সিবিআই-এর মুক্তির জন্য কী আইন, জানাতে হবে দু’মাসে
সিবিআইকে অবিলম্বে স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করতে হবে। না হলে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে সুপ্রিম কোর্ট।
কয়লা খনি বণ্টন মামলায় সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে আজ আর এক দফা প্রশ্ন তুলল শীর্ষ আদালত। তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শুধু প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত নয়, কড়া ভাষায় ভর্ৎসনাও করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, “কোনও তদন্তকারী সংস্থাকেই অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়াটা বিপজ্জনক। তা হলে সে পাগলা ঘোড়া হয়ে যাবে। কিন্তু সিবিআই তো খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি। মনিবের শেখানো বুলিই সে বলে। আর তার অনেক মনিব।” একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য, সিবিআইকে স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রের প্রতি কোর্টের নির্দেশ, এই ব্যাপারে তারা কোনও আইন আনছে কি না, সেটা ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। শীর্ষ আদালতের এই ভর্ৎসনার মুখে আজ সিবিআই জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে।
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য সিবিআইকে ভর্ৎসনা করেই ক্ষান্ত হয়নি। আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার, অ্যাটর্নি জেনারেল বাহানবতী, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হরেন রাওয়াল-সহ কেন্দ্রের একাধিক নেতা-আমলা এবং কয়লা মন্ত্রক কেউই বাদ যাননি তাদের সমালোচনার হাত থেকে।
সিবিআইকে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, এই অভিযোগ অনেক দিনের। সম্প্রতি মুলায়ম, মায়াবতীও একাধিকবার এ কথা বলেছেন। ৩০ এপ্রিলের পর্যবেক্ষণেও একই কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ আবার সেই প্রসঙ্গ তোলায় এর পরে এই পর্যবেক্ষণকে রাজনৈতিক দলগুলি হাতিয়ার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন এ দিনই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে জনমত চেয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে হাতিয়ার করে আজ সংসদে অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর ইস্তফা-সহ একাধিক দাবিতে সংসদে হইচই শুরু করে দেন বিরোধীরা। শেষে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব দু’দিন আগেই শেষ করে দিতে হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও সিবিআইয়ের অবস্থার যে কোনও বদল ঘটেনি, সে কথাও আজ উল্লেখ করেছে শীর্ষ আদালত। তারা বলেছে, “বিনীত নারায়ণ-রায়ের ১৫ বছর পরেও দেশে সিবিআইয়ের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকেই এগোচ্ছে।” যে ভাবে নিজেদের উদ্দেশ্যসাধনে কেন্দ্র সিবিআইকে ব্যবহার করেছে তাতে ক্ষুব্ধ আদালতের প্রশ্ন, “সিবিআই কি? একটা তদন্তকারী স্বাধীন সংস্থা না শুধু তথ্য সংগ্রাহক।” রিপোর্টের পরিবর্তন করা তো দূরের কথা, অশ্বিনী কুমার বা বাহানবতীরা আদৌ ওই রিপোর্ট দেখতে পারেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। শীর্ষ আদালতের মত, সিবিআই তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আর এর ফলে তদন্তের রিপোর্টের মূল বক্তব্যটাই বদলে গিয়েছে। কয়লা খনি বণ্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে ছিলেন ডিআইজি রবিকান্ত মিশ্র। কিন্তু পরে তাঁকে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-তে বদলি করা হয়। আজ রবিকান্তকে সিবিআইয়ের ডিআইজি পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
এই রায় প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, “আদালত আজ তার পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে মাত্র। কংগ্রেস শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় থাকবে।”
এ দিকে আজ বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ দাবি করেছেন, “অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আগে বাহানবতীর ঘাড়ে দোষ চাপান। পরে বাহানবতী আবার আইনমন্ত্রীর ঘাড়ে দোষ চাপান। আসলে তাঁরা ৩ জন মিলেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আগেই পদত্যাগ করেছেন। বাহানবতী আর অশ্বিনী কুমারেরও সেই পথ ধরা উচিত।”
যদিও বাহানবতী এর আগে সুপ্রিম কোর্টে জানান, সিবিআইয়ের রিপোর্টে বদল করার কথা তিনি বলেননি। অশ্বিনী কুমারের নির্দেশেই তিনি সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই প্রধানের দাখিল করা হলফনামা থেকে পরিষ্কার যে, বাহানবতী রিপোর্ট তো দেখেছিলেনই, রিপোর্টে কিছু সংশোধনের নির্দেশও দেন।
সিবিআইয়ের প্রাক্তন প্রধান যোগিন্দর সিংহ শীর্ষ বলেন, “আদালতের পর্যবেক্ষণ ঠিক। সিবিআইয়ের ক্ষমতা খুবই সীমিত। ওরা নিজেদের ইচ্ছেমতো সিবিআইকে ব্যবহার করে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.