|
|
|
|
গার্ডেনরিচ-কাণ্ড |
পুলিশ খুনে মুন্না-সহ চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না-সহ চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে শুক্রবার আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট জমা দিল সিআইডি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময়ে কলকাতা পুলিশের কর্মী তাপস চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার ৭৯ দিন পর চার্জশিট জমা পড়ল। এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলকাতা পুলিশের র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের ইনস্পেক্টর মিলনকুমার দাম।
চার্জশিটে সিআইডি জানিয়েছে, আগে থেকে পরিকল্পনা করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন কলেজের সামনে সঙ্গীদের নিয়ে মুন্না হাজির হন। কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদও যে এলাকার দখল নিতে সঙ্গীসাথী নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কলেজের সামনে হাজির হবেন, তা মুন্না জানতে পেরেছিলেন। তিনি আঁচ করেছিলেন, মনোনয়ন জমা নেওয়া ঘিরে সংঘর্ষ বাধবেই। তাই মোক্তারকে ঠেকাতে তাঁকে যে কলেজের সামনে থাকতে হবে, তা বুঝতে পেরেছিলেন মুন্না। সিআইডি-র দাবি, মুন্নার তিন শাগরেদও জেরায় কবুল করে যে, মুন্নার নেতৃত্বেই তারা সশস্ত্র অবস্থায় হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে জড়ো হয়েছিল। সিআইডি-র দাবি, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কলেজ চত্বর থেকে কিছুটা দূরে আচমকা বোমাবাজি শুরু হয়। সেই কারণে কলেজ গেটের সামনে থেকে সরে গিয়ে পুলিশকর্মীদের অনেকে বোমাবাজির জায়গায় চলে যায়। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যানের ধমক খেয়েই পুলিশকে ওই জায়গায় যেতে হয়েছিল বলে তদন্তে সিআইডি জানতে পারে। চার্জশিটে তারও উল্লেখ করেছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। আরও বলা হয়েছে, এর পরেই কলেজ গেটের সামনে মুন্না ও মোক্তারের দলবল মুখোমুখি চলে আসে। দু’পক্ষকে আলাদা করে সরাতে যান তাপসবাবু। তখনই তাঁকে গুলি করে মুন্নার সঙ্গী সুহান।
প্রসঙ্গত, ওই ঘটনায় পুলিশ পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে। একটি খুনের, অন্যটি সংঘর্ষের। মুন্না দু’টি মামলাতেই অভিযুক্ত। কংগ্রেস নেতা মোক্তার অভিযুক্ত সংঘর্ষের ঘটনায়। ১২ ফেব্রুয়ারি, ঘটনার দিনই মুন্নার দুই শাগরেদ ইবনে ও সুহানকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তাদের জেরা করে ইমতিয়াজ নামে মুন্নার আর এক সঙ্গীকে সিআইডি গ্রেফতার করে। ঘটনার পরে মুন্না ফেরার ছিলেন। গত ৭ মার্চ বিহার থেকে তাঁকে ধরে সিআইডি। সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনায় শানু নামে মুন্নার এক সঙ্গী-সহ ৫ জন এখনও ফেরার। তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছে
সিআইডি আদালতে জানিয়েছে, হরিমোহন ঘোষ কলেজ নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা পুরসভার ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল রঞ্জিত শীলও। সিআইডি-র হাতে ধরা পড়ার পরে মুন্নার বক্তব্য ছিল, রঞ্জিতবাবুই তাঁকে ফোন করে কলেজের সামনে আসতে বলেছিলেন। পরিকল্পনা করে তিনি সেখানে যাননি। এর সত্যতা জানার জন্য রঞ্জিতবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। সিআইডি-র দাবি, রঞ্জিতবাবু জানান, মোক্তারকে আটকাতে মুন্না ও তাঁর সঙ্গীদের আগে থেকেই কলেজের সামনে জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তিনি মুন্নাকে ফোন করে ডাকেননি। প্রসঙ্গত, ১১ ফেব্রুয়ারি বেশি রাতে কলেজের কাছে নির্মীয়মাণ একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে রঞ্জিতবাবুর ছেলে অভিজিৎ গুরুতর জখম হন। পরে তিনি মারাও যান। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ।
সিআইডি চার্জশিটে জানায়, মুন্নার সঙ্গীদের কাছ থেকে তিনটি দেশি পিস্তল উদ্ধার হয়। মুন্নার শনাক্তকরণ প্যারেড (টিআই প্যারেড) করা হয়েছে। তবে, পুলিশকর্মী ছাড়া আর কেউ মুন্নাকে শনাক্ত করেননি। চার পাতার চার্জশিট-সহ প্রায় দু’হাজার পাতার তদন্ত রিপোর্ট এ দিন আদালতে জমা দিয়েছে সিআইডি। তদন্তের ভিডিও সিডি-ও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। ওই মামলায় পুলিশকর্মী-সহ মোট ১২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
|
পুরনো খবর: উঠে বসার চেষ্টা করলেন, পারলেন না |
|
|
|
|
|