হুল্লোড়
নিজের ঢাক বাজাতে শিখিনি

পার্থ সেনগুপ্তের কান্ট্রি কোডটা কী?
(হাসি) এখন হয়তো বলা উচিত অস্ট্রেলিয়া। না ইন্ডিয়া। তবে ফ্রান্সের সঙ্গেও যোগ রয়েছে। আর তার পর ইংল্যান্ডে। সত্যি কান্ট্রি কোড বলাটা শক্ত। আমি বিশ্বাস করি যে, একজন একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে। স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ। শুধু টাইম জোনটা মনে রাখা দরকার।

শেষ কবে কলকাতায় এসেছেন?
তিন বছর আগে। আমার আত্মীয়-স্বজন অনেকেই এখন কলকাতায় থাকেন। ওই যে ২৩ পল্লির মাঠের সামনে কর্নারের বাড়িটা ছিল না?

মেয়ে নাওমের সঙ্গে পার্থ
ওখানে তো মাঠ নেই...
এক সময় ছিল। আমার খুড়তুতো ভাই অভিনেতা। কৌশিক সেন। শুনেছেন ওর কথা?

হ্যাঁ...
কলকাতায় গিয়ে ওর মা, মানে চিত্রা কাকিমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

কৌশিকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
ছোটবেলায় গরমের ছুটিতে কলকাতায় গেলে দেখা হত। তখন বাবান (কৌশিকের ডাকনাম) অনেক ছোট ছিল। ওর সঙ্গে প্রায় ৩৫ বছর দেখা হয়নি। মা বাংলা চ্যানেলে ওকে দেখিয়ে বলেন: ‘দেখ বাবান কী করছে’।

তার পর কী বলেন... তুই কী করলি?
(হেসে) না, মা জানেন।

কলকাতাতে অনেকেই তা জানে না...
তা ঠিক। আমি কোনও দিন নিজের ঢাক পেটাতে পারিনি। সিনেমা করতে আসি একেবারেই অ্যাক্সিডেন্টালি। আমার বয়েস ছিল ১৭, যখন বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তখন টাকা পয়সার খুব টানাটানি। পাশের বাড়ির একজন সিনেমাতে কস্টিউম ডিজাইন করতেন। আমাকে বলেন আর্ট ডিরেক্টর বিজন দাশগুপ্তের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবেন। ‘সাগর’ আর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’তে ওকে অ্যাসিস্ট করেছিলাম। প্রথম যে দিন মেহমুদ স্টুডিয়োতে বিজনদার সঙ্গে দেখা করতে যাই, তখন একটা মজার ঘটনা হয়েছিল। অমরেশ পুরির শ্যুটিং। ফাঁসির সিন। কিন্তু কেউ ফাঁসির দড়িটা ঠিক করে পরাতে পারছে না। আমি এগিয়ে গেলাম।


ওই ফাঁসির দড়ি পরানো দিয়েই সিনেমায় অভিষেক?
হ্যাঁ, আজও গলায় ঝুলছে সেটা। তবে ‘সাগর’ করতে গিয়ে প্রথমবার শিখি যে, সিনেমাতে যা হয় সবই মেক-বিলিভ। একটা বিশাল জেটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখি চোখের সামনে একটা ঝড় এসে জেটিটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। সে দিন বুঝেছিলাম যে, কোনও কিছুকেই অত সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত নয়। তার পর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ করলাম। আমার কাজ ছিল স্পেশাল এফেক্টস ডিপার্টমেন্টে। মনে আছে শ্রীদেবীর সেই চার্লি চ্যাপলিন হওয়ার দৃশ্যটি? ওটা আমাকে কোঅর্ডিনেট করতে হয়েছিল। কী অসাধারণ অভিনেত্রী শ্রীদেবী। একবার বোঝালেই কাজটা হয়ে যেত।

এই সব করতে করতে হঠাৎ ফ্রান্সে চলে গেলেন কেন?
দেশে একটা ফ্রেঞ্চ ফিল্মের কাজ করেছিলাম। নাম ‘নকটার্নে ইন্ডিয়েন’। সেই সময় দেখা হয় ফ্রেঞ্চ এমব্যাসির কালচারাল অ্যাটাশের সঙ্গে। হঠাৎ একটা স্কলারশিপ পাই ফ্রেঞ্চ ফিল্ম ইনস্টটিউটে ওয়ার্কশপ করার জন্য। চলে যাই। ওয়ার্কশপের পরে একটা ফিনিশিং ফিল্ম করার কথা। ঠিক ছিল সবাই ডকুমেন্টারি বানাবে। কিন্তু আমি বানালাম ফিকশন। তবে ফিল্ম ইনস্টটিউটের প্রধানের সেটা পছন্দ হয়। উনি বলেন, ‘তুমি সিনেমা বানানোর প্রথম জিনিসটা শিখেছ। ক্যামেরা হাতে থাকলে একজন পরিচালক যা ইচ্ছে হয় বানায়। তুমি সেটাই করেছ’। আবার স্কলারশিপ পেলাম। গ্র্যাজুয়েশন করলাম ওখান থেকে। নিজে ছবি বানালাম ‘লেট দ্য উইন্ড ব্লো’। ওটার অফিশিয়াল প্রিমিয়ার হল বার্লিনে। সাল্টে ২০০৪। কান সিনে ফাউন্ডেশন থেকে আমন্ত্রণ পেলাম। বিশ্বের সম্ভাবনাময় পরিচালকদের মধ্যে একজন হিসেবে ওরা আমাকে বেছে নিয়েছিল।

