সর্বজিৎ-হত্যা নিয়ে মুখরক্ষায় মরিয়া কেন্দ্র
র্বজিৎ সিংহ মরে আরও এক দফা মার দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে।
একেই কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে মুখ পুড়েছে সরকারের। এর মধ্যে দেশের ভিতরে ১৯ কিলোমিটার ঢুকে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে চিনা সেনা। তার উপরে গত কাল মধ্য রাতে পাকিস্তানের হাসপাতালে সর্বজিতের মৃত্যু। সব মিলিয়ে ত্র্যহস্পর্শে মনমোহন সিংহের সরকার। সর্বজিতের মৃত্যু তো বটেই, তার সঙ্গে চিনের অনুপ্রবেশ জুড়ে এর মধ্যেই সরকারের বিদেশনীতিকে তুলোধোনা করেছেন বিরোধীরা। সর্বজিতের বোন দলবীর কৌর পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারত সরকারেরও সমালোচনা করায় সুবিধাই হয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিদের।
সর্বজিতের মৃত্যু যে তাদের পক্ষে বড় ধাক্কা, সেটা বুঝেছে কেন্দ্রও। তাই আজ এক দিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সর্বজিতের পরিবারকে এক বার্তায় শোক জানানোর পাশাপাশি আক্রমণ করেছেন ইসলামাবাদকে। অন্য দিকে রাহুল গাঁধী নিজে গিয়েছেন দলবীর কৌরদের সঙ্গে দেখা করতে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টাও হয়েছে। তাই পরিবারের তরফে প্রাথমিক ভাবে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হলেও পরে সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন রাখা হয়, তাঁরা যেন ভারত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।
সান্ত্বনা। সর্বজিতের বোন দলবীর কৌরের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই
গত মাসের ২৬ তারিখ লাহৌরের কোট লাখপত জেলে সর্বজিতের উপরে হামলা হয়। তার পর থেকে তিনি ওই শহরেরই জিন্না হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে আত্মীয়রা যাতে শেষ বারের মতো দেখতে পারেন, সে জন্য পাকিস্তান সরকার রাতারাতি দলবীরদের ভিসা দেয়। বুধবার মাঝ রাত পেরিয়ে মৃত্যু হয় সর্বজিতের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আমের আফতাব এবং মুদাস্সর নামে যে দু’জন সর্বজিতের উপর হামলা করেছিল, তারা তেহরিক-ই-তালিবান ও লস্করের হয়ে কাজ করত। আজমল কসাবের ফাঁসির পরেই সর্বজিতকে মারার পরিকল্পনা করা হয়।
দলবীরদের কাছে অবশ্য এই তথ্য আজ অর্থহীন। যেমন অর্থহীন সর্বজিতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ভারতের বিভিন্ন জেলে পাক বন্দিদের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা। এ দিন ভাইয়ের দেহ নিয়ে ভারতে আসার সময় বেশ সমস্যায় পড়তে হয় দলবীরদের। অনেক টালবাহানার পরে শেষে তাঁরা ছাড়পত্র পান। পরিবারের তরফে তার আগেই ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়। দলবীর গত কালই এক ভারতীয় খবরের চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করে মন্তব্য করেছিলেন: “ওঁর কুর্সিতে বসে থাকার অধিকার নেই।” এ দিনও তিনি বলেন, “সর্বজিৎকে মুক্ত করে আনার জন্য কোনও সরকারই কিছু করেনি।”
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অস্ত্র ভোঁতা করতে আজ সারাদিনই তৎপর ছিল কেন্দ্র। তারা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে, সর্বজিৎকে ছাড়িয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছিল দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় ইসলামাবাদকে আক্রমণ করে বলেন, “একটি ব্যাপার বিশেষ করে নিন্দনীয়। ভারত সরকার, সর্বজিতের পরিবার এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের আবেদনে কর্ণপাত করেনি পাকিস্তান।” বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদও বলেন, “সর্বজিতের মৃত্যুর ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে প্রবল মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করল।” তাঁর বক্তব্য, সর্বজিতের মৃত্যুর ফলে প্রবল ধাক্কা খেল দু’দেশের সম্পর্ক।
