প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ফরেন্সিক বিভাগ যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নমুনা চেয়েছিল— সেই ভাঙা তালা, লোহার শিকল, বেকার ল্যাবরেটরির ভাঙা কাচ ও ল্যাবরেটরির সামনে পাওয়া বর্শাটি এখনও পুলিশ তাদের দেয়নি। তাই তদন্তে এক চুলও এগোতে পারেননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা অন্তর্ঘাত কি না, তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রশ্ন তোলায় রহস্যের জট কাটাতে কলকাতা পুলিশ ফরেন্সিক বিভাগকে তদন্তে নামিয়েছিল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনার ১০ দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। বেশ কিছু নমুনাও তাঁরা সংগ্রহ করেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে কলকাতা পুলিশের কাছে চারটি নমুনা চেয়েছিলেন তাঁরা। সেগুলি হল: মূল ফটকের ভাঙা তালা, লোহার শিকল, বেকার ল্যাবরেটরির ভাঙা কাচ এবং তার সামনে উদ্ধার হওয়া বর্শা। |
কলকাতা পুলিশের কাছে ওই সব নমুনা চেয়ে পাঠানোর দু’সপ্তাহ পরেও সেগুলি তাঁদের কাছে জমা পড়েনি বলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। এর পরে নমুনা জমা পড়লে তা যে কাজে লাগবে না, এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। ওই বিশেষজ্ঞেরা জানান, ওই সব নমুনা পাঠানোর কথা জোড়াসাঁকো থানার। এক ফরেন্সিক-কর্তার মন্তব্য, “এই তদন্তে কলকাতা পুলিশ আন্তরিক কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে।” কলকাতা পুলিশ এ ব্যাপারে কী বলছে? যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, “এই বিষয়টি আমার জানা নেই। বিভাগীয় অফিসারেরা বলতে পারবেন।” তবে ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবপ্রসাদ সিংহের দাবি, “আমরা সব কিছুই জমা দিয়েছি।” কবে এই সব নমুনা জমা পড়েছে জোড়াসাঁকো থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারেরা তা জানাতে পারেননি।
গত ১০ মার্চ প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের তালা ভেঙে একদল দুষ্কৃতী ঢুকে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পতাকা হাতে ওই দুষ্কৃতীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারধর করে, বেকার ল্যাবরেটরির কাচ ভাঙে এবং ফিজিক্স ল্যাবরেরিতে ঢুকে যন্ত্র ভেঙে দেয়। দুষ্কৃতীরা কলেজের ভিতরে অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল বলেও অভিযোগে জানানো হয়। বেকার ল্যাবরেটরির সামনে পড়ে থাকা একটি বর্শাও পাওয়া যায়, যা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সেই মতো তদন্ত শুরু করে।
এই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা এবং তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলরের নামে জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। ওই নেতা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অভিযোগ, এর পরেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ মহল থেকে তদন্তের অভিমুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনাটি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকেই ঘটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। বেকার ল্যাবরেটরির সামনে উদ্ধার হওয়া বর্শাটি প্রেসিডেন্সির সম্পত্তি কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল-নেতৃত্ব। রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটনার সাত দিনের মাথায় ফরেন্সিক বিভাগকে তদন্তে নামার আর্জি জানায় কলকাতা পুলিশ। সেই মতো ১৯ মার্চ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে যান।
তদন্তে নেমে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দেন, তাঁদের কাছে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তার সাহায্যে ভাঙা তালা এবং লোহার শিকল পেলে তাঁরা জানিয়ে দিতে পারবেন যে তালা বাইরে থেকে না ভিতর থেকে ভাঙা হয়েছিল। একই ভাবে কাচ কী ভাবে ভাঙা হয়েছিল, তা-ও তাঁরা জানাতে পারবেন বলে দাবি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটিও নমুনা হাতে না পাওয়ায় কোনও কাজই করা যায়নি বলে জানাচ্ছে রাজ্য ফরেন্সিক দফতর।
|