|
|
|
|
অ্যাসিড টেস্ট |
অমিতাভ বচ্চনের বিশেষ উপস্থাপনায় ডকুড্রামা করেছেন কলকাতার পরিচালক কঙ্কনা চক্রবর্তী।
তবে
ছবিতে দেখানো নিপীড়িত নারীদের একজনও এখনও সুবিচার পাননি। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
প্রায় এক যুগ হয়ে গেল সারিফা বিবি নিজেকে কেমন দেখতে তা জানেন না। অ্যাসিড বাল্বে আক্রান্ত হয়ে মুখটা একেবারেই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তার পর থেকে আর নিজেকে আয়নাতে দেখেননি। যখন কঙ্কনা চক্রবর্তীর ডকু-ড্রামা ‘উম্যান প্রেড অ্যান্ড প্রেড আপন’-এ সরিফা বিবির চেহারাটা ফুটে ওঠে, তখন গায়ে কাঁটা দেয়। মানুষ এতটা প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে নাকি?
মনে আছে বারাসতের রিঙ্কু দাসের ঘটনা? গলায় কান্না দলা বেঁধে আটকে আসছে যখন ডকু-ড্রামাতে রিঙ্কি স্মৃতিচারণ করেন। বর্ণনা করেন কী ভাবে হারিয়েছিল তাঁর ভাই রাজীবকে।
|
কঙ্কনা চক্রবর্তী।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
এ রকম আরও কিছু ঘটনা দেখিয়েছেন কঙ্কনা। মাঝে মাঝে কিছু সাক্ষাৎকার। ঊষা উত্থুপ থেকে লোপামুদ্রা মিত্র। শ্যাম বেনেগল থেকে অমিতাভ বচ্চন। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ‘নো উইমেন মিনস নো লাইফ’।
ডকু-ড্রামাটা দেখার পরে, কঙ্কনার দিকে উঠে আসছে কিছু প্রশ্ন। নিউ ইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমির এই ছাত্রী কী ভাবে খুঁজে বের করলেন সারিফাকে? তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়া এই সব নিপীড়িত নারীরা কি কেউ সুবিচার পেয়েছেন?
সারিফার ‘দোষ’ বলতে গেলে ছিল শুধু মা হয়ে নিজের মেয়েকে ‘ইভ টিজিং’ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা। আর তার জন্যই এই শাস্তি। হঠাৎ একদিন বাড়ির দরজা খোলার পরে জীবনটাই একেবারে পাল্টে গিয়েছে সারিফার।
কঙ্কনা, অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান। ‘কেবিসি’তে প্রথম দেখেছিলেন তাঁর ‘অমিতাভ স্যার’য়ের সঙ্গে এক অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েকে। নাম সোনালি মুখোপাধ্যায়। চোখে দেখতে পেতেন না। অভিনেত্রী লারা দত্ত এসেছিলেন শো-তে সোনালির সঙ্গে। ২৫ লক্ষ টাকা জিতেছিলেন সোনালি। শু্যট করার সময় এই অ্যাসিড অ্যাটাক নিয়ে কথা বলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন।
তাই কঙ্কনা চেয়েছিলেন যদি তিনি এ রকম কোনও ‘অ্যাসিড আক্রান্ত’ ভিকটিমের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। “বাড়িতে এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমার বাবা ডাক্তার। শোনার পরে বাবার মনে পড়ল এক রুগির কথা। তার পর খোঁজ করে জানা যায় সেই রুগি কোলাঘাটের কাছে থাকেন। আমি ডকু-ড্রামাটার সম্পর্কে বলাতে, উনি রাজি হয়ে যান ক্যামেরার সামনে আসতে। আর রিঙ্কুু এখনও এতটাই আতঙ্কিত, সন্ত্রস্ত যে কথা বলতেও সে আড়ষ্ট বোধ করে,” বললেন ২৩ বছরের পরিচালক।
এ দিকে সারিফার স্বামী আব্দুল হায়াত এখনও আশাবাদী যে সুবিচার হয়তো পাবেন। তা যদি নাও হয় কেউ হয়তো এগিয়ে আসবেন তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে। নাইট্রিক অ্যাসিডের জেরে একটা চোখ অন্ধ। অন্য চোখের দৃষ্টিক্ষমতা ৫০ শতাংশ লোপ পেয়েছে।
আব্দুল বলছেন, “ডকু-ড্রামাটা দেখলে বুঝবেন কী ভয়ঙ্কর ভাবে আমার স্ত্রী আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু অপরাধী এখন পর্যন্ত বিনা শাস্তিতে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিয়েও করেছে সে। আর কত বছর ওর শাস্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে জানি না।”
শুধু সারিফা নন, নিপীড়নের শিকার অন্যান্য যে সব নারীর কথা কঙ্কনা বলেছেন, তাঁরা কেউই এখনও সুবিচার পাননি। “অমিতাভ স্যর আমায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এঁরা তো কেউই সহানুভূতি চায় না। চায় সুবিচার। আমাদের তাই এ বিষয়ে সরব হতেই হবে,” কঙ্কনা জানান।
দিল্লি আর মুম্বইতে ছবিটির স্ক্রিনিংয়ের পরে কঙ্কনার ইচ্ছে আছে এটাকে আপলোড করে দেওয়ার। আর ইচ্ছে অভিনয় করার। ইতিমধ্যেই একটা শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন। একটা ফিচার ফিল্ম করার কথা চলছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের চরিত্রদের নিয়ে লেখা একটা স্ক্রিপ্ট। তবে এ সবের মধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন আরও একটি কাজ করবেন। মিউজিকাল ডকুমেন্টারি। “বিষয় হল বার্ধক্য। কিন্তু তার মানে বৃদ্ধাশ্রম নয়। কাজ থেকে অবসরের পরেও তো একটা জীবন আছে। সেটাই ছবির বিষয়। কাজটা অনেকটা ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’র ভিডিয়োর স্টাইলেই করতে চাই,” কঙ্কনা জানান।
এটাতেও কি অমিতাভ বচ্চন থাকছেন? হাসতে হাসতে কঙ্কনা বলেন, “আমি নিশ্চয়ই ওঁকে প্রজেক্টটা সম্পর্কে জানাব।” তার পর যাকে বলে ‘ফিঙ্গার ক্রসড’। |
|
|
|
|
|