জাতীয় এবং রাজ্য রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে আসন্ন উপনির্বাচন। কিন্তু তার জন্য মানুষের কাছে যেতে হবে মাথা নিচু করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেমন কাজ করছে, সারদা-কাণ্ডের পরে নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝে নিচ্ছেন মানুষ। তাঁদের কাজ হবে, মানুষের কাছে নিজেদের ভুল সংশোধন করা।
হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপর্নিবাচন উপলক্ষে সিপিএমের সাধারণ সভা থেকে দলীয় কর্মীদের জন্য এই কৌশলই বেঁধে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, চাবুক ঘুরিয়ে কখনও মানুষের মন ঘোরানো যায় না! পরিবর্তন এনে তাঁরা এখন কেমন বুঝছেন মানুষকে এমন তির্যক প্রশ্ন করার দরকার নেই। বরং বলতে হবে, সিপিএম কী ভুল করেছিল এবং এখন তারা কতটা শুধরেছে। অহেতুক আক্রমণাত্মক না-হয়ে আত্মসমালোচনার পথে হেঁটেই হাওড়ার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কথা বলেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু। তাঁর আহ্বান, ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হোক হাওড়া থেকেই!
বস্তুত, সারদা-কাণ্ডকে হাতিয়ার করেই হাওড়ার ভোট ময়দানে নেমেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট ভেঙে যাওয়ার পরে ত্রিপাক্ষিক লড়াইও দু’দলের নজরে রয়েছে। বুদ্ধবাবু অবশ্য দলের অন্দরে পরামর্শ দিয়েছেন, ভোট কতটা ভাগাভাগি হলে জিতব এই সব ভাবনায় না গিয়ে নিজেদের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের কথাই মানুষকে বলা ভাল। তাই বলে সারদা-কাণ্ড এবং সরকারের সমালোচনায় ছাড় দেওয়ার কথা বলছেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে শাসক দল কী ভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, সেই কাহিনি মানুষকে বলতে হবে
বিনীত ভাবে। মনে রাখতে হবে, নিজেদের ‘মাতব্বরি’র অভ্যাসের জন্যই বিরাট অংশের মানুষ বামেদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের আবার নিজেদের দিকে ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু মমতার সরকারকে একতরফা আক্রমণ করে গেলেই চলবে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। |
হাওড়া জেলা সিপিএমের সদর দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনে বৃহস্পতিবার ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জোনাল কমিটিগুলির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভায় বুদ্ধবাবু আত্মসমালোচনার পাশাপাশিই জোর দিয়েছেন সোজা-সাপটা বক্তব্যের উপরে। পরামর্শ দিয়ছেন, বস্তাপচা লম্বা বক্তৃতায় না যাওয়ার জন্য। কারণ, তাতে তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় না। পোস্টার-হোর্ডিংয়ে চমকের চেয়ে মানুষের সঙ্গে একেবারে স্থানীয় স্তরে মত বিনিময়ই বেশি কাজে দেবে বলে তাঁর মত। একই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দলের কর্মীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, ত্রুটি শোধরানোর পর্বে সংগঠনের অন্দরে অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আর্থিক অস্বচ্ছতা বরদাস্ত করা হবে না। সারদা-কাণ্ডের জেরে সিপিএমের কারও কারও নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক গণেশ দে-কে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও কারও বিরুদ্ধে এমন যোগসাজশ স্পষ্ট হলে রেয়াত করা হবে না, এই বার্তাই বুদ্ধবাবু দিতে চেয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
প্রসঙ্গত, সারদা-কাণ্ড এবং তার জেরে শাসক দলের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, নিজেদের দলের অন্দরেও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া, হাওড়ার উপনির্বাচনের সমীকরণ এই যাবতীয় বিষয়ই দিল্লিতে আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলা পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে রিপোর্ট পেশ করে জানাবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। দিল্লি যাওয়ার প্রাক্কালে এ দিন কলকাতায় ফের তিনি বলে গিয়েছেন, কেন তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চান।
দলীয় প্রস্তুতির পাশাপাশিই হাওড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, গত রবিবার (৫ মে) হাওড়া পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বিকা কুণ্ডু লেনে রাস্তার আলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রসূনবাবু উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বীথিকা পাঁজা। কিন্তু গত ৩ মে থেকেই হাওড়া জেলায় নির্বাচন বিধি চালু হয়ে গিয়েছে। সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার এ দিন বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে, প্রসূনবাবু ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জেলাশাসকের কাছে শুক্রবার লিখিত অভিযোগ জানাব।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রসূনবাবু বলেছেন, “ওই দিন প্রয়াত সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে ওই অনুষ্ঠানের জায়গায় নেমেছিলাম। যাতে তাঁরা আমার নির্বাচনে সহযোগিতা করেন, সে বিষয়ে কথা বলতে। সিপিএম অপপ্রচার করছে।” |