|
|
|
|
কালনায় কমিটি গড়লেন নানা লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তাঁদের মধ্যে কেউ বিপদে পড়লে যাতে অন্যেরা পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য কালনা মহকুমায় একটি সংগঠন গড়লেন নানা অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টরা। শুক্রবার ‘কালনা ফিনান্সিয়াল এজেন্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠন গড়া হয়। একটি বৈঠকও করেন সংগঠনের সদস্যেরা।
কালনার পুরশ্রী মঞ্চে এ দিনের বৈঠকে শুধু কালনা মহকুমা নয়, মেমারি, ভাতার, জামালপুর-সহ নানা এলাকার বিভিন্ন সংস্থার এজেন্টরা যোগ দেন। বৈঠকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ওই সব এলাকায় কোনও এজেন্ট আক্রান্ত হলে প্রতিবাদ করা হবে। যে সব সংস্থা স্বচ্ছ ভাবে ব্যবসা করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনকে আবেদন জানানোর কথাও ভেবেছেন তাঁরা। এ দিনই দুর্গাপুরে ‘বর্ধমান সানমার্গ’ নামে এক লগ্নি সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালান কিছু লোকজন। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুর থেকে সারদা গোষ্ঠীর এক ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে নবদ্বীপ থানার পুলিশ। |
|
কালনার সভায় এজেন্টরা। |
কালনায় সভায় আসা এজেন্টরা জানান, গ্রামগঞ্জ থেকে আমানত জোগাড় করে নিজ নিজ সংস্থায় জমা করেছেন তাঁরা। বিনিময়ে সংস্থা থেকে কমিশন পেয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সম্প্রতি সারদা-কাণ্ডের পর থেকে পথে-ঘাটে নিগৃহীত হতে হচ্ছে, বদনামও শুনতে হচ্ছে তাঁদের। টাকা ফেরতের দাবিতে বহু আমানতকারী তাঁদের বাড়িতেও চড়াও হচ্ছেন। এ সব থেকে বাঁচতে তাঁদের অনেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও দাবি ওই সব এজেন্টদের। সুশীল বিশ্বাস নামে এমনই এক এজেন্টের অভিযোগ, “কোথাও আমানতকারীদের মোটরবাইক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, কোথাও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু বাইরের লোক নয়, বাড়িতেও গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে।” পান্নালাল মুখোপাধ্যায় নামে এক এজেন্টের কথায়, “চুরি, ডাকাতি নয়, আমরা সংস্থার নিয়ম মেনেই সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব দোষ আমাদের উপরে পড়ছে। যেন আমরাই টাকা আত্মসাৎ করেছি!” ওই সংগঠনের সভাপতি তপন রায় জানান, তাঁরা ১৭ জনের একটি কমিটি গড়েছেন। সংস্থার মূল উদ্দেশ্য, এজেন্টরা কোনও রকম বিপদে পড়লে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নবদ্বীপ থানার পুলিশ দুর্গাপুরে গিয়ে মানস ভট্টাচার্য নামে এক ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে। সঙ্গে ছিল দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ। মানসবাবুর বিরুদ্ধে নবদ্বীপ থানা ও নিউটাউনশিপ থানায় আলাদা ভাবে দুই আমানতকারী অভিযোগ করেছিলেন। এ দিনই আবার দুর্গাপুরে ‘বর্ধমান সানমার্গ’ নামে এক লগ্নি সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালান কিছু আমানতকারী ও এজেন্ট। |
|
দুর্গাপুরে বিক্ষোভ। |
পুলিশ জানায়, ২৫ এপ্রিল নবদ্বীপের বাসিন্দা মিলন নাথ মানসবাবু ও সারদার নবদ্বীপ শাখার ম্যানেজার অপূর্ব নাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তাঁত বুনে সঞ্চয় করা ৪ লক্ষ টাকা তিনি সারদা সংস্থায় লগ্নি করেছিলেন। ১৫ মাস পরে প্রায় ৫ লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় মতো টাকা আনতে গিয়ে তিনি দেখেন, নবদ্বীপে সংস্থার অফিস বন্ধ। তার পরেই পুলিশে অভিযোগ করেন। নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “মানসবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপূর্ব নাথের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” অভিযুক্ত মানসবাবু অবশ্য বলেন, “আমি এক জন কর্মী হিসেবে টাকা তুলে অফিসে জমা দিয়েছি। প্রতারণার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই।”
দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ জানায়, গত ২৩ এপ্রিল সোনালি ভট্টাচার্য নামে এক আমানতাকারী তাদের কাছে মানসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, তিনি ওই সংস্থার কাছ থেকে ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু তা দেওয়া হচ্ছে না। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ সেই অভিযোগের তদন্ত করছে। গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, নবদ্বীপ থানার কাছ থেকে তাকে হেফাজতে নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সারদা গোষ্ঠীর কয়েক জন এজেন্ট দাবি করেন, মানসবাবু দুর্গাপুর ছাড়াও সারদার নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের একাংশের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত বছরখানেকে তাঁর জীবনযাত্রার মান এক ধাপে অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল।
এ দিন দুপুরে সুহট্ট মলে ‘বর্ধমান সানমার্গ’-এর অফিসে জড়ো হন এক দল আমানতকারী। তাঁদের অভিযোগ, সপ্তাহ খানেক আগেই মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। এ দিন তাঁদের সঙ্গে সংস্থা কর্তৃপক্ষের বচসা বাধে। তবে শেষমেশ তাঁরা কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে ফিরে যান। কিন্তু বিকেলে অন্ডাল এলাকা থেকে এজেন্ট ও আমানতকারীদের একটি দল ওই লগ্নি সংস্থার কবিগুরু এলাকার রানি রাসমনি রোডের অফিসে চড়াও হয়। অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়। আমানতকারীদের ক্ষোভ, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। এজেন্টদের একাংশের দাবি, সংস্থা টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমানতকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদেরই। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। রাত পর্যন্ত আমানতকারী ও এজেন্টরা অবশ্য পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|