ব্যাঙ্কের সংখ্যা ১৫। তাতে অ্যাকাউন্ট ২৫০-এরও বেশি। এমনকী এক-একটা ব্যাঙ্কে ১৫-২০টা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট ছিল সুদীপ্ত সেনের সারদা গোষ্ঠীর নামে। ব্যাঙ্কগুলি বেসরকারি হলেও ওই সংস্থার নামে একসঙ্গে এত অ্যাকাউন্ট খোলা হল কী ভাবে, তা জানতে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, সারদার ১০০টিরও বেশি অ্যাকাউন্টে বছরে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সুদীপ্তবাবুর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, আমানতকারীদের একটা বড় অংশ প্রতিদিনই টাকা জমা দিতেন। কোনও দিন বিশেষ কোনও অ্যাকাউন্টে বেশি অঙ্কের টাকা পড়লে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা তুলে নেওয়া হত। কিন্তু তার পরে সেই টাকা কোথায় গিয়েছে, পুলিশ তা খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সুদীপ্তবাবু জমি-মাফিয়াদের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক রেখে চলতেন বলে জেরায় জানিয়েছেন সারদার অন্যতম শীর্ষ কর্তা মনোজ নেগেল। সেই সম্পর্কের সুবাদেই তিনি দুর্গাপুর ও আসানসোলে ব্যবসা বাড়াতে পেরেছিলেন। পুলিশ জেনেছে, দুর্গাপুর-আসানসোলে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন সুদীপ্তবাবু। মালদহে ওই সংস্থার নামে ১২ একর জমির হদিস পেয়েছে পুলিশ। চন্দননগরে একটি বাণিজ্যিক ভবন ও বাঁকুড়ায় একটি সিমেন্ট কারখানারও সন্ধান মিলেছে। পুলিশের দাবি, সুদীপ্তবাবুর সল্টলেকের ডি-এন ২৯ নম্বর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ওই সব জমির দলিল ও অন্যান্য নথি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার নেগেলকে বিধাননগরের এসিজেএম আদালতে তোলে পুলিশ। সল্টলেক ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় আমানতকারীদের দু’টি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। একটির ক্ষেত্রে তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজত এবং অন্য অভিযোগে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তের দিশা নিয়ে এ দিন আদালতে ফের প্রশ্ন তোলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা। তাঁর অভিযোগ, একই অফিসার দু’টি পৃথক অভিযোগের তদন্ত করছেন। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে এর আগেও তাঁর মক্কেল পুলিশি হেফাজতে ছিলেন। সেই সময় মাত্র একটি দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। এখন দ্বিতীয় অভিযোগের জন্য ফের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হচ্ছে। এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে সরকারি আইনজীবী সাবির আলির দাবি, নেগেল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি আরও তথ্য উদ্ধারে সাহায্য করবেন। তাঁকে নিয়ে পুলিশ তথ্য উদ্ধার অভিযানে বেরোবে। তাই অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।
এ দিনই নিউ টাউনের এক অর্থ লগ্নি সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সমরেশ মণ্ডল। তাঁর বাড়ি নিউ টাউনের গৌরাঙ্গনগরে, অফিস বাগুইআটিতে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ৩০০-র বেশি এজেন্টকে তিনি টাকা দেননি। টাকা পাননি আমানতকারীরাও। এজেন্টদের একাংশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৩০ কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। পুলিশ সমরেশবাবুকে গ্রেফতার করে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে।
|