বিজেপির ‘জবাব’ সুবোধের চিঠি
সনিয়ার নিশানায় ‘ব্ল্যাকমেলের রাজনীতি’
ক্রমণের জমিটা গত কালই তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আজ রীতিমতো কামান দাগলেন সনিয়া গাঁধী। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে বিজেপি-কে ঝাঁঝালো আক্রমণ করলেন তিনি। কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়া আজ বলেন, “ব্ল্যাকমেলের রাজনীতিই এখন রুটিরুজি হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র। আবদার এমনই যে, বিজেপির মর্জি মতোই সংসদ চলবে! যা নিয়ে তাদের শরিকরাও উদ্বিগ্ন।” শুধু সংসদীয় দলের বৈঠকেই নয়, সংসদের মধ্যেও বিজেপি-র আক্রমণের মোকাবিলায় আজ আগ্রাসী ভূমিকা নেন সনিয়া। সংসদ মুলতবি না হওয়া পর্যন্ত লোকসভার প্রথম সারিতে বসে প্রতিআক্রমণে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি।
সনিয়ার আক্রমণের জবাব দিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দলও। আজ নতুন কিছু চিঠিপত্র প্রকাশ্যে এনে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সুর আরও চড়িয়েছেন সুষমা স্বরাজরা। কয়লা ব্লক বণ্টন করে কংগ্রেস কী ভাবে ‘মোটা মাল’ কামিয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন তাঁরা। জবাব দিয়েছেন কংগ্রেসের ‘ব্ল্যাকমেলের রাজনীতির’ অভিযোগেরও। এ ব্যাপারে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির কটাক্ষ, “বফর্সের সময় থেকেই কংগ্রেসের প্রধান খাদ্য ঘুষ! ওদের ব্ল্যাকমেল করার প্রশ্নই ওঠে না!”
আর দু’পক্ষের এই চাপানউতোরের পরিণাম আজও অচল সংসদ।
সর্বভারতীয় স্তরে যুযুধান দুই দলের চাপানউতোরের জেরে বাদল অধিবেশন যে জলে যেতে চলেছে, তা এখন সব পক্ষের কাছেই মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, কয়লা কেলেঙ্কারিকে ঘিরে লড়াইটা এখন অন্য মাত্রা পাচ্ছে। সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য, গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোটের তৎপরতা শুরু হয়ে যাবে। এই দুই রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকেই বড় হাতিয়ার করে উতরোতে চাইছে বিজেপি। কেন না হিমাচলে প্রেম কুমার ধুমল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া রয়েছে। আর গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার যতই উন্নয়ন করুন না কেন, এ বারের লড়াই আগের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন বলে মনে করছে বিজেপিরই একাংশ।
তা ছাড়া, এই মুহূর্তে কংগ্রেসের যা অবস্থা, তাতে তারা যদি হিমাচলে ক্ষমতা দখল করে বা গুজরাতে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারে, তা হলে বড় ধাক্কা খাবে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-বধের জন্য দুর্নীতিকেই ব্রহ্মাস্ত্র করতে তৎপর হয়েছেন সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলিরা।
এ দিন প্রথম ইউপিএ সরকারের জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের ভাইয়ের সংস্থার জন্য কয়লা ব্লক বণ্টনের নথিপত্রকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, ২০০৮-এর ৫ ফেব্রুয়ারি ভাইয়ের সংস্থার জন্য কয়লা ব্লক চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখেন সুবোধকান্ত। তার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ বিষয়ে চিঠি দেয় কয়লা মন্ত্রককে। বিজেপির অভিযোগ, গোটা ঘটনায় যে অস্বচ্ছতার প্রমাণ মিলেছে, তার পরে প্রধানমন্ত্রীর গদি আঁকড়ে থাকার কোনও অধিকারই নেই।
এই পরিস্থিতিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া কংগ্রেস অস্ত্র করছে পাল্টা আক্রমণকে। তাদের মূল লক্ষ্য দু’টি। প্রথমত, স্পেকট্রামের পর কয়লার দাগও যাতে গায়ে না লাগে, তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, আসন্ন দুই বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করে ঘুরে দাঁড়ানো। বস্তুত দলকে আজ সেই দিশাই দেখিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়া আজ বলেন, “রক্ষণাত্মক হওয়ার প্রশ্নই নেই। ইউপিএ সরকারের অনেক সাফল্য রয়েছে। তাই বিরোধীদের আক্রমণে কোনও ভাবে বিচলিত না হয়ে পাল্টা আক্রমণাত্মক হতে হবে।”
সকালে সংসদীয় দলের বৈঠকের পর বিকেলে ফের কংগ্রেস এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠক ডাকেন সনিয়া। সেখানেও তিনি বলেন, কংগ্রেসকে এখন ‘অল আউট’ আক্রমণে যেতে হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, দুর্নীতি মোকাবিলায় এত দিন নৈতিকতার কথা বলেছে কংগ্রেস। এ রাজা, কলমডীদের জেলে পাঠিয়ে নৈতিক ভাবে উঁচু জায়গায় থাকতে চেয়েছে। ওই নেতার কথায়, “সনিয়া এখন বুঝতে পারছেন, সেই পথে কাজ হবে না। বিজেপি-র সঙ্গে লড়াইটা রাজনৈতিক। বিজেপি কংগ্রেসকে চোর বললে কংগ্রেস নেতারাও তাদের পাল্টা চোর বলবে। কারণ, দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপি-র রেকর্ডও গোটা দেশ জানে।” কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, কয়লা ব্লক বণ্টনের বিষয় নিয়ে লড়াইয়ে বিজেপির পাশে নেই কোনও শরিক। কংগ্রেসের পক্ষে এটা কিছুটা হলেও সুবিধাজনক। বরং বিজেপি-কে আক্রমণের জন্য কংগ্রেস এখন নিজের শরিক-সমর্থকদের সাহায্য নিচ্ছে। যেমন আজ লালুপ্রসাদ যাদবকে বিজেপি-র সমালোচনায় নামিয়েছে কংগ্রেস। সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে লালু আজ বলেন, “সুষমাজি ‘মোটা মাল’ কামানোর কথা বলছেন। অথচ কর্নাটকের রেড্ডি ভাইয়েরা কী ভাবে ‘মোটা মাল’ কামিয়েছে, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে দেননি!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.