পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েনের বিরোধিতা করতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলেছিল রাজ্য। শুক্রবার পঞ্চায়েত মামলায় এই প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। বলেন, পঞ্চায়েত ভোটের সময় অভাবের কথা বলে রাজ্য। তা হলে উৎসব আর মেলার সময় দেদার খরচ করে কোথা থেকে!
বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এজলাসে সমরাদিত্যবাবু বলেন, গ্রামীণ সরকার গঠন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা উঠতেই রাজ্য আর্থিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলছে। রাজ্যে সত্যিই আর্থিক সঙ্কট চলছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে সমরাদিত্যবাবু বলেন, “সারা বছর ধরে উৎসব, ক্লাব, মেলা, সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে উদার হাতে খরচ করছে রাজ্য। অথচ সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা আর্থিক সঙ্কটের অজুহাত দিচ্ছে।”
কমিশনের কৌঁসুলির দাবি, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কয়েক বার চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে। সে সময়ে রাজ্য কখনও আর্থিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ তোলেনি। সমরাদিত্যবাবুর আরও যুক্তি, “কোনও সরকার বলতে পারে না যে নির্বাচনের জন্য টাকা নেই। কর্মীদের বেতন, গ্র্যাচুইটি, পেনশন এ সব ক্ষেত্রে যেমন সরকারকে খরচ করতেই হয়, তেমনই ভোট পরিচালনায় আর্থিক সঙ্কটের দোহাই দিয়ে নিরাপত্তা ও অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে আপস করা যায় না।” লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য রাজ্য সরকার যে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে, তার উল্লেখ করে সমরাদিত্যবাবু বলেন, “সিগারেটের উপরে কর বসিয়ে ওই তহবিলের জন্য ১৫০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হবে বলে রাজ্য জানিয়েছে। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোনও তহবিল নেই রাজ্যের।” বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেন, কেন্দ্রের যেমন রেলের জন্য আলাদা বাজেট আছে, রাজ্য বাজেটে তেমন ভাবে নির্বাচনের জন্য টাকার সংস্থান কেন করা যায় না? বিমলবাবু বলেন, “এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে রাজ্য ভাবতে পারে।”
এ দিন বিমলবাবু তাঁর সওয়াল শেষ করেন। কেন রাজ্যের ডিজি সিএপিএফের কথা লিখেছেন, তা ব্যাখ্যা করে বলেন, “জঙ্গলমহলে মাওবাদী মোকাবিলায় ৩৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। ডিজি ওই ৩৬ কোম্পানিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যবহারের কথা বলেছেন।” সমরাদিত্যবাবুর প্রশ্ন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি ওই ৩৬ কোম্পানিকে কাজে লাগানো হয়, তা হলে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলা হবে কী ভাবে?” |