সারদা গোষ্ঠীর বেআইনি কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না বলে দাবি করেছেন ওই ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থার এক সময়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
এক সময়ের দুঁদে পুলিশকর্তা। ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সদর)। হয়েছিলেন আইজি (দক্ষিণবঙ্গ)। অবসরের পরে সিপিএম বিধায়ক। এবং বিধায়ক-পদে থাকতে থাকতেই সারদার নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন। তাদের সঙ্গে আড়াই বছর ছিলেন দেবেনবাবু।
আর এক আইপিএস অফিসার রজত মজুমদারও ওই সংস্থায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর দাবি, অনৈতিক কাজের সঙ্গে আপস করবেন না বলেই তিনি সারদা গোষ্ঠী থেকে পদত্যাগ করেন। রজতবাবু সারদায় কাজ করেন মাত্র ১১ মাস। কিন্তু ওই সংস্থায় আড়াই বছর কাজ করার পরেও নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দেবেনবাবুর চোখে কোনও অনিয়মই ধরা পড়ল না কেন? “সংস্থার অফিসে আমার নিয়মিত যাওয়ার দরকার হত না। রক্ষী অথবা নিরাপত্তা অফিসার নিয়োগের সময় আমাকে সারদার সল্টলেকের অফিসে ডাকা হত। ওড়িশা, দিল্লিতেও গিয়েছি ওদের কাজে। তবে ওদের কী কী ব্যবসা রয়েছে, সেখানে কী কী কাজ হয় তা জানার কোনও অবকাশ হয়নি আমার। এখন তো দেখতে পাচ্ছি, কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে পড়েছে,” জবাব দেবেনবাবুর।
সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঠিক কত দিনের? দেবেনবাবু বলেন, “সেটা ২০০৯ সালের জুলাইয়ের কথা। বাম আমল। আমি তখন রানাঘাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সারদা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গুণিজন সংবর্ধনার ব্যবস্থা হয়েছিল। মঞ্চে ছিলাম আমি। আর ছিলেন মদন মিত্র। মদনবাবু তখন তৃণমূলের বিধায়ক। আমরা দু’জনে মিলে ওই অনুষ্ঠানে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলাম।”
এত বিধায়ক থাকতে সারদা গোষ্ঠী তাঁকেই মঞ্চে ডেকেছিল কেন?
দেবেনবাবুর জবাব, “তা বলতে পারব না। বিধায়ক হিসেবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ আসত। সারদা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কেন, তা বলতে পারব না।”
আমন্ত্রণের সময় জানতে চাননি, সারদা গোষ্ঠী কীসের ব্যবসা করে?
দেবেনবাবু বলেন, “জানতে চেয়েছিলাম। ওরা বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল তৈরির ব্যবসা করে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। তখন চিটফান্ডের ব্যাপারটা জানতামই না।”
ওই অনুষ্ঠানে কাদের কাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল?
সারদা গোষ্ঠীর প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা দেবেনবাবুর মন্তব্য, “অনুষ্ঠানে শিক্ষা, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া বিভিন্ন জগতের বেশ কিছু নামী ব্যক্তিকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল। তবে নামগুলো মনে নেই।”
কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন ডিসি (সদর) বলেন, “ওই অনুষ্ঠানেই সুদীপ্তবাবুকে (সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন) প্রথম দেখি আমি।” তবে তার পরে তিনি আর সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করেননি বলে দাবি দেবেনবাবুর।
তা হলে সারদা গোষ্ঠীতে তিনি চাকরি পেলেন কী ভাবে? দেবেনবাবু বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর এক আইনি পরামর্শদাতা আমার বন্ধু ছিলেন। ২০১০-এ তিনি আমাকে সুদীপ্তবাবুর কাছে নিয়ে যান। ২০০৯ সালের জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের পরে তখনই সুদীপ্তবাবুকে আবার দেখি। সেটাই আমাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। উনি আমাকে সংস্থার নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন।” ২০১২-র মাঝামাঝি সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানান দেবেনবাবু।
অন্য এক আইপিএস অফিসার রজত মজুমদার আগেই দাবি করেছেন, সারদা গোষ্ঠীর অনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে আপস করতে না-পেরেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার সঙ্গে দেবেনবাবুর সম্পর্ক ছিন্ন হল কেন? দেবেনবাবু বলেন, “আমার সঙ্গে ওরা (সারদা)-ই এক সময় যোগাযোগ করা ছেড়ে দেয়। আমাকে বোধ হয় ওদের আর প্রয়োজন ছিল না।” |