তারাবাজি |
|
বিশ্রীনিবাসন
গ্রেফতার স্বয়ং বোর্ড প্রেসিডেন্টের ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ জামাই। যদিও তার পরেও
কুর্সিতে
বহাল তবিয়তে এন শ্রীনিবাসন। প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে প্রশাসক মুখে কুলুপ
প্রায় সকলেরই।
ভারতীয় ক্রিকেটে ডামাডোলের আবহে আনন্দplus-এর জন্য কলম ধরলেন অশোক মলহোত্র |
|
এন শ্রীনিবাসন নামটা উঠলেই একনায়কতন্ত্র আঁকড়ে চলা একটা মানুষের মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
তা বলে ভেবে বসবেন না যেন, এ বারের আইপিএল-এ কলঙ্কিত অধ্যায়ের পর গায়ের ঝাল মেটাতে কথাগুলো বলছি। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সারা জীবনে আমার মোলাকাত হয়েছে মাত্র এক বার। সৌজন্য বিনিময় ছাড়া খুব একটা কথাবার্তাও হয়নি। তাই কোনও লেনাদেনাও নেই আমাদের। খারাপ লাগছে এটা ভেবেই যে প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন ভারতীয় ক্রিকেট এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়ায় একটা রসিকতার বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে। সেটাও আবার ক্রিকেট জুয়ার কারণে! দেশের হয়ে ক্রিকেট মাঠে নামার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যেটা ভাবলে এত দিন গর্বে বুক ফুলে উঠত। কিন্তু সেই গর্ব আজ কালিমালিপ্ত। স্রেফ এই শ্রীনিবাসনের মতো লোকেদের জন্য।
মজার ব্যাপার এটাই, এত কাণ্ডের পরেও কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের গদি আঁকড়ে বসে রয়েছেন। তাঁর জামাই গুরুনাথ এ বারের আইপিএল-এ ক্রিকেট জুয়ায় অভিযুক্ত হওয়ার পরেও চেন্নাই সুপার কিংস বাতিলও হল না। ফাইনালও খেলে ফেলল ধোনির দল। অথচ ঝোলা থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য, নথি। শ্রীনিবাসন যদিও নির্বিকার। গুরুনাথ যদি চেন্নাই সুপার কিংসের কোনও পদেই না থাকেন, তা হলে নিলামের টেবিলে তিনি বসে থাকেন কী ভাবে? সিএসকে দলের প্রিন্সিপাল ছিলেন গুরুনাথ। প্রচারমাধ্যম এবং মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ সব প্রমাণ সামনে নিয়ে এসেছে। অথচ সে সব তথ্যপ্রমাণ থেকে গুরুনাথকে আড়াল করতে একের পর এক মিথ্যাচার এবং চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। |
|
|
শ্রীনি সব সময়েই তাঁর পাশে ইয়েস ম্যানদের পছন্দ করেন... যেমন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি...
শ্রীনি থাকলে ভারতীয় ক্রিকেটের বারোটা বাজবে। আইপিএলও অনেকটা ডব্লুডব্লুএফ-এর মতো হয়ে যাবে |
|
দিন কয়েক আগেই ভাগ্নে দুর্নীতিতে জড়ানোয় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পবন বনশল ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীনিবাসন তাঁর জামাইয়ের দুর্নীতির জন্য ইস্তফা যেমন দেননি, তেমনই তাঁর জামাই গুরুনাথকে একজন ক্রিকেটপ্রেমী বলে দায় সেরেছেন। দ্বিচারিতা আর কাকে বলে!