কিন্তু এ দেশে সেটা নিয়ে কিছুই তেমন লেখালিখি তো হয়নি...
একটু আধটু হয়েছিল। তবে আজকের দিনে যত লেখা হয়, সে সময় তা হত না। সে সময় একজন ফ্রেঞ্চ মহিলাকে বিয়ে করেছিলাম। নিজের কোম্পানি ছিল। অনেক ডকুমেন্টারি বানিয়েছি। ‘শক্তি’ ব্যান্ডকে নিয়ে এক ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলাম। আজকাল তো বিদেশে ডকুমেন্টারি খুব জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। লোকে সিনেমা হলে গিয়ে ডকুমেন্টারি দেখে। মাইকেল মুর-এর মতো পরিচালকেরা কত ডকু বানিয়েছেন।
‘‘‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ থেকে শ্রীদেবীর সেই চার্লি চ্যাপলিন
হওয়ার দৃশ্যটা আমি কো অর্ডিনেট করেছিলাম’’

‘শক্তি’র ডকুমেন্টারি বানানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দারুণ। ছোটবেলায় ‘শক্তি’ শুনেছি। আর আমি কিনা হঠাৎ জন ম্যাকলকলিন, জাকির হুসেন-এর মতো লেজেন্ডদের ওপর ডকুমেন্টারি করছি! মুম্বই, প্যারিস, বেলজিয়াম-এর কনসার্টে শু্যট করেছি। একবার জনের কনসার্ট শ্যুট করছি। সেই মিউজিক এডিট করা কি চাট্টিখানি ব্যাপার নাকি? সময় নিয়ে করলাম। তার পর জন সেটা দেখে বললেন, ‘ইউ আর আ মায়েস্ট্রো!’ আমি তো অবাক। বললেন, ‘তুমি আমার মিউজিকটা কি সুন্দর বুঝে এডিট করেছ!’

হঠাৎ মাঝখানে হারিয়ে গেলেন কেন?
প্যারিস থেকে চলে গেলাম ইংল্যান্ডে। ওখানে পড়াতাম। সিনেমা নিয়ে। তার পর আমার একটা মেয়ে হল। নাম রাখলাম নাওম সেনগুপ্ত। হিব্রু ভাষায় নাওম মানে প্লেজেন্টনেস। বেশি বয়েসে বাবা হয়েছি। তাই ঠিক করলাম যে, একদম ছুটি নিয়ে একেবারে মেয়ের সব দায়িত্ব নেব। আমার পার্টনার সোশিয়োলজি পড়ান।

বিয়ে করেননি?
না, আমার পার্টনার অ্যালানা লেনটিন। ও আইরিশ। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়। বিদেশে বিয়ে না করে বাচ্চা থাকলেও কোনও অসুবিধা হয়নি। অস্ট্রেলিয়াতে তো আমরা— ‘ডি ফ্যাক্টো কাপল’। শুধু একটা সেল্ফ ডিক্লারেশন দিতে হয়েছে। একবার বিয়ে করেছিলাম। সেটা টেকেনি। এখন বিয়ের প্রয়োজন বোধ করি না। হয়তো এদেশে থাকলে ধারণাগুলো অন্য রকম হত। আচ্ছা
এসব আপনাদের কাগজে বলা যাবে তো? (হেসে) এ দেশে সব আত্মীয়রা জানেন না যে, আমরা বিয়ে করিনি। জিজ্ঞেস করলে বলি, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। করেছি বিয়ে!’

নাওম নাকি ‘সানরাইজ’ ছবিটির জন্য আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা?
হ্যাঁ। নাওম-এর জন্ম হয় ইংল্যান্ডে। আমাদের নিজেদের বাড়িতেই। ওভাবেই প্ল্যান করেছিলাম আমরা। ‘সানরাইজ’ ছবিটি হচ্ছে এক বাবাকে নিয়ে। যার সন্তান অপহরণ করা হয়েছে। আদিল হুসেন এই চরিত্রটি করেছে। তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় মায়ের ভূমিকায়। এর সঙ্গে একটা প্যারালাল ট্র্যাক রয়েছে। সেটা একটা বেশ্যাপল্লিতে। যেখানে কত বাচ্চা বিক্রি হয়ে আসে। এই ছবিতে এক ফ্রেঞ্চ মিউজিশিয়নের সঙ্গে কাজ করেছি। নাম এরিক অ্যাবেকসিস।
ছবির জন্য কোলাহল (নয়েজ) থেকেও মিউজিক তৈরি করছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ছবিটি বাংলায় বানাব। তার পর ভাবলাম আমি কলকাতাকে তো সে ভাবে চিনি না। বাংলা বলতে পারি। কিন্তু বেশি ভাল জানি মরাঠি। ছবির শ্যুটিং করেছি গোয়াতে। এর পর মুম্বইতে শ্যুটিং করব।


কখনও ইচ্ছে করে না শিকড়ের কাছে ফিরে আসতে? বাংলা ছবি দেখেন?
সেভাবে দেখা হয় না। গৌতম ঘোষের ছবি দেখেছি। একটা ইংরেজি ছবি শু্যট করার কথা ভাবছি কলকাতাতে। ছবিটি দু’টো বিদেশি চরিত্রকে নিয়ে। যারা বাংলায় একটা ব্যাঙ্ক খুলতে চায়।

মেয়েকে বাংলা শেখাবেন?
আমি নিজের বদ্যি পদবিটা ওকে দিয়েছি। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে এ বার একটু বাংলা শেখানোর চেষ্টা করব!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.