কোমাচ্ছন্ন সর্বজিৎ সিংহকে আজ রাখা হল ভেন্টিলেশনে। তাঁর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। জিন্না হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, মাথায় প্রচণ্ড চোটের ফলে সর্বজিৎ গভীর কোমায় চলে গিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও থামেনি। তাই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়।
শুক্রবার সর্বজিতের উপর হামলার খবর টিভি-তে দেখার পর থেকেই সর্বজিতের বোন দলবীর কৌর চেষ্টা করছিলেন যাতে পাকিস্তান যাওয়ার ভিসাটুকু অন্তত জোগাড় করা যায়। সর্বজিতের পরিবারের চার জনকে পাকিস্তান হাই কমিশনের পক্ষ থেকে ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছে শনিবার। দলবীর কউরের সঙ্গে সর্বজিতের স্ত্রী সুখপ্রীত কৌর এবং তাঁদের দুই মেয়ে পুনম ও স্বপনদীপ কৌরও যাবেন পাকিস্তান। তবে কখন তাঁরা রওনা হবেন, তা নিয়ে অবশ্য কেউই মুখ খোলেননি। বিশেষ সূত্রের খবর, হাসপাতালে সর্বজিতের পাশে পরিবারের এক জনকে থাকার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার মুখে কুলুপ আটলেও আজ পাক বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সর্বজিতের উপর আক্রমণের ঘটনা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। |
সাংবাদিক বৈঠকের আগে সর্বজিতের পরিবার। ছবি: এএফপি |
পাকিস্তানের কোট লাখপত জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জেলেরই ছয় বন্দি সর্বজিতের উপর আক্রমণ চালায়। ইঁট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় তাঁর মাথা। সারা শরীরে ব্লেড ও ঘিয়ের টিনের টুকরো দিয়ে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। শুক্রবার অবশ্য দাবি করা হয়েছিল সেল বদলের সময়ে সর্বজিতের উপর হামলা হয়। আবার অন্য এক সূত্রে জানানো হয়, প্রতি দিনই কয়েদিদের এক ঘণ্টার জন্য সেলের বাইরে আনা হয়। শুক্রবার সেই সময়েই এই হামলা হয়। আজ অবশ্য আগের দু’টি বিবৃতি বদলে জানানো হয়েছে, সর্বজিতের ব্যারিকেডের সামনের দুই প্রহরীকে মেরে তাঁদের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নিয়ে তালা খুলে সেলে ঢুকে সর্বজিতকে আক্রমণ করে ওই ছ’জন। কাজেই আসল ঘটনা কী ঘটেছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। এই ঘটনার জন্য আমির আফতাব এবং মুদাসার নামের দুই বন্দির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা করা হয়েছে। তবে এহসানুল হক এবং মহম্মদ সফদর নামের দুই বন্দির বক্তব্য, তাঁরা সর্বজিৎকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন।
দলবীর কৌরের দাবি, আফজল গুরুর ফাঁসির পর থেকেই অন্যান্য বন্দিরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছিল। পরিবারকে লেখা চিঠিতেও সর্বজিৎ আশঙ্কা করেছিলেন যে তাঁর উপর হামলা হতে পারে। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কেন্দ্র উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও আক্ষেপ করেন দলবীর।
সর্বজিতের উপর আক্রমণের পর কেন্দ্রকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে তুলোধোনা করেন বিরোধীরা। আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তবে মোদী-সহ বিজেপির নেতারা প্রকাশ্যেই বলছেন, “কোমায় শুধু সর্বজিৎ নয়, কেন্দ্রও চলে গিয়েছে।” নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “আসলে ইউপিএ সরকার নিজেদের বাঁচাতেই ব্যস্ত। দেশবাসীদের নিয়ে ভাবনার সময় নেই।”
|