বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থায় অনিয়মের পরে স্বল্প সঞ্চয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। তারই অঙ্গ হিসেবে স্বল্প সঞ্চয়ের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টদের এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমানত সংগ্রহ করতেই হবে বলে নির্দেশ দিল রাজ্যের অর্থ দফতর। জেলাগুলিতে কত এজেন্ট এখনও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে যুক্ত, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলাগুলিতে নিযুক্ত স্বল্প সঞ্চয়ের উপ-অধিকর্তা এবং সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিকদের নিয়ে বুধবার মহাকরণে এক বৈঠকে এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সারদা গোষ্ঠীর তছরুপের পরে এমন বৈঠক এই প্রথম। স্বল্প সঞ্চয় বিভাগ রয়েছে অর্থ দফতরের অধীনেই। তাই অর্থ দফতরই বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে এজেন্টদের। কিন্তু স্বল্প সঞ্চয়ে এজেন্টদের কমিশন কমে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরবেন কেন?
স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তা মোবেশ্বর আলি বৈদ্যের জবাব, পরিশ্রম বেশি করলে আমানত সংগ্রহের পরিমাণ বাড়বে। এজেন্টদের কমিশন বাবদ আয়ও বেড়ে যাবে। কম কমিশনেও এজেন্টদের আয় বাড়ানোর একমাত্র পথ বাড়তি পরিশ্রম। যাঁরা পরিশ্রমে অনীহা দেখাবেন, তাঁদের সরে যেতে হবে। এজেন্টরা যাতে বাড়ি বাড়ি ঘোরেন, সেই জন্য বার্ষিক আমানত সংগ্রহের ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হবে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না-পারলে বাতিল হবে লাইসেন্স।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে কমিশন কমে যাওয়ায় এজেন্টদের অনেকে বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার হয়ে আমানত সংগ্রহ করছেন বলে খবর আছে। লগ্নি সংস্থাগুলির বাড়তি কমিশনের আশায় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের কত এজেন্ট কাজ ছেড়েছেন, তা জানতে জেলায় জেলায় এজেন্টদের সভা ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তা। জেলায় জেলায় স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকদের ডাকা বৈঠকে যে-সব এজেন্ট হাজির হবেন না, তাঁদের প্রথমে নোটিস দিয়ে ডাকা হবে। দু’বার এ ভাবে ডাকার পরেও হাজির না-হলে কারণ দর্শাতে বলা হবে। উপযুক্ত জবাব না-মিললে বাতিল করে দেওয়া হবে লাইসেন্স।
স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের অনেকে বাড়ি বাড়ি না-ঘুরে ডাকঘরে বসেই কাজ সারছেন বলে অভিযোগ। অর্থ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে আমানতের ১০০ শতাংশ নিরাপত্তার কথা বোঝাতে পারলে বেশি সুদের লোভে অজানা লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখার প্রবণতা কমবে। মানুষকে প্রতারিত হতে হবে না। তেমনই প্রতি বছর স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের নিট জমা টাকা রাজ্যের উন্নয়নে খরচ হবে।
গ্রামের গরিবেরা যাতে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত না-হন, তার জন্য স্বল্প সঞ্চয় দফতর স্কুলে স্কুলে প্রচার চালানো হবে। প্রচারপত্র দেওয়া হবে পড়ুয়াদের হাতে, যাতে বাড়ি ফিরে তারা সেগুলি বাবা-মাকে দেয়। পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচার হলে বাবা-মায়েরা প্রতারকের পাল্লায় পড়বেন না। এ ছাড়াও গ্রামের হাটে, রেল স্টেশনে ভ্যানরিকশা এবং অটোয় মাইক লাগিয়ে প্রচার চালানো হবে। বিলি করা হবে পোস্টার এবং প্রচারপত্র। স্বল্প সঞ্চয়ের নতুন এজেন্ট নিয়োগের সময় প্রতারক সংস্থার কাউকে নেওয়া হবে না। সরকারি কর্তাদের মতে, প্রতারক সংস্থার এজেন্ট নিলে ভুল বার্তা যাবে। |