বাম-বিজেপির প্রস্তাব মানতে রাজি জয়রাম
বশেষে জমি বিল ঘিরে জট কাটার সম্ভাবনা দেখা গেল সর্বদল বৈঠকে। সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে বিলটি পাশ করাতে এক দিকে বিজেপি-র প্রায় সব সুপারিশই মেনে নিল সরকার। অন্য দিকে, কিছু বিষয়ে এখনও মতান্তর থাকলেও সিপিএমের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুপারিশ গ্রহণ করে বর্তমান বিলে সংশোধন আনতে রাজি হল তারা। সিপিএমের সুপারিশগুলির মধ্যে অন্যতম হল, অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু জমি মালিক নন, ক্ষতিপূরণ পাবেন বর্গাদাররাও।
এই সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার পরে জমি বিল পাশ হয়ে যাবে বলেই কেন্দ্র আশাবাদী। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশের কথায়, “সংসদ যদি ঠিকমতো চলে, তা হলে বিল পাশ হয়ে যাবে বলেই আশা করি।”
সংসদে জমি বিল পেশ করার আগে সর্বসম্মতি গড়ে তোলার চেষ্টায় আজ দ্বিতীয় দফায় সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্র। বৈঠক শেষে লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “বিজেপি-র ১১ দফা সুপারিশ মেনে নিয়ে বর্তমান বিলে সংশোধন আনতে রাজি হয়েছে সরকার। কেন্দ্র এটা করলে বিজেপি বিলে সায় দেবে।” সুষমার এই মন্তব্য জমি বিল নিয়ে গত সাত বছরের টালবাহানায় ইতি পড়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিজেপি-র সমর্থন পেলে জমি বিল পাশ করাতে সরকারকে বেগ পেতে হবে না।
বিজেপি কেন জমি বিলের সমর্থনে এগিয়ে এল, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, এ ব্যাপারে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকে চাপ রয়েছে। তা ছাড়া, বিলটির বিরোধিতা করলে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস তাদের কৃষক-বিরোধী তকমা দিয়ে প্রচারে নামতে পারে এমন আশঙ্কা বিজেপি নেতাদের রয়েছে।
একই ভাবে সংসদে আলোচনার সময় নানা বিষয়ে সমালোচনা করলেও বামেরাও হয়তো শেষ পর্যন্ত জমি বিলে সমর্থন জানাবেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল সূত্রেও এখন বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের জমি বিল নিয়ে তাঁদের নীতিগত আপত্তি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও চান বিলটি এ বার পাশ হয়ে যাক। কারণ তা না হলে রাজ্য নিজের জমি আইন চূড়ান্ত করতে পারছে না।
খসড়া জমি বিলে কী কী সংশোধনের সুপারিশ করেছে বিজেপি?
জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, তাদের মূল সুপারিশ দু’টি। প্রথমত, জমি অধিগ্রহণ করার বদলে কৃষকদের কাছ থেকে লিজ চুক্তিতে জমি নেওয়া হোক। এতে জমির মালিকানা কৃষকেরই থাকবে এবং জমি থেকে তাঁদের নিয়মিত আয় হবে। কেন্দ্র সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। যে হেতু জমি লিজের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত, তাই বর্তমান বিলে সংশোধন এনে বলা হবে, কোনও রাজ্য চাইলে লিজ চুক্তিতে জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারে।
বিজেপি এবং এনডিএ-র শরিক সংযুক্ত জনতা দল ও শিবসেনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল, ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের পর হস্তান্তর হওয়া জমি অধিগ্রহণ করলে মূল কৃষককেও ক্ষতিপূরণের ভাগ দিতে হবে। এই দাবির কারণ হিসেবে বিজেপি-র পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দিন সংসদে যে জমি বিল পেশ করা হয়, তাতে বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। সেটা দেখেই বহু ফাটকা ব্যবসায়ী এমন সব জায়গায় জলের দরে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনে রাখেন, যেখানে ভবিষ্যতে সরকারি বা যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প গড়ে উঠতে পারে। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা এখন ওই ফাটকা ব্যবসায়ীরাই পাবেন। এই ফাটকাবাজি ঠেকাতেই জমির মূল
মালিকদের ৫০% ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। বৈঠকের পর জয়রাম জানান, জমির মূল মালিক ক্ষতিপূরণের কত শতাংশ পাবেন তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির হবে। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
বর্গাদারদের ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে বামেদের দাবিও আজ মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। বিলের বর্তমান খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্গাদাররা কেবল পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা পাবে। কিন্তু সিপিএমের দাবি, বর্গাদারদের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। বর্গাদার ব্যবস্থা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে। ফলে রাজ্যের নিরিখে এই প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানিয়েছেন জয়রাম।
বামেদের অন্য যে সুপারিশে আজ কেন্দ্র সায় দিয়েছে সেটি হল, জাতীয় সড়ক, খনি, রেল ইত্যাদি-সহ আরও ১৩টি আইনের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হলে জমি বিলে উল্লিখিত হারেই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিতে হবে। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থা কার্যকর করবে তারা।
তবে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে একশো শতাংশ কৃষকের সম্মতি নেওয়ার প্রস্তাব যে মানা সম্ভব নয়, সে কথা বৈঠকে আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছেন জয়রাম। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক আর বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে প্রকল্প তৈরির খরচ বেড়ে যাবে। শিল্পে বিনিয়োগ টানতেও সমস্যা হবে।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) লগ্নি টানতে আজই তার জমির ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। বিভিন্ন ধরনের এসইজেড-এর ক্ষেত্রে এত দিন ন্যূনতম যে পরিমাণ জমি দরকার হতো, আজ তা কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা বলেন, “এসইজেডের যা সম্ভাবনা, তার পুরোটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। সেই কারণে এই নীতির কিছু সংস্কার করা হচ্ছে।” তবে এসইজেডে লগ্নিকারীদের অন্যতম বড় দাবি ন্যূনতম বিকল্প কর (ম্যাট) তুলে নিতে রাজি হয়নি কেন্দ্র।

পুরনো খবর:
পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.