সর্বজিৎ সিংহের মৃত্যুর প্রতিবাদে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কুশপুতুল দাহ করলেন শিখরা।
জামশেদপুরের সাক্চি গুরুদ্বারের প্রধান ফটকের সামনে। বৃ্হস্পতিবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আকবরউদ্দিনের কথাতেও এই মরিয়া চেষ্টাই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “২০০৫ সালে মনমোহন সিংহ তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের সঙ্গে বৈঠকে সর্বজিৎ প্রসঙ্গ তোলেন। তার পরেও যখনই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়া গিয়েছে, আমরা পাক জেলে ভারতীয় বন্দি মুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছি।”
সরকারের পক্ষ থেকে যখন এ কথা বলা হচ্ছে, তখন দলবীরদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। তার পরে গিয়েছেন রাহুল গাঁধীও। রাহুলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছেন দলবীর। তাঁদের ক্ষোভও কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
তাতে কিন্তু বিরোধী আক্রমণ কমেনি। বরং কংগ্রেস তথা সরকারের নেতাদের এই আচরণকে ‘দেরিতে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা’ বলে ব্যঙ্গ করেছে বিজেপি। এই ঘটনার ফলে শিখ ভাবাবেগকে উস্কে দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন বিজেপি নেতারা। সংসদে লাগাতার স্লোগান তুলেছেন, ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’। রাজ্যসভায় অর্থ বিল পেশের আগে পাক সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারত সরকারের সমালোচনা করে জেটলি-সহ বিজেপি সদস্যরা ওয়াক আউট করেন।
শুধু সংসদে নয়, ময়দানেও নেমে পড়েছে বিজেপি। শাহনওয়াজ হুসেন জাানান, “সুষমা স্বরাজ দেখা করতে যাচ্ছিলেন সর্বজিতের পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু মাঝপথে খবর পান রাহুল তাঁদের নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন! বাধ্য হয়ে তাঁকে ফিরে আসতে হয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলকেও ফোনে কথা বলতে দেওয়া হয়নি সর্বজিতের পরিবারের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন যে অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছেন, তার সিকিভাগ আগে দেখালে সর্বজিৎকে এ ভাবে মরতে হত না। এ দিনই সর্বজিতের মৃত্যু এবং চিনের অনুপ্রবেশকে জুড়ে মনমোহন সরকারে বিরুদ্ধে বিদেশনীতিতে লাগাতার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কর্নাটকে ভোট-প্রচারে তিনি বলেন, “আইন মেনে সাজা দিতে না পারায় সর্বজিৎকে অন্য পথে হত্যা করা হল। মনমোহন সরকার পাকিস্তানের এই অমানুষিক আচরণের জবাব দিতে পারল না।” মোদীর মতে, সর্বজিতের ঘটনায় ভারত এবং পাকিস্তান দু’সরকারই সত্য লুকোচ্ছে। মোদী আরও বলেন, “চিনা সেনা ভারতের ভিতরে প্রবেশ করছে, তাঁবু খাটাচ্ছে, রাস্তা বানাচ্ছে। অথচ মনমোহন সরকার জানেই না যে এই পরিস্থিতিকে কী ভাবে সামলাতে হবে। এমন একটা সরকারকে কি বিশ্বাস করা যায়?” রাজ্যসভায় অরুণ জেটলি বলেন, “সুরক্ষিত জেলের মধ্যে পাক সরকারের মদত ছাড়া কী ভাবে সর্বজিতের উপর হামলা হতে পারে?”
চিন প্রশ্নেও বিরোধীদের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। জানিয়েছেন, বিভিন্ন কূটনৈতিক পথে চিনের কাছে নিজের উদ্যোগের কথা তুলে ধরছে দিল্লি। বিদেশমন্ত্রী নিজে গিয়ে এই নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, যে কোনও সম্পর্ক ঠিক করার জন্যই সময় এবং পরিসর দরকার। চিনের সঙ্গে এই সমস্যাটি একেবারেই একটি ছোট্ট ভৌগোলিক এলাকা নির্ভর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.