|
|
|
|
সর্বজিতের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে আবেগ টানার রাজনীতি
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনটা রাখা একটা স্কুলের মাঠে। থিকথিকে ভিড় সামলাতে পাগড়িধারী পঞ্জাব পুলিশ হিমশিম। আশপাশের বাড়িগুলোর ছাদেও ভিড়। বাইশ বছর টানাপোড়েনের পর পাকিস্তান থেকে অবশেষে কফিনবন্দি হয়ে ঘরে ফেরা সর্বজিৎ সিংহকে শেষ দেখা দেখতে চাইছে জনতা। মুহুর্মুহু স্লোগানও উঠছে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’, ‘সর্বজিৎ অমর রহে’।
সর্বজিৎকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নেতারা। চোখে পড়ার মতোই তাঁদের নামের তালিকাটা। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদল, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী প্রণীত কৌর। রাজ্য বিজেপির নেতারা তো আছেনই। একটু পরে এলেন রাহুল গাঁধীও। ২১ গান স্যালুটের পর জ্বলে উঠল চিতা। দিল্লি মুখে না বললেও কার্যত শহিদেরই মর্যাদা পেলেন সর্বজিৎ। যাত্রা শেষ হল তাঁর।
সত্যিই শেষ? নাকি বেঘোরে প্রাণ হারানোর পর তাঁকে ঘিরে রাজনীতির দড়ি টানাটানির এই সবে শুরু? আজই জম্মুর জেলে মার খেয়ে সানাউল্লা হক নামে এক পাক বন্দি কোমায় চলে যাওয়ার পরে ভারত-পাক কূটনৈতিক চাপান-উতোরও ফের তুঙ্গে। এই ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে দিল্লির।
গত কাল সর্বজিতের মৃত্যুসংবাদ ঘোষিত হওয়ার পর থেকে অস্বস্তি এড়ানোর মরিয়া চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছিল মনমোহন সরকার। সর্বজিতের পরিবারকে বারংবার এই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা হয়েছে যে, তাঁকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি কেন্দ্র। উপরন্তু গত কাল পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আসরে নামতে হয় রাহুলকেও। কেন্দ্রকে তুলোধোনা করার নয়া অস্ত্র পেয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠে বিরোধী বিজেপি। এ দিকে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিরোমণি অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল ঘোষণা করে দেন, সর্বজিতের অন্ত্যেষ্টি পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হবে। |
কফিনবন্দি সর্বজিৎ। শোকার্ত স্ত্রী-কন্যা। ছবি: এপি |
পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করছেন, সর্বজিতের শোকার্ত পরিবারের পাশে থাকা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির রেষারেষি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা কার্যত নজিরবিহীন। এমনকী গত কাল সর্বজিতের দেহ অমৃতসর থেকে ভিখিউইন্দে নিয়ে যাওয়ার সময়ে হেলিকপ্টারে কোন কোন নেতা থাকবেন, তা নিয়েও অকালি ও কংগ্রেসের মধ্যে চূড়ান্ত নাটক হয়। অমৃতসর বিমানবন্দরে সে সময়ে হাজির ছিলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদল-সহ শীর্ষ অকালি নেতারা। তাঁরা বিদেশ প্রতিমন্ত্রী প্রণীত কৌর ছাড়া আর কোনও কংগ্রেস নেতাকে হেলিকপ্টারে তুলতে রাজি ছিলেন না। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, কংগ্রেসিরা যাতে কপ্টারে উঠতে না পারেন, তাই হঠাৎই সেটির টার্মিনাল বদলে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৬ কংগ্রেসিকে হেলিকপ্টারে ঠাঁই দিতে বাধ্য হন অকালিরা।
বাদল সরকারের তৎপরতা জারি ছিল অন্য পথেও। সর্বজিৎ-হত্যার তদন্তের দায়িত্ব কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে আজই সর্বসম্মতিক্রমে এক বিল পাশ হয় পঞ্জাব বিধানসভায়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, সর্বজিৎ দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন। সর্বজিৎকে ‘শহিদ’ আখ্যা
দেওয়া নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি কেন্দ্র। ফলে এ নিয়ে চাপের কৌশল নিয়েছে অকালি। আজই অমৃতসরে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পর ডাক্তাররা জানিয়েছেন, খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই পাক জেলে সর্বজিতের মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষতিপূরণ ঘোষণার মধ্যেও রেষারেষির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। কেন্দ্র ঘোষণা করেছে ২৫ লক্ষ টাকা। পঞ্জাব সরকার দিচ্ছে ১ কোটি। সঙ্গে সর্বজিতের মেয়েদের সরকারি চাকরি। ঘুরেফিরে সেই পাশে থাকার মরিয়া চেষ্টা!
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাসক দল ও শিখদের মুখপাত্র হিসেবে ঘটনাপ্রবাহের রাশ ছাড়তে রাজি নয় অকালি। জাতীয়তাবাদী আবেগ কাজে লাগানোয় এগিয়ে থাকতে চায় বিজেপিও। তাই কেন্দ্রকে আক্রমণের পাশাপাশি সর্বজিৎ-কাণ্ডে আবেগের হাওয়া ধরতে চাইছে তারা। আবার, পঞ্জাব সেই আশির দশক থেকেই কংগ্রেসের দুর্বল স্থান। সে রাজ্যে পাঁচ বছর পরপর ‘পরিবর্তন’ দস্তুর হলেও গত বিধানসভা ভোটে অকালি-বিজেপি জোটকে সরাতে পারেনি কংগ্রেস। সর্বজিৎ-কাণ্ড এবং শিখ-বিরোধী দাঙ্গার মামলায় সজ্জন কুমারের মুক্তির ফলে কংগ্রেস আরও বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। রাহুলকে আসরে নামিয়েও শেষরক্ষা হবে কি না, সেই সংশয় কংগ্রেসের অন্দরেও।
ভোটব্যাঙ্ক বড় বালাই। সর্বজিতের শেষযাত্রায় এক মঞ্চে দাঁড়িয়েও তাই রাজনীতির খেলা ভুলতে পারলেন না নেতারা।
|
পুরনো খবর: সর্বজিৎ-হত্যা নিয়ে মুখরক্ষায় মরিয়া কেন্দ্র |
|
|
|
|
|