ঠেকে পরস্পরের কদর মালুম বিজেপি-ইয়েদুরাপ্পার
চেয়েছিলেন বিজেপি-র যাত্রাভঙ্গ করতে। হয়েছেও তাই। কিন্তু কার্যত কাটা গিয়েছে তাঁর নিজের নাকও। বিজেপি-কে কুপোকাত করার পাশাপাশি অন্তত গোটা কুড়ি আসন দখল করার লক্ষ্য ছিল বি এস ইয়েদুরাপ্পার। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সমর্থন জুগিয়ে কিংমেকার হওয়ার ছক কষে রেখেছিলেন বিজেপি-ছুট এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ছ’টির বেশি আসন জোটাতে পারেনি তাঁর দল কর্নাটক জনতা পার্টি। তবু ইয়েদুরাপ্পাকে ঘিরেই এখন আবার প্রকট হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতৃত্বের কোন্দল।
অরুণ জেটলির মতো নেতারা চাইছেন, লোকসভা ভোটের আগে ইয়েদুরাপ্পাকে ফের দলে ফিরিয়ে আনা হোক। বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়ে দলকে রাজ্য থেকে উৎখাত করে দিয়েছেন কর্নাটকের এই লিঙ্গায়েত নেতা। লোকসভা ভোটেও যাতে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়, সেই ভাবনা থেকেই জেটলি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, বিজেপি নেতাদের এখন বোঝা উচিত, কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পাকে ছাড়া গতি নেই। আবার দুর্বল ইয়েদুরাপ্পাও বুঝতে পারছেন, বিজেপি-র মতো বড় দলের খুঁটি ছাড়া জমি খুঁজে পাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। তার প্রমাণ, বিজেপি হারলেও নিজের ঘনিষ্ঠ শোভা করনলাজেকেও তিনি জেতাতে পারেননি।
ইয়েদুরাপ্পাকে ফেরানোর ব্যাপারে আপত্তি নেই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের। নরেন্দ্র মোদীও মনে করেন, ইয়েদুরাপ্পা ছাড়া কর্নাটকে বিজেপি-র ভাল ফল করা সম্ভব নয়। ভোট প্রচারে মাত্র ২-৩টি সভা করেই সব সমীকরণ পাল্টে ফেলা যায় না। বিশেষ করে যেখানে দুর্নীতির থেকেও বেশি গুরুত্ব পায় জাত-পাত।
কিন্তু লালকৃষ্ণ আডবাণী, অনন্ত কুমারদের মতো যে সব নেতার তীব্র বিরোধিতার জেরে ইয়েদুরাপ্পাকে দল ছাড়তে হয়েছে, তাঁরা এখনও মত পাল্টাতে নারাজ। কর্নাটকের ফল বেরনোর পর আজ দিল্লিতে বিজেপি-র সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসে। বৈঠকের পর ইয়েদুরাপ্পাকে দলে ফেরানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “এই নিয়ে কোনও প্রস্তাবই নেই।”
বৈঠকে থাকার কথা জানিয়েও শেষ মুহূর্তে আসেননি মোদী। ভোটের আগে থেকেই দূত মারফত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছেন ইয়েদুরাপ্পা। প্রকাশ্যে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সমর্থনও করেছেন তিনি। একটা পর্বে তাঁর ঘনিষ্ঠরাও জানিয়েছিলেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করলে ইয়েদুরাপ্পা ফের বিজেপি-তে ফেরার কথা বিবেচনা করবেন। ভোটের আগে বিজেপি-র কিছু নেতা গোপনে বৈঠকও করেন ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে। তাঁকে ফেরানোর পক্ষে বা বিপক্ষে, উভয় শিবিরের নেতারাই এখন হিসেব কষছেন, কর্নাটকের এই নেতাটি দলে না থাকায় কতটা ক্ষতি হচ্ছে দলের। ভোটের ফল দেখে দলের একাংশ মনে করছে, শুধু ইয়েদুরাপ্পার কারণেই অন্তত ৫০টি আসন খুইয়েছে বিজেপি। তিনি দলে থাকলে বিজেপি ৯০-এর কাছাকাছি পৌঁছে যেত। আডবাণীদের বিরোধিতায় যদি ইয়েদুরাপ্পাকে না সরানো হত, যদি ঘন-ঘন মুখ্যমন্ত্রী বদল করা না হত, বিজেপি একটি স্থির সরকার দিতে পারত, তা হলে কংগ্রেস ধারেকাছে ঘেঁষতে পারত না। বিজেপি নিজের শক্তিতেই সরকার গড়ার অবস্থায় পৌঁছে যেত। আর আজ শুধুমাত্র বিজেপি-বিরোধী হাওয়ায় পাল তুলেই সরকার গড়বে কংগ্রেস।
দক্ষিণে পাওয়া প্রথম রাজ্যটি যে হাতছাড়া হতে চলেছে, ভোটের আগে থেকেই এ আশঙ্কা ছিল বিজেপি-তে। আর ইয়েদুরাপ্পাও চাইছিলেন নিজের শক্তি পরখ করতে। ফলে বিজেপি ও ইয়েদুরাপ্পা, উভয়ের কাছেই কর্নাটকের এই ভোট ছিল পরীক্ষা। বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “এখন ইয়েদুরাপ্পাও বুঝে গিয়েছেন, বড় দলের ব্যানার ছাড়া তাঁর পক্ষেও মাথা তোলা সম্ভব নয়। ফলে এখন থেকেই তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।”
কর্নাটকের রাজ্য নেতৃত্ব থেকেও চাপ আসছে ইয়েদুরাপ্পাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। চোখের সামনে ইয়েদুরাপ্পাকে যেতে দিয়ে রাজ্যটি হাতছাড়া হতে দেওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে ক্ষুব্ধ তাঁরাও। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার মতে, “বিধানসভা নির্বাচনে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এ বারে লোকসভা ভোটের চিন্তা করা উচিত। এবং সেখানে ইয়েদুরাপ্পাই দলের মুখ হবেন।”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টারও লিঙ্গায়েত নেতা। তিনিও ঘরোয়া বৈঠকে কবুল করেছেন, লিঙ্গায়েতদের কাছে ইয়েদুরাপ্পা তাঁর থেকে অনেক বড় নেতা। শেট্টারের আর একটি পর্যবেক্ষণ, “১৯৭৭ থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, কর্নাটকে যে দল ক্ষমতায় থাকে, কেন্দ্রে সে দল ক্ষমতায় আসে না।” এ কারণে তাঁর ধারণা, এই রেওয়াজ চললে, লোকসভা ভোটে এই ভোটাররাই বিজেপি-কে ভোট দিতে পারেন। তার জন্য দরকার ইয়েদুরাপ্পার মতো শক্তিশালী নেতা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.