পুবের আকাশে মেঘ কাটার সামান্য আশা দেখা দিলেও দক্ষিণে ফের খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস!
প্রকাশ কারাট ও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবস্থা অনেকটা এই রকমই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসুরা আশা করছেন, পশ্চিমবঙ্গে সারদা-কাণ্ড ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতায় ভর করে হাওড়া উপনির্বাচন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সিপিএম। পলিটব্যুরোয় আজ বিমানবাবুর রিপোর্টে এই আশার আলো দেখা গেলেও কেরলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের ঢেউ আছড়ে পড়েছে কারাটের দরজায়! রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন দাবি তুলেছেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরানো হোক ভি এস অচ্যুতানন্দনকে। এই মর্মে আগেই প্রস্তাব পাশ করেছিল কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এত দিন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এর পরে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। নেতৃত্বের আশঙ্কা, ভি এস-কে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরালে দলের নিচু তলায় ফের আগুন জ্বলবে! শনি ও রবিবার তাই এই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব সামলাতেই ব্যস্ত থাকবেন কারাট।
কারাটের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে কেরলে টি পি চন্দ্রশেখরনের খুনের মামলা। সিপিএম ছেড়ে নতুন দল গড়েছিলেন কোঝিকোড় জেলার এই নেতা। গত বছর ৪ মে তিনি খুন হন। অভিযোগের আঙুল সিপিএমেরই একগুচ্ছ নেতার দিকে। ওই ঘটনায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রবল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দলে সরব হন ভি এস-ও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারাট ঘোষণা করেন, দলের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত বলে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিও গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে দেখা হবে দলের কেউ জড়িত কি না। ঘটনার পরে এক বছর কেটে গেলেও সেই রিপোর্ট প্রকাশ পায়নি।
টি পি-র স্ত্রী কে কে রিমা আজ দিল্লি এসে দাবি তুলেছেন, ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। তাঁর বক্তব্য, “কারাটের কাছে জানতে চাই, কেন রিপোর্ট প্রকাশ করা হল না? কেন দোষী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? আসলে তদন্ত হয়নি, রিপোর্টও তৈরি হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, শাস্তি দেওয়ার বদলে দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসভাতেও কাল যোগ দেওয়ার কথা রিমার। তাঁর বিরুদ্ধে বিজয়নদের অভিযোগের জবাবে টি পি-কাণ্ডকে হাতিয়ার করছেন ভি এস। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর প্রশ্ন, তাঁর বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগ উঠছে। টি পি-কাণ্ড দলের সুনাম বাড়িয়েছে? তা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
বিজয়নদের পাল্টা অভিযোগ, এ সব বলে দলকে সমস্যায় ফেলছেন ভি এস। এমনিতেই যেখানে টি পি-হত্যা নিয়ে কংগ্রেস প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে বিরোধী দলনেতা বিভীষণের মতো কাজ করে চলেছেন! এই অবস্থায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেরল-অস্বস্তি এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ঘোরালো! রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য আপ্পুকুট্টন ভাল্লিকুন্নুর কথায়, “দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, মানুষ টি পি-কে ভুলে যাবে। কিন্তু তা ভুল! মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে হবেই!”
|