|
|
|
|
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা নেই, পুরভোটের কথাও নয় |
রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান |
প্রায় চার মাস বাদে ফের বর্ধমান শহরে এসে সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আর মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রশাসনিক জনসভা’ নয়, সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর দলীয় সমাবেশ। কিন্তু বর্ধমানের কথা প্রায় বললেনই না।
শুক্রবার বিকেলে বীরহাটায় উৎসব ময়দানে মমতার সভা জুড়ে রইল সিপিএম এবং কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে আক্রমণ। সারদার কথা এল, সিবিআইয়ের কথা এল, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাও এল। কিন্তু বর্ধমানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা এল না। কবে বর্ধমান পুরভোট হতে পারে, তার আগে কী ভাবে ঘর গুছিয়ে নিতে হবে, উঠল না সে সব কথাও। তাতে দলের নেতারা স্বস্তি পেলেও বিরোধীরা টিপ্পনী কাটতে ছাড়ছেন না।
দলনেত্রীর সভাস্থল বাছতে দু’দিন আগেই বর্ধমানে ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। উৎসব ময়দান বাছার পরে সার্কিট হাউসে দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বসেন তিনি। তাঁদের একজোট হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু মমতা সে দিকই মাড়ালেন না। বিক্ষিপ্ত ভাবে মেমারি, রায়না, মঙ্গলকোট, সাঁইবাড়ির নাম করলেন মাত্র। বরং তাঁর গোটা বক্তব্য জুড়ে রইল সেই সারদা কেলেঙ্কারি, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হাইকোর্টের রায় আর কেন্দ্রকে আক্রমণ।
আর কেউ জেলা নিয়ে বলবেন, সেই উপায়ও ছিল না। কেননা এ দিন সমাবেশে এক মাত্র ছিলেন মমতাই। প্রায় ৫০ ফুটের মঞ্চে অনেক নেতাই ছিলেন। মুকুল রায় থেকে শুরু করে সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যয়, ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক, স্বপন দেবনাথ, রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরা পৌঁছে গিয়েছিলেন আগেই। দুপুর থেকেই গান শুরু হয়েছিল আর মাঝে-মধ্যে ঘোষণা, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটু পরেই এসে যাবেন।’ কর্মীদের তাতাতে আর কেউ মাইক ধরছেন না কেন? এক ফাঁকে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকই জানিয়ে দিলেন, “এই জনসভায় এক মাত্র বক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” |
|
তখনও অধীর অপেক্ষা। শুক্রবার বিকেলে বর্ধমান শহরের বীরহাটায় উৎসব
ময়দানের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে পৌঁছনোর আগে ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ। |
উৎসব ময়দান অনেক আগে থেকেই কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। শুধু কালনা, কাটোয়া, ভাতার, গলসি, জামালপুর, রায়না বা খণ্ডঘোষই নয়, কর্মীরা এসেছেন আসানসোল-দুর্গাপুর থেকেও। পুলিশের হিসেবে, সংখ্যাটা অন্তত ৫০ হাজার। সভা শেষ হতেই মলয়বাবু কিন্তু বলে দিলেন, লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই মাঠে যে খুব বেশি হলে ৩০-৩৫ হাজারের বেশি লোক ধরার কথা নয়? মলয়বাবুর জবাব, “সেটা কি আর জানি না! কিন্তু আশপাশের সমস্ত বাড়ির ছাদ ভরে গিয়েছে, দেখলেন তো? পথঘাটে তিলধারনের জায়গা নেই। বীরহাটা সেতুর উপরেও জনসমুদ্র! কত লোক মাঠে ঢুকতেই পারেনি।”
এত বড় জনসমাবেশ সত্ত্বেও জেলায় দলের কোন্দল সম্পর্কে, বর্ধমানের পুরভোট সম্পর্কে একটিও কথা নেই কেন তৃণমূল নেত্রীর? বর্ধমান পুরসভার বিরোধী নেতা সমীর রায়ের ব্যাখ্যা, “পুরভোটের অনেকটাই দেরি আছে। তার আগে তো পঞ্চায়েত ভোটটা সারতে হবে। সেই পঞ্চায়েতের জটই তো কাটেনি। দিদি হঠাৎ পুরভোট নিয়ে বলতে যাবেন কেন?” আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব? সমীরবাবু বলেন, “নিজেদের ভিতরে কী হচ্ছে তা নিয়ে কি কেউ ঢাক পেটায়! আমাদের কিছু বলার থাকলে কর্মী বৈঠকে নিশ্চয়ই বলবেন। যাঁকে প্রয়োজন, হুঁশিয়ার করে দেবেন।”
তৃণমূল কাউন্সিলার তথা শহর যুব তৃণমূল সভাপতি খোকন দাসও মনে করেন, এখনই দলনেত্রীর বর্ধমান পুরভোট নিয়ে কথা বলার ,ময় আসেনি। বরং সভায় ভিড় দেখে বেজায় খুশি শহরের অপর তৃণমূল নেতা সুজিতকুমার ঘোষ। তাঁর মতে, “বর্ধমানের ৩৫টা ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেই বসে রয়েছে মলয়দার নেতৃত্বে। নইলে কি এত ভীড় হয়? তা হলে কেন পুরভোট নিয়ে কথা হবে?” সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য পাল্টা দাবি করেন, “বেশি হলে ১৫ হাজার লোক ছিল। তা-ও আরামবাগ, ইন্দাস, পাত্রসায়র বোলপুর থেকে আনতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা শেষ করার সময়ে ৩-৪ হাজারের বেশি লোক ছিল না।”
অমলবাবু জানান, আজ, শনিবার তাঁরা বর্ধমান টাউনহলে সমাবেশ করছেন। তাতে বর্ধমান শহর ও তার আশপাশ থেকে অন্তত দশ হাজার মানুষ আসবেন বলে তাঁর দাবি। পুরভোট প্রসঙ্গে মমতার নীরবতা নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “উনি তো এখন দিল্লি দখলের কথা বলছেন। তার পরে এত ছোট স্টেশন ধরেন কী করে? তবে আসল কথা হল, রাজধানী এক্সপ্রসে ধরার আগে তো হাওড়ার গঙ্গাটা পার হতে হবে! আগে তো হাওড়ার লোকসভার উপনির্বাচন। উনি আগে সেই বৈতরণী পার করুন!” |
|
|
|
|
|