মারুতি সুজুকি-র বার্ষিক সভাতেও উঠল মানেসর কারখানায় হিংসাত্মক গোলমালের প্রসঙ্গ। মঙ্গলবার সেখানে কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলেন সংস্থার চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব। শীঘ্রই মানেসর কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংস্থার অংশীদারদের ভার্গব জানালেন, মানেসরে আগামী দিনে যে লগ্নির প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিয়েছেন, তা থেকে পিছু হটছেন না তাঁরা। সভায় উপস্থিত ছিলেন সুজুকি মোটরের চেয়াম্যান ওসামু সুজুকি-ও।
কারখানাটিতে বার্ষিক সাড়ে পাঁচ লক্ষ গাড়ি তৈরি করা গেলেও এখন দৈনিক ১০০টির-ও কম গাড়ি তৈরি হচ্ছে। শীঘ্রই পুরোদমে উৎপাদন শুরুর আশ্বাস দিলেও স্পষ্ট করে দিনক্ষণ কিছু জানাননি তিনি। মানেসরে গাড়ি তৈরির ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজেলের একটি নয়া ইঞ্জিন কারখানা এবং গবেষণা কেন্দ্র গড়তে ২০১৪-এর মধ্যে ২৬০০ কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা নিয়েছে মারুতি। তা কাটছাঁটের কোনও ভাবনা তাঁদের নেই বলে সভায় জানান ভার্গব। পাশাপাশি, গুজরাতে নতুন কারখানা গড়তে লগ্নি করা হবে ৪ হাজার কোটি টাকা।
মাসখানেক আগে মানেসর কারখানায় গোলমালের ঘটনায় সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার অবনীশ কুমার দেবের মত্যু হয় ও শতাধিক কর্মী জখম হন। ওই ঘটনার পিছনে শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে শিল্প-বিরোধের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভার্গব এ দিন দাবি করেন, সে সময়ে ইউনিয়নের কোনও বকেয়া দাবি-দাওয়া ছিল না। তাঁর কথায়, “গোটাটাই আগাম চক্রান্ত করে ঘটানো হয়েছে। শুধু মারুতি নয়, ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।” তবে শিল্প-সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। ভার্গব বলেন, “কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি প্রয়োজন।” যদিও গোলমালে নিহত অবনীশ কুমারের সঙ্গে ইউনিয়নের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল ছিল বলে দাবি করেছেন মারুতির ওই শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, “ভাগ্যের পরিহাস, শ্রমিকদের হাতেই তাঁর মৃত্যু হল।”
এখনই অবশ্য কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল করতে রাজি নন মারুতি কর্তৃপক্ষ। পুলিশি পাহারার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনীও সেখানে মোতায়েন করেছে মারুতি। ভার্গব ফের জানান, যতক্ষণ না তাঁরা সকলের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হচ্ছেন, ততক্ষণ তা প্রত্যাহার করা হবে না।
পেট্রোলের চড়া দামের কথা মাথায় রেখে আরও বেশি ডিজেল গাড়ি তৈরির বিষয়টি ভেবে দেখছে সংস্থা। গাড়ি শিল্পের হিসেবে, দেশের বাজারের ৩৮.৬১% মারুতির দখলে। ভার্গব জানান, ৪০% বাজার দখল করতে হলে আরও বেশি ডিজেল গাড়ি এবং ইঞ্জিন তৈরির ক্ষমতা থাকা জরুরি। বিশেষ করে এখনকার মতোই আগামী দিনেও কেন্দ্রের জ্বালানি নীতি একই থাকলে পেট্রোলের চেয়ে ডিজেল গাড়ির চাহিদা আরও বাড়বে। ফলে ব্যবসা বাড়াতে সেই মতো প্রস্তুতি নিতে হবে গাড়ি শিল্পকে। যেমন ২০১১-’১২ সালে ডিজেল গাড়ির বিক্রি ৩৭.৪% বাড়লেও পেট্রোল গাড়ির বিক্রি কমেছে ১৩.৭%। মারুতি-সুজুকির এমডি এবং সিইও শিনজো নাকানিশি প্রসঙ্গত জানান, ছোট গাড়ি অল্টো-র সিএনজি-চালিত মডেল ‘কে ১০’ তৈরির কথা ভাবছেন তাঁরা। |