণ- ১ লক্ষ ১৬ হাজার, (বিজ্ঞাপন ও হল খরচ ছাড়া)। আশা রাখি সুমন মুখোপাধ্যায় তাঁর হতাশা থেকে মুক্ত হবেন ও ‘রাজা লিয়র’ পুনর্নির্মাণের জন্য মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। |
ধন্যবাদান্তে
অর্পিতা ঘোষ, মণীশ মিত্র, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়
(সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ)
মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র |
|
|
|
|
|