বনধে হত ২, আক্রমণ সংবাদমাধ্যমকেও
রপর দু’দিন বনধ। দু’দিনই উত্তপ্ত অসম।
সোমবার বজরং দলের ডাকা বনধে রাতের দিকে অশান্ত হয়ে উঠেছিল কোকরাঝাড়। মঙ্গলবার সারা অসম সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন বা আমসুর ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধে আগুন জ্বলল গোটা রাজ্যই। দু’দিনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জখমের সংখ্যা প্রায় ৫০। বন্ধ সমর্থকদের মার থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। তবে আমসু-র দাবি, সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় তারা জড়িত নয়।
কাল রাতে কোকরাঝাড়-চিরাংয়ে হিংসা ছড়ায়। রাত ১০টা নাগাদ প্রায় ৫০ সশস্ত্র দুষ্কৃতী ফকিরাগ্রামে হানা দেয়। নিরাপত্তারক্ষীরা হটাতে গেলে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাতে থাকে। পাঁচটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে, ১৬টি গ্রেনেড ছুড়ে দুষ্কৃতীরা পালায়। সেনাবাহিনী যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারে, সেই জন্য হামলার আগে সব ক’টি গ্রামের রাস্তায় গাছ ফেলে বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। শালাকাটি গ্রামে অগ্নিসংযোগের সময় তাদের ছোড়া গুলিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
সেনা-টহল। মঙ্গলবার তেজপুরে। ছবি: পিটিআই
আজ সকাল থেকে শুধু নামনি অসম আর বড়োভূমি নয়, উজানি অসম ও মধ্য অসমেও হাঙ্গামা ছড়ায়। বরপেটা রোডের খৈরাবাড়িতে বনধ সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে জ্ঞানেন্দ্র মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জখম ২৮। এদের মধ্যে দু’জন সাংবাদিক। গোয়ালপাড়া, তেজপুর, শিবসাগর, বাক্সা, মরিগাঁও, বরপেটা, নগাঁওতে সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণ হয়। প্রায় সাত সাংবাদিক জখম। সোনাইবালিতে পুলিশের সামনেই সংবাদপত্রবাহী একটি গাড়ি ভাঙচুর করে সহকারীকে মারধর করা হয়। তেজপুরে সার্কল অফিসারের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নগাঁওয়ের কলিয়াবর ও সামাগুড়িতে বনধ সমর্থকদের হাতে বহু মানুষ প্রহৃত হন। বেশ কিছু গ্রামে আগুন লাগানো হয়। কলিয়াবরের আমবাগানে দোকান খোলা রাখার দায়ে এক ব্যক্তিকে কোপানো হয়।
লাহরিঘাটে এ দিন খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আধা সেনার মারে জখম হন এক সাংবাদিক। চলন্তপাড়া, কাবাইতারি, যোগীঘোপায় বন্ধ সমর্থক ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে তিন জন জখম হন। ডিব্রুগড়, যোরহাট ও শিবসাগরেও বনধ সমর্থক ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। শিবসাগরে কে পি চারিয়ালি ও দিখৌ সেতুর কাছে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। ধুবুরি-গোলোকগঞ্জ শাখায় আমসু রেলপথ অবরোধ করে। ধুবুরি-ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন দু’ঘণ্টা আটকে থাকে। প্রায় ৫০০ বন্ধ সমর্থনকারী, লাইনের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ট্রেনে পাথর ছোড়েন। পাথরের ঘায়ে বেশ কিছু ট্রেনযাত্রী জখম হন।
কাল রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গে বৈঠকে, বড়োল্যান্ড স্বায়ত্তশাসিত জেলার প্রধান হাগ্রাম মহিলারি, বড়োভূমির আইন-শৃঙ্খলার ভার পরিষদের হাতে দেওয়ার দাবি করেছিলেন। অসমের ডিজির সঙ্গে কথা বলে শিন্দে রাজ্যের পরিস্থিতির খবর নেন। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের মতে, গোসাইগাঁও, শালাকাটি ও বিজনিতে সশস্ত্র জঙ্গিদের তিনটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে। যদিও রঞ্জনপন্থী এনডিএফবি -র দাবি, সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পর থেকে তারা হিংসার রাস্তায় হাঁটছে না। সংখ্যালঘুদের কোনও ভয়ও তারা দেখায়নি। আজ থেকেই বড়োভূমিতে সেনা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। বড়োভূমিতে মোট ১৬০ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে গত কাল রাতে কোকরাঝাড় গিয়েছিলেন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। আজ তিনি ও নীলমণিসেন ডেকা বরপেটা যান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সাত মন্ত্রী ও দুই সংসদীয় সচিব এখন বড়োভূমিতে রয়েছেন। লাগাতার সংঘর্ষ নিয়ে নাজেহাল মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে, সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছে সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানান। বিজেপি ও এআইইউডিএফ-এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গত মাস থেকে রাজ্য এক তীব্র সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি এই ভাবে প্ররোচনা দিতে থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়।” সর্বদলীয় বৈঠকে সব দলই রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গগৈ অভিযোগ করেন, “অনেকেই সে কথা রাখছেন না।”

সনিয়ার উদ্বেগ
কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি তীব্র উদ্বেগ ব্যক্ত করেন সনিয়া গাঁধী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা যে ভাবে আক্রমণের নিশানা হয়েছেন, সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনও সরকারই এমন ‘বিশ্বাসঘাতী আচরণ’ বরদাস্ত করতে পারে না। ‘প্ররোচনামূলক বক্তব্য’ এবং ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ’ করেছে যারা, সেই দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিজেপি যে ভাবে গোটা বিষয়টাকে দেশীয়-বহিরাগত সংঘর্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে, তার সমালোচনা করে সনিয়া বলেন, “এখন পরস্পরের দিকে আঙুল তোলার সময় নয়।” দেশের আর সমস্ত নাগরিকের মতোই উত্তর-পবর্হের মানুষেরও দেশের যে কোনও জায়গায় নিরাপদে থাকার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.