খাঁচার পাখিকে অস্ত্র করে আক্রমণে মমতা
তোতাপাখিই এ বার অস্ত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সারদা তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হবে কি না, এই নিয়ে মামলাটিতে বুধবারও শুনানি হয়নি। তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৪ মে পর্যন্ত। যার ফলে আদালতের মধ্যেই বেনজির ভাবে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেন জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এমনকী এ-ও বললেন, ডিভিশন বেঞ্চ দ্রুত শুনানি করুক অথবা মামলা খারিজ করে দিক। মামলা খারিজ হলে তিনি উচ্চতর আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।
সিবিআই নিয়ে হাইকোর্টে যখন এই লড়াই চলছে, তখন সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে হাতিয়ার করলেন মমতা। এবং বুঝিয়ে দিলেন, উচ্চ আদালত যা-ই রায় দিক, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইটা তিনি এ বার মাঠে-ময়দানে নিয়ে যাবেন।
গত ৩০ এপ্রিল শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছিল, সিবিআইকে চালান রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তার পরে তৃণমূলের শীর্ষস্তরের অনেক নেতাই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। গত শনিবার এক জনসভায় মমতা বলেন, “আমাকে সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।” কিন্তু এ দিন তিনি সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সরাসরি তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রচারে নেমে পড়লেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন: “দয়া করে দেখুন, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছেন ‘সিবিআই এখন নিছকই তোতাপাখি, যে শুধু মনিবের শেখানো বুলি বলে।’ আপনারা কী মনে করেন? মতামত জানান।” সেই মন্তব্য দেড় হাজারের বেশি মানুষ পছন্দ (লাইক) করেছেন। অনেকে আবার এ-ও বলেছেন যে, ‘কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও রাজ্য সরকারের পোষা তোতাপাখি।’ কিংবা ‘পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই তদন্তের দরকার রয়েছে।’
তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, হাইকোর্ট যদি সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তা হলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রচারে নামবে দল। মমতার কথায় এ দিন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিন বর্ধমানে এক সভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও একই সুরে বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, ওরা স্বশাসিত সংস্থা নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা। তা হলে তারা নিরপেক্ষ হচ্ছে কী করে?” সিবিআই তদন্ত নিয়ে নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের উপরেই আস্থা রেখেছেন। বুধবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে বেরোনোর সময় তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত নিক।”
এর মধ্যে আরও এক বার পিছিয়ে গেল মামলার শুনানি। এ দিন এই মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ, সারদা গোষ্ঠী এবং অন্য একটি জনস্বার্থের মামলার আইনজীবী। তাঁরা মূল আবেদনকারী, রাজ্য সরকার, সিবিআই, সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হলফনামার প্রতিলিপি চান। এই পরিস্থিতিতে যে আরও সময় দরকার, সে কথা জানিয়ে দেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি।
যে জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে এই শুনানি চলছে, তার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় আদালতেই ক্ষোভ জানান। এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া যে কতটা জরুরি, তা বোঝাতে গিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, প্রতিদিন আত্মহত্যা চলছে। গ্রামে গ্রামে হাহাকার পড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ হাইকোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সিবিআই তদন্ত হলে প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়বে। কাদের যোগসাজসে মানুষ প্রতারিত হলেন তাঁদের চিহ্নিত করা গেলে সর্বস্ব হারানো মানুষেরা কিছুটা শান্তি পাবেন।
সুব্রতবাবুর সওয়ালের জবাবে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, আদালতের কাছে আবেগের কোনও জায়গা নেই। আদালত আইনের দৃষ্টিতেই বিষয়টির বিচার করবে। এ দিন যারা মামলায় অংশ নিয়েছে, তাদের হলফনামার প্রতিলিপি দেওয়াটা আইনিপদ্ধতি এবং হাইকোর্ট যে সেই আবেদন মানতে বাধ্য সুব্রতবাবুকে এ কথা জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।
সারদা মামলা নিয়ে অবশ্য এ দিন আরও এক দফা নাটক হয়ে গেল হাইকোর্টে। সুব্রতবাবু ছাড়াও আরও একটি জনস্বার্থ মামলা চলছে এই নিয়ে। সেই মামলার আইনজীবী উদয়শঙ্কর ভট্টাচার্য আদালতে প্রশ্ন তোলেন, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ রয়েছে, মামলা না মেটা পর্যন্ত সারদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও লেনদেন করা বা সারদার কোনও সম্পত্তি বিক্রি-হস্তান্তর করাও যাবে না। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টেরই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ‘তারা বাংলা’-র দু’টি চ্যানেল পরিচালনার করার জন্য একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। ওই দু’টি চ্যানেলই সারদা গোষ্ঠী। এ ভাবে সারদার চ্যানেল অন্যদের পরিচালনা করতে দেওয়াটা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরিপন্থী কি না, তা জানতে চান উদয়শঙ্করবাবু। এই সময় সুব্রতবাবু বলেন, সারদার আরও একটি চ্যানেলও অন্য কেউ চালাচ্ছে। কী ভাবে এমনটা ঘটল, তা জানতে চান ওই দুই আইনজীবী।
প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। তবে সঠিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চকে জানানো হলে তারা ব্যবস্থা নেবে। সুব্রতবাবু বলেন, তারার দু’টি চ্যানেলের কর্মীরা হাইকোর্টে যে মামলা করেছিলেন, তার শুনানির সময় রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ জানতেন। কিন্তু বিচারপতি মুখোপাধ্যায়কে তিনি বিষয়টি জানাননি। অশোকবাবু বলেন, “আমি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। মামলা চলছিল সারদা গোষ্ঠী এবং তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় আমার কোনও ভূমিকা ছিল না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.