দেবযানীর দুই অ্যাকাউন্টে মিলল ৩০ কোটির হদিস
সারাক্ষণ ‘সেন স্যার’-কে আগলে রাখতেন তিনি। তাই স্যারও তাঁকে বঞ্চিত করেননি। রিসেপশনিস্ট হিসেবে যোগ দিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর হয়েছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। তদন্তে নেমে দেবযানীর নামে ঢাকুরিয়ার দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে দু’টি অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে পুলিশ। দুই অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকার বেশি জমা আছে বলেও জানতে পেরেছে তারা। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে গত কয়েক বছরে লেনদেন হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই ওই অ্যাকাউন্ট দু’টি ‘ফ্রিজ’ করে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে যাবতীয় লেনদেনের হিসেব চেয়েছে তদন্তকারী দল।
ঢাকুরিয়ার ওই অঞ্চলটিতেই দেবযানীর বাড়ি। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মুখার্জিপাড়ার হরিণবাড়ি এলাকায়। ২০০৬ সালে চাকরি পাওয়ার বছর দুয়েক পরেই তিনি ৪৮ ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। ওই বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ৬৮ ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। অভিযোগ, এই বাড়িতেই সংস্থার জরুরি বৈঠক করতেন তিনি। ওই আবাসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেই সব বৈঠক চলত গভীর রাত পর্যন্ত।
এই সব তথ্য থেকে পরিষ্কার, সারদা গোষ্ঠীতে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন দেবযানী। পুলিশি জেরার মুখে তিনি মেনেও নিয়েছেন, সারদার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু আর্থিক বিষয়ে সুদীপ্তবাবুই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, শিলিগুড়ির লিঙ্কন স্কুল, মালদহের নির্মীয়মান আন্তর্জাতিক স্কুলটির যাবতীয় ভার তাঁর উপরই ছিল বলে দেবযানী তাঁদের জানিয়েছেন।
দেবযানীর উপরে কতটা ভরসা করতেন সুদীপ্ত? পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, সুদীপ্তবাবুর ছোট বউ পিয়ালি সেনের একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। দেখা যাচ্ছে, সেই অ্যাকাউন্টে যা টাকা রয়েছে, দেবযানীর অ্যাকাউন্টে রয়েছে তার থেকে ঢের বেশি। এক কর্তার কথায়, এর থেকেই সব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
সে কারণে দেবযানীর জবানবন্দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীরা এখন জানতে চাইছেন, দেবযানীর অ্যাকাউন্টে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা কি তাঁর উপার্জিত অর্থ, নাকি আমানতকারীদের টাকা এ ভাবেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সরিয়েছিলেন সুদীপ্ত? কর্তাদের ব্যাখ্যা, সেই খোঁজ পেতেই ওই দু’টি অ্যাকাউন্টের যাবতীয় লেনদেনের হিসেব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেবযানীর নামে এমন আরও কিছু অ্যাকাউন্টেরও খোঁজ করা হচ্ছে।
পুলিশি জেরার মুখে কেমন আছেন দেবযানী? তদন্তকারীরাই জানিয়েছেন, যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ তিনি। পুলিশ যা জানতে চাইছে, জানাচ্ছেন। তবে তার বাইরে গিয়ে আগ বাড়িয়ে অতিরিক্ত কিছুও বলছেন না। এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছেন দেবযানী। তাঁর বয়সে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এখনও ‘সেন স্যার’ এবং ‘ম্যাডাম’-কে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা হয়নি। প্রথমে সুদীপ্তবাবুকে জেরা করে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা দেবযানীকে জেরা করে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত অন্য দুই কর্তা মনোজ নেগেল আর অরবিন্দ চৌহানও পুলিশকে তথ্য জোগাচ্ছেন।
কেন দেবযানীর জবানবন্দির উপরে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ? তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুদীপ্ত সেনের যাবতীয় সম্পত্তির ঠিকানা বিশদে জানেন দেবযানী। কারণ, কোনও সম্পত্তি কেনা হলেই দলিলের একটি প্রতিলিপি তাঁর কাছে পাঠাতেন সুদীপ্ত। দলিলটি সযত্নে রাখার দায়িত্বও ছিল দেবযানীর। সারদার সদর দফতর মিডল্যান্ড পার্ক থেকে যে সব সম্পত্তির দলিল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক সম্পত্তিই দেবযানীর নামে কেনা। এর বাইরে বেনামি সম্পত্তি কোথাও আছে কি না, দেবযানীকে জেরা করে তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দরা জানান, সংস্থার কাজকর্মে দেবযানীর নিষ্ঠা ছিল চোখে পড়ার মতো। তা নজরে আসার পরেই সিএমডি তাঁকে সারদার দ্বিতীয় পদে তুলে নিয়ে আসেন। পুরস্কার দেন অন্য ভাবেও। ঢাকুরিয়াতে যে বাড়িটি কিনেছিলেন দেবযানী, তাকে সাজাতে খরচ করা হয় আরও প্রায় এক কোটি টাকা। আর যে ভাড়া বাড়িতে সংস্থার বৈঠকগুলি করতেন দেবযানী, সেখানে ঢোকা-বেরনোর সময় নিরাপত্তারক্ষীর হাতে একশো-দু’শো টাকা গুঁজে দিতেন।
এ হেন দেবযানীর কাছেই ছিল সারদা মালিকের যাবতীয় টাকাপয়সার হদিস। গোয়েন্দারা বলছেন, সে কারণেই সিবিআইকে চিঠি লিখে কলকাতা থেকে উধাও হওয়ার পরেও সুদীপ্ত কিন্তু দেবযানীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁর ডাকেই প্রথমে যেতে না চেয়েও পরে কাশ্মীর পাড়ি দেন দেবযানী। এবং সে কারণেই সিবিআইকে লেখা চিঠিতে তাঁর প্রসঙ্গে একটি লাইনও লেখেননি সুদীপ্ত।
টাকার হদিস পেতে ‘ম্যাডাম’ই তাই তুরুপের তাস গোয়েন্দাদের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.