সারদা কাণ্ডে ধৃত এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে বুধবার আদালতে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল তদন্তকারী অফিসারদের।
এ দিন বিধাননগর এসিজেএমের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সারদা সংস্থার দু’টি কোম্পানির অধিকর্তা মনোজ নাগেলকে। একটি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। আদালতে ধৃতের বিরুদ্ধে এ দিন নতুন একটি অভিযোগ দায়ের করার অনুমতি চায় তারা। নাগেলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিম (ব্যানিং) আইন ১৯৭৮-এর ৪ এবং ৬ নম্বর ধারা যুক্ত করা জরুরি বলে আদালতকে জানান সরকারি আইনজীবী সাবির আলি।
অভিযুক্তের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা সরকার পুলিশের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, “কেন্দ্রীয় আইনের ওই দু’টি ধারা প্রয়োগ হলে মামলার অভিযোগকারীরাও এই ঘটনায় অভিযুক্ত হবেন।” বিচারক এ এইচ এম রহমান সরকারি আইনজীবীকে বলেন, “ওই আইনে শাস্তির কী ব্যবস্থা রয়েছে, বলুন।” সরকারি আইনজীবীকে নীরব দেখে বিচারক বলেন, “আইনের বইটা ভাল করে পড়ুন। ওই আইন যুক্ত হলে যাঁরা মামলা দায়ের করেছেন, বিষয়টি তাঁদের বিরুদ্ধেই চলে যাবে।” এর পরেই সরকার পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে ভর্ৎসনার সুরে বিচারক বলেন, “আপনারা আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন।” নতুন ধারা প্রয়োগের পুলিশি আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক। তবে পুলিশের আবেদন অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি (ষড়যন্ত্র) ধারা প্রয়োগ করা হয় নাগেলের বিরুদ্ধে।
ফলাফল না-জেনেই পুলিশ কেন ওই আইনের নতুন ধারা প্রয়োগ করতে চাইল নাগেলের বিরুদ্ধে?
বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষের দাবি, ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ওই ধারা প্রয়োগের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আদালত তা খারিজ করায় আর সে-পথে যাওয়া হবে না। নাগেলকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ হয়। অভিযুক্ত পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে জেলে তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ হয়।
সরকারি আইনজীবী সাবির আলির দাবি, নাগেল পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সল্টলেকে সারদা গোষ্ঠীর কার্যালয়ে সুদীপ্ত সেনের চেম্বার থেকে দু’টি ফোটো অ্যালবাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলিতে সারদার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি রয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে নাগেলের সম্পর্ক যে কত ঘনিষ্ঠ, ছবিতেই তা স্পষ্ট।
গোপন জবানবন্দির জন্য নাগেলকে এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ বলে, ওই অভিযুক্ত তাঁর বয়ান লিপিবদ্ধ করাতে চান। কিন্তু নাগেল জবানবন্দি দেননি। তাঁর আইনজীবী জানান, নাগেলকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বেঁকে বসেন। জানিয়ে দেন, তিনি কখনও এমন ইচ্ছার কথা পুলিশকে জানাননি। আজ, বৃহস্পতিবার সুদীপ্ত, দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ চৌহানকে ফের আদালতে তোলা হবে। তাঁদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজই।
|