আসলে এন শ্রীনিবাসন চান ক্রিকেট দুনিয়াটা তিনি যে ভাবে চাইবেন সে ভাবেই চলবে। আর কারও কথাই শোনা হবে না। যে বা যারা সামান্যতম প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটতে যাবে, তাকে বা তাদের আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলা হবে। কারণ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সব সময়েই তাঁর পাশে ইয়েস ম্যানদের পছন্দ করেন। উদাহরণ? প্রচুর। ওর চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যে আবার দেশেরও অধিনায়ক। গতবার ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকে একদম কচুকাটা হয়ে ফিরল সেই ধোনির দল। নির্বাচকমণ্ডলীতে মহিন্দর অমরনাথ একটু ট্যাঁ ফো শুরু করেছিলেন। ফল, সরেই যেতে হল মহিন্দরকে। এই তো কয়েক দিন আগে লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন আইসিসির ক্রিকেট কমিটিতে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জল ঘোলা করতে শুরু করেছিল আইসিসি-র শ্বেতাঙ্গ সদস্যভুক্ত দেশগুলো। শ্রীনিবাসন সেটা থামাতে পাল্টা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেলার হুমকি দিয়ে সব থামিয়ে দিল। এ বারের আইপিএল কেলেঙ্কারির পরেও বোর্ডের সবাই রে রে করে উঠেছিলেন। অরুণ জেটলি, অনুরাগ ঠাকুর, রাজীব শুক্ল কত নাম। কিন্তু এক দিন পরেই তা কেমন মিইয়ে গেল। চুপ দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। কারও নাম না করেও বলছি আমার সমসাময়িক কোনও ক্রিকেটারই কিন্তু আইপিএল এবং ক্রিকেট জুয়া ইস্যুতে শ্রীনিবাসনের সরে যাওয়া নিয়ে সোচ্চার নয়। এক মাত্র বিষেণ সিংহ বেদিকেই দেখলাম আওয়াজ তুলতে। ঠিক সময়ে ঠিক কথাটাই বলেছে বিষেণ। ও বলেছে টাকা চুপ করিয়েও রাখে। সে সূত্র মেনেই কি অর্থই চুপ করিয়ে দিল দেশের নামকরা সব প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট প্রশাসকদের! এটাই হচ্ছে শ্রীনি।
এ রকম একজন লোক বোর্ড সভাপতির পদে থাকলে কিন্তু সমূহ বিপদ দেশের ক্রিকেট সমাজের। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। কারণ এন শ্রীনিবাসন বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।
|
শ্রীনিবাসন বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকলে
|
৪ লাভ |
১. শ্রীনিবাসনের সংস্থা ইন্ডিয়া সিমেন্টস এবং চেন্নাই সুপার কিংসের
২. শ্রীনিবাসনের নিজেরও। নিজের সাম্রাজ্য বাড়িয়ে একদিন আইসিসি প্রেসিডেন্ট পদেও দেখা যেতে পারে শ্রীনিকে
৩. অনামী এবং জাতীয় দল থেকে সদ্য বাদ পড়া কিছু ক্রিকেটারেরও। আইপিএল-এর জ্যাকেটের আড়ালে এই সব ক্রিকেটারদেরই শিখণ্ডী বানিয়ে চলবে ক্রিকেট জুয়ার আসর
৪. ফিক্সিং-এ জড়িত বুকিদের |
|
৪ ক্ষতি |
১. ভারতীয় ক্রিকেটের ইমেজের বারোটা বাজবে। আইপিএলও অনেকটা ডব্লুডব্লুএফ-এর মতো হবে। বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না
২. ক্রমে ভারতীয় ক্রিকেটে তৈরি হবে মিথ্যাচারের পাহাড়। একনায়কতন্ত্র গ্রাস করবে এ দেশের ক্রিকেটকে
৩. মহিন্দর অমরনাথের মতো সোজা কথা বলার নির্বাচক বা প্রাক্তন ক্রিকেটারদের আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আর বিদেশ থেকে সিরিজ হেরে ফিরলেও শ্রীনির স্নেহধন্য ক্রিকেটার থাকবে বহাল তবিয়তেই
৪. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয়দের বিশ্বাসযোগ্যতা কমবে। পাকিস্তানের ক্রিকেটার এবং প্রশাসকদের মতো দুনিয়ায় উপহাসের সামনে পড়বে |
|
|