এসি চলছে, জ্বলছে আলো, টেবিলে চায়ের কাপ
শূন্যপুরী!
সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ডিএন ২৯/৪এ এবং ৩০ নম্বর ঠিকানায় পাশাপাশি দু’টি অফিসবাড়ি। তাদের চার তলায় সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ঢুকলে এই শব্দটাই মনে পড়বে।
সারদার সদর দফতর অবশ্য এটা নয়। তার নাম মিডল্যান্ড পার্ক। সেখানে এখন আর ঢোকার উপায় নেই। মূল গেটের সামনেই বিজ্ঞপ্তি টাঙানো, ‘‘বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স থানার অনুমতি ছাড়া ভিতরে ঢোকা যাবে না।’’ উপরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই বাধা দিলেন দুই পুলিশকর্মী।
কিন্তু ডিএন ২৯/৪এ আর ৩০ নম্বরে নিষেধাজ্ঞার বালাই নেই। সিঁড়ি দিয়ে দিব্যি চারতলায় ওঠা গেল। তালাবন্ধ দরজাগুলোর সামনে পড়ে লগ্নির ফর্ম, সারদা লেখা খাম। একটা কাচের দরজায় তালা নেই। হাত দিতেই খুলে গেল। পায়ে ঠেকল একটি উল্টোনো চেয়ার। কিছুটা এগোতেই দেওয়ালে লাগানো ‘আই কার্ড পাঞ্চিং মেশিন’। মেশিন চালুই রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরটার ভিতরে হালকা একটা ঠান্ডা ভাব। চারদিকে আলো জ্বলছে। কিন্তু আমি আর সঙ্গী চিত্রসাংবাদিক ছাড়া কাকপক্ষী নেই!
এখন শূন্য। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে সারদা গোষ্ঠীর অফিস।
এক দিকের দেওয়ালে ঠাকুর-দেবতার ছবি। শুকনো মালা। ছোট ছোট কিউবিকলে চেয়ার উল্টে পড়ে। প্রায় সব টেবিলের ড্রয়ারই অর্ধেক খোলা। ভিতর থেকে উঁকি মারছে কাগজপত্র, স্টেপলার, পাঞ্চিং মেশিন, মার্কার পেন। মেঝেয় পড়ে বেশ কয়েক জন কর্মীর পরিচয়পত্র। টেবিলের উপরেও কাগজপত্র, ফাইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। দু’একটি খোলা পাতায় চোখ বুলিয়ে বোঝা গেল, আমানতকারীদের অ্যাকাউন্টের হিসেব লেখা রয়েছে। কোনও টেবিলে পড়ে চায়ের কাপ। কিন্তু কী আশ্চর্য, একটাও কম্পিউটার নেই! সব লোপাট!
আর এক প্রান্তের কেবিনে আলো জ্বলছে। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, বিলাসবহুল সোফাগুলি পড়ে রয়েছে। টেবিলের উপর উল্টোনো সিপিইউ, টেলিফোনের রিসিভার ঝুলছে।
ক্যান্টিনের বৈদ্যুতিন ওভেনের উপর বসানো রয়েছে জল-ভর্তি কেটলি। টেবিলের উপর ছড়ানো চায়ের কাপ, প্লেট। চা পাতা, গুঁড়ো দুধ। বোঝা গেল, এখানেও এজেন্ট ও আমানতকারীরা তাণ্ডব চালিয়েছেন।
প্রায় কুড়ি মিনিট পরে অফিস থেকে বেরোতেই দেখা হল অন্যান্য তলার কর্মীদের সঙ্গে। “দেখতে এসেছেন?” উত্তর দেওয়ার আগেই ফের সরব তাঁরা, “রাতে বাড়ি যাওয়ার সময়ে দেখতাম অফিস চলছে, সকালে এসেও দেখতাম অফিস চালু। প্রথমে ভেবেছিলাম, বিপিও। পরে শুনলাম, তা নয়।” সুদীপ্ত সেন মাঝে-মধ্যেই আসতেন, জানালেন ওঁরাই।
পড়ে আছে অগোছালো ফাইলপত্র।
৬৪ নম্বর শেক্সপিয়র সরণির পাঁচ তলা বাড়িটার অবস্থাও প্রায় একই। এক তলায় সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস্-এর অফিস। দরজায় তালা। কিন্তু এখান থেকেই যে হিমাচল, কাশ্মীর, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্যাকেজের ব্যবস্থা হত, তা জানান দিচ্ছে একটি গ্লোসাইন বোর্ড। এক তলা থেকে দোতলায় উঠতেই (এখানে সারদার কিছু নেই) এক আসবাবপত্রের দোকানের কর্মী লক্ষ্মীনারায়ণ দাস বলেন, “অফিস দেখতে এসেছেন?” বললাম, “হ্যা।ঁ আমরা সাংবাদিক।” প্রবীণ বলেন, “১৫-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মীদের আসতে দেখেছি। তার পর থেকে সব ফাঁকা। এখন মাঝে-মধ্যে এজেন্ট ও আমানতকারীরা আসেন।”
প্রবীণের সঙ্গে কথা চলাকালীনই একটি কণ্ঠ ভেসে এল, ‘‘দেখলেন তো, অফিস পুরো বন্ধ। কোথা থেকে টাকা দেব বলুন!’’ বলতে বলতেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন দুই ব্যক্তি। এক জন সারদার এজেন্ট। এক আমানতকারীকে অফিসটা দেখাতে এনেছেন। তিন তলায় রয়েছে সারদা এডুকেশনাল এন্টারপ্রাইজ। যেখানে এজেন্ট আর আমানতকারীদের ভিড়ই লেগে থাকত বলে জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। চার তলায় রয়েছে সারদা এক্সপোর্ট অফিস। অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়ির মালিক এস রহমান বললেন, “ডিসেম্বরের পর থেকে আর ভাড়া পাইনি। এখন তো তালা দেওয়া। ভাঙতেও পারব না।”
—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.