সারদা-কাণ্ডের জেরে জল আরও ঘোলা হচ্ছে সিপিএমে। তার প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়ছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমেই।
সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অপরাধে ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি দল থেকে সরাসরি বহিষ্কার করেছে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আপ্ত-সহায়ক গণেশ দে-কে। কিন্তু তার পরে দলের অন্দরে প্রশ্ন, শুধু নিচু তলার কর্মী গণেশবাবুকে শাস্তি দিয়েই কেন হাত ধুয়ে ফেলা হবে? জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর সম্পর্ক তদন্ত করে দেখার দাবিতে চাপ বাড়াচ্ছে দলেরই একাংশ। জেলা নেতৃত্ব চাইছেন, এমন বিতর্কিত বিষয়ে শেষ পর্যন্ত রূপরেখা বেঁধে দিক রাজ্য কমিটিই।
সিপিএমেরই একাংশের অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর এক কর্তার সম্পর্ক ভাল। সারদার ওই আধিকারিক তাঁর এই রাজনৈতিক যোগাযোগকে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করেছেন। ওই নেতা অবশ্য বারবারই যুক্তি দিচ্ছেন, সাংসদ হিসাবে তাঁর সঙ্গে অনেকেরই আলাপ ছিল। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই আধিকারিক একটি সংস্থার সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন বলেই তিনি জানতেন। সাংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে গত সাড়ে তিন বছর আর যোগাযোগও নেই। কিন্তু দলেরই অন্য অংশের আবার পাল্টা বক্তব্য, কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার পরেও দু’জনের যোগ ছিল।
ঘটনা হল, এই চাপানউতোর যত বাড়ছে, দলের মধ্যেই একটি অংশ অপর শিবিরের নেতাদের নাম জড়িয়ে দিচ্ছে! তাতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে দলেরই ভাবমূর্তির। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে তো লাভ নেই! একটি ক্ষেত্রে এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্র কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্য কারও ক্ষেত্রেও অভিযোগ এলে কালক্ষেপ করা হবে না।” জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন, এই বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনে কমিশন গড়া হোক। জেলার সুপারিশের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হোক রাজ্য কমিটি থেকে। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক সেরে রাজ্য নেতৃত্ব দিল্লি থেকে ফিরলে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী আবার বৈঠকে বসে সারদা-কাণ্ডের অভিঘাত খতিয়ে দেখা হবে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে জেলা কমিটির বৈঠকে জোনাল কমিটি ধরে ধরে অর্থলগ্নি সংস্থার প্রভাব আলোচনা করা হয়েছিল।
দলের মধ্যে জঞ্জাল সাফাইয়ের দাবির পাশাপাশিই সারদা-কাণ্ড এবং সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে চাপ বাড়াচ্ছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। কলেজ স্কোয়ারে বামফ্রন্টের ১৬টি ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের যে অবস্থান কর্মসূচি বুধবার শেষ হয়েছে, সেখান থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, দাবি না-মানলে এর পরে মহাকরণ অভিযান হবে। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, ‘লুটেরাদের সরকারে’র বিরুদ্ধে তাঁরা হাটে-বাজারে, ঘরে ঘরে প্রচার চালাবেন। যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরীর হুঁশিয়ারি, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে বারবার পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগানো হলে এর পরে তাঁরা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে অবস্থান করতে বাধ্য হবেন! |