চার জেলে মোট পনেরো জন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে উগ্রপন্থা বা চরবৃত্তির অভিযোগ। এখন এঁদের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তায় পুলিশ প্রশাসন। কারণ, এঁরা সকলেই পাকিস্তানি নাগরিক। লাহৌরে সর্বজিৎ সিংহের উপরে প্রাণঘাতী হামলার পরে শুক্রবার থেকেই এদের নিরাপত্তা এক ধাক্কায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য কারা দফতর। যে চারটি জেলে এই পনেরো জন পাক বন্দি রয়েছেন, সেই আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, দমদম ও হুগলি সংশোধনাগারের সুপারদের এ দিন সকালেই এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের কারা দফতরের আইজি রণবীর কুমার।
কারা দফতরের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে শুক্রবার জম্মুর জেলের ঘটনা। সেখানে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিক, ৫৪ বছরের সানাউল্লাকে আর এক বন্দি, এক প্রাক্তন ভারতীয় সেনা ইট দিয়ে মেরে গুরুতর জখম করেন। সানাউল্লার উপর ওই হামলা সর্বজিৎ হত্যার বদলা বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে, আশঙ্কা কেন্দ্রীয় সরকারের। বিভিন্ন জেলে প্রায় ২২০ জন পাক বন্দি রয়েছেন। শুধু তিহাড়েই রয়েছেন ২০ জন। তাঁদের নিরাপত্তা বাড়াতে বৃহস্পতিবারেই রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিল্লি। রাজ্য কারা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে ১৫ জন পাক বন্দির মধ্যে তিন জন খাদিমকর্তা অপহরণ মামলায় অভিযুক্ত। তিন জনেই রয়েছেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। তাঁদের নাম: আরশাদ খান ওরফে এরশাদ, ইশাক আহমেদ ওরফে জাহির এবং তারিক মেহমুদ ওরফে নইম। জেলের বিশেষ আদালতেই তাঁদের বিচার চলছে।
তবে কারা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক পাকিস্তানি বন্দি রয়েছেন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। ছ’জন। তাঁদের নাম: আতিকুর রহমান ওরফে মুনির, ইউসুফ, মহম্মদ, আবদুল্লা ওরফে আসগর আলি, মহম্মদ ইউনুস এবং মহম্মদ ওয়াকার সেলিম ওরফে সূরয চৌধুরি। এই ওয়াকার সেলিমকে ২০০৬-এর গোড়ায় কলকাতা পুলিশের তৎকালীন অ্যান্টি টেররিস্ট সেল হাওড়ার পিলখানা থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, সেলিম পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের এক জন চর।
প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি শাহবাজ ইসমাইল ওরফে মহম্মদ জামাল ও নবাব খান। শাহবাজকে ২০০৯-এর মার্চে ফেয়ারলি প্লেস থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। তাদের দাবি, শাহবাজ ইসমাইল আল-বদর জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এ ছাড়া হুগলি জেলে বন্দি রয়েছেন চার পাক নাগরিক।
ওই পাক নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “পাক বন্দিদের উপর আমরা একটু আলাদা নজরই রাখি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়ার্ডাররা তাঁদের চোখে চোখে রাখছেন। বন্দি পাক নাগরিকদের কাছাকাছি থাকা অন্য বন্দিদের পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য কোনও বন্দির থেকে ঝুঁকি রয়েছে মনে হলে তাঁকে অনেকটা দূরে কোনও সেল বা ওয়ার্ডে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
সর্বজিতের হত্যার বদলা তো আপাত নিরীহ কোনও বন্দিও নিতে পারেন? আইজি (কারা) স্বীকার করে নেন, “সর্বজিতের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি সত্যিই আলাদা। এই অবস্থায় জেলেবন্দি পাক নাগরিকদের যতটা সম্ভব আলাদা করে রাখা হচ্ছে।”
|