তেত্রিশ বছর কেটে গেল, কিন্তু সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ চুঁচুড়ার রবীন্দ্রভবন।
১৯৮০ সালের (১৩৮৭ বঙ্গাব্দ) ২৫ শে বৈশাখ গঙ্গার ধার ঘেঁষে শহরের একপ্রান্তে রবীন্দ্রভবনের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
কিন্তু ভবনের সে দিনের চেহারার সঙ্গে আজকের চেহারাটা মেলানোটাই ভুল হবে। রবীন্দ্রভবনের চারপাশ এখন আগাছায় ঢেকেছে। সেখানে বিষধর সাপেরও দেখা মেলে। জানলার কাচ নেই। ভিতরে বহু আসন ভাঙা। সেগুলি এক পাশে স্তূপাকৃত করে রাখা। পলেস্তারা খসেছে বহু দিন আগেই। রবীন্দ্রভবনের গা বেয়ে বট-অশ্বত্থের চারা গজিয়েছে। হুগলির সদর শহর চুঁচুড়া বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে। নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চা হয়। কিন্তু রবীন্দ্রভবনের এই হল হাল।
রবীন্দ্রভবনের ওপর তলায় আবার জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কার্যালয়। ভবন নির্মাণের শুরু থেকে ভবন দেখভালের দায়িত্ব ছিল জেলা প্রশাসনের। ১৯৯২ সালের ১৭ জুলাই থেকে তা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের হাতে আসে। ৭১২ আসনবিশিষ্ট হলের দেখভালের দায়িত্বে আছেন ৮ জন কর্মী এবং এক জন অস্থায়ী কর্মী।
কিন্তু যথাযথ সংস্কারের অভাবে শব্দ প্রক্ষেপণের হাল খারাপ। শুরু থেকেই কারিগরি কারণে তা নিয়ে সমস্যা ছিল বলে জানালেন অনেকে। আলোর ব্যবস্থাও ক্রমে খারাপ হচ্ছে। জেনারেটর ঘরের অবস্থা খারাপ। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় জেনারেটর কর্মীকে। পানীয় জলের ব্যবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে বাড়ি থেকে সঙ্গে জল নিয়ে আসেন। বর্ষা কালে ভাঙা জানলা দিয়ে জল ঢোকে।
|
১৯৯৮ সালে এক বার ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ভবনের আশপাশ সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর সংস্কার হয়নি ভবনের। তারই মধ্যে চলে নানা সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান। নেতা-মন্ত্রীরাও আসেন। কিন্তু নজর নেই কারও।
এ দিকে, বছরে গড়ে শ’দেড়েক অনুষ্ঠান হয় এখানে। বছরে আয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ-সহ অন্য নিয়মিত খরচ প্রায় ৮০ হাজার টাকা প্রতি মাসে। বাকি টাকায় সংস্কার হওয়ার মতো অবস্থা কোথায়? ফলে পরিস্থিতি যা হওয়ার, তা-ই দাঁড়িয়েছে।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক দেবাশিস রায়।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে ভবন সংস্কারের জন্য। সেই টাকা জেলা প্রশাসনের হাতে এসেও গিয়েছে।” মাটি পরীক্ষা দিয়ে সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবলীনা চক্রবর্তী বলেন, “রবীন্দ্রভবনের বেহাল দশা দেখে খুবই মন খারাপ করে। এখানকার সাংস্কৃতিক মনস্ক মানুষের বড় ভরসা এই হল। কিন্তু বড়ই দৈন্যদশার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হচ্ছে হলটিকে।” অনুষ্ঠান চলাকালীন চেয়ার ভেঙে দর্শক আহত হয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে জানালেন তিনি।
‘অন্তরীপ’ নাট্য সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা রাজীব চক্রবর্তীর কথায়, “আমাদের সংস্থার অনুষ্ঠান প্রতিবার এখানেই হয়। দর্শকদের যাতায়াতে তাতে সুবিধা হয়। কিন্তু এক সময়ে যা আমাদের শহরের গর্ব ছিল, তা ফের সংস্কার করে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলাও জরুরি।” |