|
|
|
|
জম্মুর জেলে এ বার আক্রান্ত পাক বন্দি, অস্বস্তিতে ভারতও
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
সর্বজিতের মৃত্যু নিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার বদলে অস্বস্তি বাড়ল ভারতের। আজ জম্মুর কোট বলওয়াল জেলে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাক বন্দি সানাউল্লার উপর চড়াও হন আর এক বন্দি। বিনোদ কুমার নামে খুনের আসামি ওই প্রাক্তন সেনা ইট ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সানাউল্লার চোখের উপর এমন ভাবে আঘাত করেন যে সেখানে গর্ত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে তাঁর চোখ-মুখ রক্তে ভেসে যায়। কোমায় আছন্ন সানাউল্লার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় আজই জম্মুর হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে চণ্ডীগড় পিজিআই-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর পর থেকেই চরমে উঠেছে বিতর্ক। পাক নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, “সর্বজিতের মৃত্যুর বদলা নিতে যে ঘটনা ঘটানো হল তার নিন্দার ভাষা নেই।”
আজ সকাল ৮টা নাগাদ নিয়মমাফিক বাগানের কাজের জন্য জেল থেকে বাইরে আনা হয়েছিল বন্দিদের। সেই সময়ই সানাউল্লার সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন বিনোদ কুমার। কথাকাটাকাটি থেকে হাতাহাতি, শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে সানাউল্লাকে আক্রমণ করে বসেন তিনি। তবে পুলিশের মতে, পাক জেলে ভারতীয় বন্দি সর্বজিতের উপর হামলা নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে সব মিলিয়ে সর্বজিতের মৃত্যুর আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের মাটিতে পাল্টা এই হামলার ঘটনায় নয়াদিল্লির অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ সর্বজিতের মৃত্যুর ফলস্বরূপ এই ধরনের পাল্টা আক্রমণ যে ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর। সেই অনুযায়ী কাল বিকেলে সমস্ত রাজ্যকে (যেখানে পাক বন্দি রয়েছেন) জরুরি ভিত্তিতে সতর্কবার্তাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাও এই হামলা কেন আটকানো গেল না, সেই প্রশ্ন উঠছে। |
হাসপাতালের পথে সানাউল্লা। ছবি: এপি |
আপাতত জম্মুর কোট বলওয়াল জেলের সুপার রজনী সহগল ও আরও এক কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে ডিভিশনাল কমিশনারের নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
৫২ বছরের সানাউল্লা আদতে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের বাসিন্দা। জম্মু ও কাশ্মীরে বিদ্যুতের চুল্লি ও সরকারি ভবনে বিস্ফোরণের অভিযোগে ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। টাডা আইনে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। কিছু দিন আগে কোট বলওয়াল জেলের তলায় এক সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়। পুলিশের সন্দেহ, গোটা পরিকল্পনার পিছনে ছিলেন সানাউল্লা। সেই থেকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে না রেখে একই সঙ্গে রাখা হত পাক বন্দিদের।
আজ সানাউল্লার উপর আক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়ায় পাকিস্তান। মানবিকতার খাতিরে সানাউল্লাকে অন্তত এই সময় ভারত মুক্তি দিক, সেই আবেদনও জানিয়েছে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আজিজ আহমেদ চৌধুরি বলেন, “ভারতে বন্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করার দায়িত্ব যে ভারতেরই, তা যেন মনে করিয়ে দিতে না হয়।” আজ ঠিক কী ঘটেছিল তার বর্ণনা চেয়ে পাঠিয়েছে ভারতের পাক দূতাবাস। সে দেশের কূটনীতিকদের সানাউল্লার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।
তবে শুক্রবারের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তিক্ততা বাড়লেও এ নিয়ে এখনই যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিতে চাইছে না মনমোহন সরকার।
সানাউল্লার উপর হামলার পর আজ সকালেই এক দীর্ঘ বিবৃতি দেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন। ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে, এই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, সুশীল কুমার শিন্দে, কপিল সিব্বলের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সর্বজিতের হত্যার নিন্দার পাশাপাশি আজকের ঘটনার সমালোচনা করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। ভারতের তরফে প্রথমে বলা হয়েছিল, আহতের চিকিৎসার ব্যবস্থা ঠিক মতো করা গেলে, তার পরই কূটনীতিকদের তাঁকে দেখার সুযোগ দেওয়া হবে। সেই মতো রাতের দিকে পাক হাইকমিশনকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়।
এক দেশের বন্দি অন্য দেশের জেলে (এ ক্ষেত্রে ভারত এবং পাকিস্তান) যাতে ‘মানবিক’ ব্যবহার পান তার জন্য যুগ্ম বিচারবিভাগীয় কমিশনের সদস্যদের বৈঠকে বসার আবেদনও জানানো হয়েছে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে। আকবরুদ্দিনের কথায়, “৫৩৫ জন ভারতীয় বন্দি পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে রয়েছেন। ভারতের জেলে রয়েছেন ২৭২ জন পাকিস্তানি। পরপর দু’টি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে এক দেশের বন্দি অন্য দেশের জেলে থাকলে তার নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।”
|
পুরনো খবর: দেশে ফিরল সর্বজিতের দেহ, বিক্ষোভ গ্রামে |
|
|
|
|
|