কোথাও দুর্ঘটনা, কোথাও বাসে আগুন লেগে রাস্তা বন্ধ, কোথাও আবার মোটরচালিত ভ্যানরিকশা চালকদের সমাবেশ-মিছিল। এ সবের জেরে তুমুল যানজটে সঙ্গী কাঠফাটা রোদ, গরম ও আর্দ্রতা। সব মিলিয়ে বুধবার সকাল থেকেই হাঁসফাঁস করল শহর। স্কুল-কলেজ-অফিসের পথে নাস্তানাবুদ মানুষ।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে বাসের ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যুর প্রতিবাদে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড অবরোধ হয়। এর জেরে ব্যস্ত সময়ে ওই রাস্তায় আটকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বেলা ১১টা নাগাদ চিংড়িঘাটায় একটি বাসে আগুন লেগে যাওয়ায় পুলিশকে চিংড়িঘাটা মোড় বন্ধ করে দিতে হয়। এর জেরে ওই এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল।
মোটরচালিত ভ্যানরিকশা বন্ধ করার প্রতিবাদে ১টা নাগাদ ওয়েলিংটন স্কোয়ারে ওই ভ্যানচালকদের এসইউসি প্রভাবিত সংগঠনের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। ভ্যানচালকেরা মিছিল করে ওই সমাবেশস্থলের দিকে রওনা হন। পুলিশ জানায়, আনুমানিক পাঁচ হাজার চালক ওই মিছিলে সামিল হন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মিছিলে জনসংখ্যা ছিল আরও অনেক বেশি। ভ্যানচালকদের মিছিলটি দুপুর দেড়টা নাগাদ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ হয়ে শিয়ালদহের দিকে যায়। সমাবেশের আগে ওই প্রতিবাদ-মিছিলের জেরেই বিপুল যানজট হয়। স্তব্ধ হয়ে পড়ে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাঘাট। |
মিছিলে বন্দি পথ। হাঁসফাঁস গরমে ট্যাক্সিতে বসেই ক্লান্তির ঘুম
চালক ও যাত্রী দু’জনেরই। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
নিত্যযাত্রীদের অধিকাংশই এই সমাবেশের কথা জানতেন না। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে মাঝপথেই আটকে পড়তে হয় তাঁদের। বৌবাজার, মহাত্মা গাঁধী রোড, গিরিশ পার্ক পর্যন্ত প্রতিটি মোড়ে এবং তার আশপাশের ছোট রাস্তাগুলিতেও বাস, ট্যাক্সি, অটো আটকে থাকে। জেরবার হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়েন বাসযাত্রীরা। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে বাস, অটো থেকে নেমে অনেকেই মেট্রো ধরে রওনা দেন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও দীর্ঘ সময় ধরে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকেছে। দুপুর ১টা থেকে প্রায় পৌনে ২টো পর্যন্ত এই রাস্তা যানজটে অবরুদ্ধ ছিল। থমকে যায় ধর্মতলা চত্বরও। আটকে পড়ে বাস, ট্যাক্সি। এসইউসি-র রাজ্য কমিটির নেতা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় এই দুর্ভোগের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “হাইকোর্টের নির্দেশে সব মোটরভ্যানচালক এক মুহূর্তে জীবিকা হারাচ্ছেন। রাজ্য সরকার তাঁদের জীবিকা রক্ষায় কিছু করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এই কর্মসূচি নিতে হয়েছে। জনগণের অসুবিধার জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি।”
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ভাবে রাস্তা আটকে অবরোধ ও মিছিল করায় জনসাধারণের যে ভোগান্তি হয়েছে, তাতে ফের পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভরদুপুরে ভ্যানচালকদের এই মিছিলের আগাম খবর ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু অভিযোগ, সব জেনেও এ দিনের এই দুর্ভোগের মোকাবিলায় পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “যতটা সম্ভব গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে আজকের মিছিলে জনসংখ্যা এত বেশি ছিল যে, পুলিশবাহিনী থেকেও যানজট এড়ানো যায়নি।”
এ সবের পাশাপাশি রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের জন্য রবীন্দ্র সদনের এক দিক আটকে মণ্ডপ তৈরির জেরে হরিশ মুখার্জি রোডে যান চলাচলের গতি কমে গিয়েছে অনেকটাই। তার প্রভাব পড়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডেও। |