রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তির মেলা-প্রদর্শনী করার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার (পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া) মেলা হবে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হল ময়দানে। মেলার থিম ‘স্বরাষ্ট্র দফতর’। শুক্রবার মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে তিন জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জয়া দাশগুপ্ত। মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি হিসাবে মেলা হবে। তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”
২০১১-র ২০ মে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত বছর সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজ্য সরকার বই প্রকাশ করেছিল। সঙ্গে ‘প্রগতি উৎসবে’র আসর বসেছিল কলকাতার মিলনমেলা প্রঙ্গণে। সে সময় তেমন কোনও উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। কিন্তু এ বার সরকার গত দু’বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে মেলা-প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। মেলা হবে আগামী ৫-২১ মে, ১৭ দিন ধরে। রাজ্যের প্রতিটি দফতর এই মেলার আয়োজক হবে। যে জেলায় যে দফতর মেলা করবে সেখানে মেলার ‘থিম’ হবে সেটাই। জঙ্গলমহলে যেমন মেলার ‘থিম’ থাকছে ‘স্বরাষ্ট্র’। স্বরাষ্ট্র দফতরই মেলাটি আয়োজন করবে। এ ছাড়ও সেচ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর, পূর্ত দফতর তাদের নানা কাজকর্ম সম্বন্ধে মানুষকে অবহিত করতে স্টল দেবে। সঙ্গে তাঁরা কী কী কাজ করেছেন তার পরিসংখ্যান ও উন্নয়নমূলক কাজের নানা তথ্য থাকবে। |
বিদ্যাসাগর হল ময়দানে পরিদর্শনে কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র। |
কী কী থাকবে মেলায়? পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবারই মেলা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। শুক্রবার তা নিয়েই বৈঠক করতে আসেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। মেলা কি ভাবে হবে তা নিয়ে একটি ধারণা তৈরি হয় এ দিন। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো, মাওবাদী দমন, পুলিশে নিয়োগ, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করতে যে সব খেলাধূলা, স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হয়েছিল, সে সব বিষয়ই হাজির করা হবে। মেলার স্টলে রাখা হতে পারে জঙ্গলমহল থেকে উদ্ধার করা ল্যাণ্ডমাইন, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকও। এমনকি ফের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও করা হতে পারে। প্রতিদিনই থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে তিন জেলার কোন কোন দফতর স্টল দেবে, ক’টা স্টল হবে তা নিয়েও এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ মেলার দু’দিন বাকি, রবিবার থেকে মেলা শুরু হওয়ার কথা। এখনও সিদ্ধান্ত না হলে কি ভাবে মেলা হবে? প্রশ্ন উঠেছে আর্থিক সঙ্কটে জেরবার সরকার এত টাকা জোগাবে কোথা থেকে? কোন খাতেই বা আসবে সেই টাকা?
প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রথমে মাঠ দেখতে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। এ দিনই প্রথম ফিতে ধরে মাপামাপির কাজ শুরু হয়। প্রশাসনিক কর্তাদের কথায়, দু’দিনে যতটা সম্ভব দিন-রাত এক করে কয়েকটি স্টলের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মেলা অন্তত শুরু করা যায়। তারপর প্রয়োজনে ধীরে ধীরে স্টল বাড়ানো হবে। টানা ১৭ দিনের মেলা কী আদৌ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হবে? এক পদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকের সহাস্যে বলেন, “রাজ্য সরকারের নির্দেশ তো মানতেই হবে। ধরে নিন স্কুল, কলেজের মতো প্রশাসনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি নেই বলেই, গ্রীষ্মকালীন মেলার আয়োজন। প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে মুক্তি। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলায় এমনিতেই কাজকর্মে গতি ছিল না। এ বার সব কাজকর্ম বন্ধ করে মেলায় মাততে মন্দ কী!” |