জিন্না হাসপাতালে সর্বজিৎ সিংহের দেখা পেলেন তাঁর পরিবার। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিকদের সর্বজিতের কাছে যাওয়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করার চেষ্টা করল পাক সরকার। সর্বজিতের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
লাহৌরের কোট লাখপত জেলে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ভারতীয় বন্দি সর্বজিতের উপরে হামলা চালায় অন্য দু’জন কয়েদি। জিন্না হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সর্বজিতের। তিনি গভীর কোমায় রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
খবর পেয়েই পাকিস্তানে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন সর্বজিতের পরিবারের সদস্যরা। তাঁর বোন দলবীর, স্ত্রী সুখদীপ ও মেয়ে পুনম ও স্বপনদীপের জন্য পাকিস্তানের ভিসা জোগাড়ে সাহায্য করেছিলেন তফসিলি জাতি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান রাজকুমার ভেরকা। লাহৌরের জিন্না হাসপাতালে পৌঁছতে সর্বজিতের পরিবারকে সব সাহায্য করা হবে বলে ইসলামাবাদ আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ভেরকা।
যাওয়ার আগে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে গিয়ে সর্বজিতের জন্য প্রার্থনা জানান তাঁর পরিবার। উদ্বেগে, আবেগে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল দলবীরের। সর্বজিতের মেয়ে পুনম বললেন, “বাবাকে এক বারই জেলে দেখেছিলাম। এ বার আবার দেখতে পাব।”
দেড়টা নাগাদ ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে ঢোকেন সর্বজিতের পরিবার। তাঁদের অভ্যর্থনা জানান দুই ভারতীয় কূটনীতিক। পরে পাক সরকারের দেওয়া গাড়িতে তাঁদের জিন্না হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের জানলা দিয়ে সর্বজিৎকে দেখেন দলবীর, সুখপ্রীত, পুনম ও স্বপনদীপ। দলবীর পরে জানিয়েছেন, “সর্বজিতের মুখ ফোলা। জ্ঞান নেই। হাসপাতালে মিনিট দশেক ছিলাম।” ১৫ দিন পাকিস্তানে থাকার অনুমতি রয়েছে সর্বজিতের পরিবারের। হাসপাতালেও থাকতে পারবেন পরিবারের দু’জন সদস্য। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সর্বজিতের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর মাথায় ইট দিয়ে মারা হয়েছে। ফলে, খুলিতে ক্ষত হয়েছে। সারা শরীরেও অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পরিবারকে দেখা করতে দিলেও ভারতীয় কূটনীতিকদের এখনও পর্যন্ত সর্বজিৎকে মাত্র এক বারই দেখতে দিয়েছে পাকিস্তান। পাক সরকার জানায়, জিন্না হাসপাতালকে এখন ‘সাব জেল’ হিসেবে গণ্য করছে তারা। তাই কূটনীতিকদের যাতায়াতের উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। নিয়মিত কূটনীতিকদের যাওয়ার অনুমতি দিতে পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়িয়েছিল নয়াদিল্লি। পরে ফের কূটনীতিকদের সর্বজিৎকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেয় পাক প্রশাসন।
কেন্দ্র জানিয়েছে, সর্বজিতের সুচিকিৎসার জন্য সব রকম চেষ্টা করছে তারা। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল সর্বজিতের। তাঁর উপরে হামলায় অভিযুক্ত আমের আফতাব ও মুদাসর জানিয়েছে, তারা ওই বিস্ফোরণের জন্যই সর্বজিৎকে ঘৃণা করত। তাঁর উপরে হামলা চালানোর জন্য অনেক দিন থেকেই তৈরি হচ্ছিল তারা। ইট জড়ো করা হয়েছিল। ঘিয়ের ফাঁকা টিন, চামচ শান দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র।
কিন্তু অনেক দিন থেকেই কোট লাখপত জেলে ছিল আফতাব ও মুদাসর। তা হলে এত দিন পরে কেন সর্বজিতের উপরে হামলা চালালো কেন তারা? সদুত্তর দিতে পারেনি দুই কয়েদি।
তা হলে কি সর্বজিৎকে ষড়যন্ত্র করেই সরিয়ে দেওয়া হল? কোট লাখপত জেলের প্রাক্তন ভারতীয় বন্দিরা জানিয়েছেন, ভারতীয়দের উপরে অত্যাচার খুব বিরল ঘটনা নয়। প্রাক্তন বন্দি গোপাল দাস জানিয়েছেন, সর্বজিৎকে একা রাখা হয়েছিল।
তার সেলের দরজা খুলতেন এক সহকারী সুপার স্তরের এক অফিসার। ফলে, বাইরের কোনও লোকের পক্ষে তার উপরে হামলা চালানো অসম্ভব। আর এক বন্দি স্বর্ণ লাল জানিয়েছেন, কার্গিল যুদ্ধের সময়েও ভারতীয় বন্দিদের উপরে অত্যাচার হয়েছে। সর্বজিতের উপরে হামলার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে জেলে ছিঁচকে অপরাধীদের নিয়ে আসা হয়। তাদের দিয়েই হামলা চালানো হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়।
ঘটনার পিছনে যা-ই থাক, এখন সর্বজিতের অবস্থার দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।
|
বাংলাদেশে মৃত বেড়ে ৪০০
সংবাদসংস্থা • ঢাকা |
বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্তের কাছেই গ্রেফতার হলেন বাংলাদেশের ভেঙে পড়া বহুতলের মালিক সোহেল রানা। অভিযান চালিয়ে রবিবার দুপুরে তাঁকে গ্রেফতার করল র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন)। ইতিমধ্যেই ৯ তলা ওই বহুতলটি ভেঙে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, রানা ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বেনাপোল বন্দর থানার পুলিশ মিজানুর রহমান খান জানিয়েছেন, আজ দুপুরে বেনাপোল বলফিল্ড এলাকার ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জেটির বাড়ি থেকে রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রানা ওই বাড়ির ভাড়াটে শাহ আলম মিঠুর ঘরে আত্মগোপন করেছিলেন। যশোর জেলার বেনাপোলে গ্রেফতার করার পর তাঁকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিঠু ও রানার সহযোগী অনিলকেও গ্রেফতার করেছে র্যাব। গত ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা নাগাদ বাংলাদেশে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা নামে ওই নয় তলা বাড়ি ভেঙে পড়ায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। |