বুদ্ধের কটাক্ষ উড়িয়ে একই তোপ মমতার
সারদা তথা অর্থলগ্নি সংস্থার প্রশ্নে ফের পুরনো বাম সরকার এবং নাম না-করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আট দিন আগে শ্যামবাজার থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, বর্ধমানেও তার তীব্রতা অব্যাহত রইল।
পানিহাটিতে গিয়ে বুদ্ধবাবু দাবি করেছিলেন, দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে তিনি কোনও লগ্নি সংস্থাকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। শুক্রবার বর্ধমানের বীরহাটা উৎসব ময়দানে বক্তৃতার শুরুতেই সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেছেন, “আমি আপনাদের দেখাচ্ছি, ওরা কতটা নির্লজ্জ! ওরা বলছে, ঘেঁষতে দেয়নি। আসলে ওরা কতটা ঘষাঘষি করেছে!” মমতার মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রাক্তনের ওই প্রতিক্রিয়াকে তিনি আদৌ আমল দিতে নারাজ!
কাগজ, চিঠি, সংবাদপত্রের বান্ডিল, ফোনগাইড তুলে ধরে তৃণমূল নেত্রী যখন বক্তৃতা শুরু করেছেন, তত ক্ষণে আকাশে মেঘ। জোরালো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দ্রুত একের পর এক কাগজ দেখাতে দেখাতে মমতা বলেন, “বৃষ্টি হলে নথিগুলো দেখানো যাবে না আপনাদের! তাই গোড়াতেই সেগুলো দেখাচ্ছি। ভর্তি-ভর্তি দেখাব। এই দেখুন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চিট ফান্ডের মালিক। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদের পাশে চিট ফান্ডের মালিক। দেখুন, ওরা কত শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠিয়েছে চিট ফান্ডদের।”
বর্ধমানের উৎসব ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
কাগজ তুলে ধরেই মমতা বলেন, “যিনি বলছেন, চিট ফান্ডদের ঘেঁষতে দেননি, যে ৭৩টি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, তার ২৬টাই কাজ শুরু করেছে তাঁর (বুদ্ধবাবুর) আমলে!” প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “চিট ফান্ডকে নথিভুক্তি করতে কারা দিয়েছে? কারা বাড়তে সাহায্য করেছে?” উত্তরও দেন নিজেই, “চিট ফান্ডকে নথিভুক্ত করিয়েছে কেন্দ্র। বাড়তে দিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। ৩৫ বছরের অপশাসনের পরে মাত্র দু’বছর ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল সরকার, চক্রান্ত শুরু হয়ে গিয়েছে!”
সিপিএমের মুখপত্র ও তাদের প্রকাশিত ফোনগাইডে চিট ফান্ডের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে মমতার প্রশ্ন, “এত দিন ধরে ওরা যে বিশাল সম্পত্তি করেছেন, তা কি শুধু কৌটো নাচিয়ে? ওদের প্রশ্ন করুন, চিট ফান্ডের টাকা কোথায় গেল? মাত্র তিন মাস আগে জানা গেল, মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে। তার আগে কোথায় গেল চিট ফান্ডের টাকা? পার্টির ফান্ডে গিয়েছে? আমরা জানতে চাই।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাঁদের দলীয় মুখপত্রে কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা তোলার বিজ্ঞাপন নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প বা পণ্যের যে সব বিজ্ঞাপন নেওয়া হয়েছে, তার সবই অন্যান্য সংবাদপত্রেও বেরিয়েছে। এমনকী, তৃণমূলের মুখপত্রের শারদ-সংখ্যায় সারদার বিজ্ঞাপন ছিল বলে মমতাকে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব।
সারদা-ঘনিষ্ঠতার দায়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আপ্ত সহায়ক গণেশ দে-কে বহিষ্কার করেছে সিপিএম। মমতার প্রশ্ন, “কোন মন্ত্রীর স্ত্রী-র তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় টাকা ঢেলেছে সরকার? কার আপ্ত-সহায়ক চিট ফান্ডের সঙ্গে ধরা পড়েছে? শুধু তাড়িয়ে দিলেই কি হয়ে যায়? তা হলে তো খুনের পরে ক্ষমা চাইলেই কাজ মিটে যায়!” জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “আমরা তো এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। উনি নিজের ঘর সামলান আগে! সারদা-কাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আধ ডজন নেতা-মন্ত্রী তো জেলে যাবেন!”
শ্যামল সেন কমিশনে ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “তিন-চার দিনের মধ্যে নতুন আইন তৈরি করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেই আইন জমা দিয়ে বলেছি, দ্রুত যেন তা পাশ করানো হয়। কে কোথায় কখন কার কাছে কত টাকা রেখেছে, সমস্ত প্রশ্নের উত্তর চাই আমরা!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.