|
|
|
|
শিশুকে ধর্ষণ করে খুন, মাকেই পেটাল পুলিশ |
সংবাদসংস্থা • আলিগড় |
বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, তাঁদের ছ’বছরের মেয়েকে কেউ ধর্ষণ করে খুন করেছে। এফআইআর করতে তাঁরা গিয়েছিলেন নিকটবর্তী থানায়। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কথা শুনতে চায়নি। প্রতিবাদে এলাকার মানুষ আলিগড়ের বান্না দেবী থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এই সময় মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ। প্রথমে তারা শূন্যে গুলি ছোড়ে। তার পরে মা এবং তাঁর সঙ্গীদের উপরে চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে। ঘটনাস্থলে কোনও মহিলা পুলিশও ছিলেন না। এই ঘটনায় সাত জন জখম হয়েছেন।
টিভি ফুটেজে সারা দেশ এই ঘটনা দেখার পরে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন সকলে। পরিস্থিতি কি মায়াবতীর আমল থেকেও খারাপ হয়ে গিয়েছে এ প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব মুখ খোলেন। ঘটনার কথা জানার পরে তাঁর যে খুব খারাপ লাগছে, সে কথা জানিয়ে অখিলেশ বলেন, “আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসন অবশ্য এর মধ্যেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এলাকার ডিএসপি-কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের যে সার্কেল অফিসার নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত বলে টিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তাঁকে তো বটেই, আরও দুই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? |
|
মেয়ের খুনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিগৃহীতা হলেন মা। ছবি: পিটিআই |
বুধবার রাত থেকেই নিখোঁজ ছিল ওই ছ’বছরের শিশুটি। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, আলিগড়েরই নাগলা কালার এলাকায় ময়লা ফেলার জায়গায় শিশুটির দেহ পড়ে আছে। দেহটি উদ্ধার করার পরে পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পরিবারের তরফে পরে বলা হয়েছে, অভিযোগ জানাতে তাঁরা যখন বান্না দেবী থানায় যান, পুলিশ প্রথমেই তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এফআইআর তো নিতেই চায়নি, উল্টে তাঁদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। এই ঘটনায় এলাকার মানুষ খেপে যায়। উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে। বিক্ষোভের মুখে পড়ে ভিড় সরাতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তার পরে চলে লাঠিপেটা। শিশুটির মা তো বটেই, তাঁর সঙ্গী অনেক মহিলাকেই নির্বিচারে পেটায় পুলিশ। বিভিন্ন খবরের চ্যানেলে দেখা গিয়েছে, লাল পোশাক পরা মাকে লাঠিপেটা করছে পুলিশ। আবার দেখা গিয়েছে, সাদা পোশাকের এক মহিলাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছেন সার্কেল অফিসার এ কে সিংহ। পরে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে আলিগড়-দিল্লি জিটি রোড কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর প্রথমে আলিগড়ের ডিআইজি জানিয়েছিলেন, শূন্যে গুলি চালানোর খবর তাঁর কাছে নেই। তবে টিভি ফুটেজে তারও প্রমাণ মিলেছে।
গত ৯ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের বুলন্দসহরে মহিলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল দশ বছরের নাবালিকা। কিন্তু তাকেই বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য লক আপে পুরে দেন থানার অফিসারেরা। পরে স্থানীয় মানুষের রোষের মুখে পড়ে তাকে ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। পরপর ঘটনাগুলি দেখে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে বহু থানা এলাকাতেই গড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষ থাকেন। কিন্তু তাঁদের জন্য মাত্র ২০০ জন করে পুলিশ। আগের সরকার এ ভাবেই রাজ্য চালিয়েছে। তাঁরা যে থানা বাড়াবেন, পুলিশের ব্যবহার বদলাতে, তাদের আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সে কথাও এ দিন জানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
|
|
|
|
|
|