রাজ্যে খরা কবলিত এলাকা ঘোষণার প্রশ্নে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে ঝাড়খণ্ডের জোট সরকারে। আমলাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত কাল সন্ধ্যায় রাজ্যের ছ’টি জেলাকে খরা কবলিত ঘোষণার প্রস্তাব গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আজ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তোপ দেগেছে সরকারের অন্যতম শরিক, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আজ জেএমএম নেতৃত্বের ঘোষণা: “আমলা নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। শুধু ছ’টি জেলা নয়, সারা রাজ্যকেই খরা কবলিত বলে ঘোষণা করতে হবে।”
দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আজ জেএমএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র সুপ্রিয় ভটাচার্য বলেন, “আজ দুপুরে জেএমএম-এর চার মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী অজুর্ন মুন্ডার বাসভবনে গিয়ে দলের সিদ্ধান্তটি জানিয়েও এসেছেন।” জেএমএম-এর মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন: জনগণের কাজে আমলানির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে সরকারের শরিক দলগুলিকে। জেএমএম সূত্রের খবর, গত কাল সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে অল্প বৃষ্টির কারণে উদ্ভুত খরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ডাক না-পাওয়াটাই জেএমএমের ক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের সব জেলার বৃষ্টিপাত এবং কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়খণ্ডের ছ’টি জেলাকে খরা কবলিত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জেএমএম গোটা রাজ্যকেই খরা কবলিত ঘোষণার দাবি তোলায় আজ গোটা পরিস্থিতিটাই বদলে গিয়েছে। বিড়ম্বনায় পড়েছে প্রশাসন। কারণ বৃষ্টিপাতের পরিমাণের নিরিখে এখনও গোটা রাজ্যকে খরা কবলিত ঘোষণা করার মত পরিস্থিতি হয়নি বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। পটনার আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা আশিস সেন জানিয়েছেন, কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার কারণে খরা কবলিত ঘোষণা তখনই হতে পারে, যখন সেই রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ১৯ শতাংশ কম হবে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণের হিসেবে এখনই গোটা ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে খরা কবলিত বলা যায় না। কারণ ২৭ অগষ্ট পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধরা হয় ৮১১ মিলিমিটার। হয়েছে ৭১৮ মিলিমিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিকের থেকে ১১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে আশিসবাবু জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের ছ’টি জেলার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। রাজ্যের কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী এবার অল্প বৃষ্টির কারণে চাষের মারাত্মক ক্ষতিও হয়েছে ঝাড়খণ্ডের এই ছ’টি জেলায়। জেলাগুলি হল: দেওঘর, সাহেবগঞ্জ, পশ্চিম সিংভূম, দুমকা, গুমলা এবং গোড্ডা। আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেওঘর, সাহেবগঞ্জ এবং পশ্চিম সিংভূম জেলায় ২৭ অগষ্ট পর্যন্ত স্বাভাবিকের থেকে ৩১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত দুমকা জেলায় ২৭ শতাংশ, গুমলা জেলায় ২২ শতাংশ এবং গোড্ডা জেলায় ২০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। |