খসড়ায় আপত্তি জানালেন কংগ্রেসি মন্ত্রীরাই
শিল্পায়ন ঘিরে সংশয়, ফের আটকাল জমি বিল
রিক, বিরোধীদের ওজর-আপত্তি নয়, কংগ্রেসের ঘরোয়া জটেই ফের আটকে গেল জমি বিল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য আজ জমি অধিগ্রহণ বিলের চূড়ান্ত খসড়া পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু কমল নাথ, সি পি জোশী, আনন্দ শর্মার মতো কংগ্রেসের শীর্ষ সারির মন্ত্রীদের আপত্তিতে তা সম্ভব হল না। ফলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জমি বিলের সর্বশেষ খসড়া ফের মন্ত্রিগোষ্ঠীর বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। গত ছ’বছরে এই নিয়ে চতুর্থ বার। যার অর্থ সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে অন্তত পাশ হচ্ছে না জমি বিল।
অথচ দেড় বছর আগে দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসোলে কৃষক অসন্তোষের পর রাহুল গাঁধী আশ্বাস দিয়েছিলেন, দ্রুত জমি বিল পাশ করা হবে। তাতে সায় দিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীও। আর আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ঘরোয়া আলোচনায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের আক্ষেপ, ‘এখন তো দেখছি তৃতীয় ইউপিএ সরকার এলেও জমি বিল পাশ হবে না!’
গত বছর জুলাই মাসে সংসদে ‘জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন এবং পুনর্স্থাপন বিল’ পেশ করা হয়। সেটি বিবেচনা করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কিছু দিন আগে রিপোর্ট পেশ করে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বিবেচনা করে বিলটির খসড়া ফের পরিবর্তন করেছেন জয়রাম। নতুন খসড়া বিলের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও সে জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপন বিল ২০১১’।
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই বিল নিয়ে আলোচনা শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিলটি আরও এক বার মন্ত্রিগোষ্ঠীর বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক। কারণ, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক বিলটি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আনন্দ শর্মা আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিলেন না। কিন্তু সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তিনি বলেছেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) পত্তনের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের নতুন হারে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের যে প্রস্তাব চূড়ান্ত খসড়ায় রয়েছে তা মানা সম্ভব নয়। আনন্দ শর্মা চেয়েছিলেন, এসইজেড-কে জমি বিলের আওতার বাইরে রাখা হোক। কিন্তু জয়রাম সেই দাবি মানেননি।
এ দিকে, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমল নাথ আজকের বৈঠকে বলেন, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে, তাতে শিল্পায়ন বা নগরায়ন আর সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহণ করার সময় যদি ক্ষতিগ্রস্ত সকলের মত নিতে হয়, আর সকলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তা হলে কোনও দিনই প্রকল্প শুরু করা যাবে না। একই মত প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী সি পি জোশী বলেন, নতুন বিল অনুযায়ী সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ করতে হবে, তাতে আর রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হবে না। তা ছাড়া খরচের ধাক্কাও হবে বিস্তর।
জমি বিল নিয়ে কংগ্রেসের মন্ত্রীরা আজ এতটাই সরব ছিলেন যে, শরিক দলের কোনও মন্ত্রী বৈঠকে কোনও মন্তব্য করেননি। কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার নীরব ছিলেন। বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, তিনি বিলটি পড়ে দেখার সময় পাননি। রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মুকুল রায় অবশ্য আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিলেন না। পরে তিনি বলেন, “বিলটি মন্ত্রিগোষ্ঠীর বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীতে আমি থাকব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানেই তৃণমূলের অবস্থান জানাব।”
সব মিলিয়ে জমি বিল যে ফের বিশ বাঁও জলে পড়ল তা নিয়ে সরকারের অনেকেরই কোনও সংশয় নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এ জন্য দায়ী কে? অনেক রাজনৈতিক নেতাই দায়ী করছেন কংগ্রেসকে। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে জমি বিল নিয়ে রাজনৈতিক সহমত প্রায় গড়ে উঠেছিল। নানা খুচরো আপত্তি তুললেও শেষ পর্যন্ত বিজেপি, বামেরা বিলটি লোকসভায় পাশ করানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করতে গড়িমসি করে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ভাট্টা পারসোল-সহ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক অসন্তোষের পর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জমি বিলকে আরও ‘মানবিক’ করে তুলতে গিয়েই জটিলতা বেড়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া ও তাঁদের ক্ষতিপূরণের যে সব শর্ত দেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাবে। যা পরিকাঠামো ও শিল্পের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। আবার মুশকিল হল, বিলটিকে এখন লঘু করতে গেলেও রাজনৈতিক বাধা আসবে।” ফলে সব মিলিয়ে জমি বিলের ভবিষ্যৎ যে ঘোরতর অনিশ্চিত, সেটা বলে দেওয়াই যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.