পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু
নিগ্রহে ব্যবস্থা চাই, দলে চাপ কেরল শিবিরেরও
ঙ্গ ব্রিগেডের চাপ ছিলই। দিল্লি-কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ বার দলের অন্দরে চাপ সৃষ্টি শুরু করল সিপিএমের কেরল শিবিরও। একই সঙ্গে তৃণমূলের তরফে সুর চড়া করার প্রেক্ষিতে যোজনা কমিশনের সামনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দিল্লি পুলিশও। এবং এ সবের নিট ফলে দিল্লি-কাণ্ডে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই মুহূর্তে প্রবল চাপে সিপিএম নেতৃত্ব।
যোজনা কমিশনের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত ছিলেন, এমন অন্তত পাঁচ জন নেতা-কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল দলীয় স্তরে। তাঁরা সকলেই সিপিএমের দিল্লি রাজ্য কমিটির আওতাধীন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তাই নিতে হবে দিল্লি রাজ্য কমিটিকেই। নিগ্রহের ঘটনায় দলের নষ্ট হওয়া ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী আলিমুদ্দিন। সেই একই যুক্তিতে এ বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে চাপ তৈরি করছে পিনারাই বিজয়ন-শিবিরও। তবে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যায়, কেরল সিপিএমের এই যুক্তির নেপথ্যে অন্য অঙ্ক আছে। দলের ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকারক ঘটনা ঘটানোর দায়ে দিল্লির কিছু নেতা-কর্মীর যদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা হলে একই কারণে ভি এস অচ্যুতানন্দনের অনুগামীদের বিরুদ্ধে বকেয়া শাস্তির প্রক্রিয়াও সেরে ফেলতে সুবিধা হবে বলে মনে করছে বিজয়ন শিবির!
সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক দক্ষিণী সদস্যের কথায়, “রাজধানীর বুকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীকে শারীরিক নিগ্রহের যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে দল অনুমোদন করছে না। সেই মর্মে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে দেরি হলে এই বার্তাই মানুষের কাছে যেতে পারে যে, আমাদের ওই সব বিবৃতিই মেকী!” নিগ্রহ-কাণ্ডে প্রাথমিক ভাবে দিল্লি পুলিশের রিপোর্ট ছিল এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে অস্বস্তিকর। এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তদন্ত চলছে এবং সেই চাপে দিল্লি পুলিশও কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। সেই প্রেক্ষিতেই ওই দক্ষিণী নেতার যুক্তি, “এর পরে প্রশাসনিক ভাবে যদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দেখা যায় দলের তরফে তখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, তা হলে তো আরও মুখ পুড়বে!”
বস্তুত, নিগ্রহের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চেয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব দিল্লি গিয়ে সরব হওয়ার হুঁশিয়ারির দেওয়ায় এখন ভারসাম্যের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে ইউপিএ সরকারকেও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বুধবার কলকাতায় বলে গিয়েছিলেন, ওই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিশেষ সচিবের তদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সম্ভবত মমতা-সরকারের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমনের লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার শিন্দে দিল্লিতে এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ৬-৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চলে আসবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দিল্লি রাজ্য কমিটির দফতরে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দিল্লি পুলিশ।
এই অবস্থায় দু’দিক থেকে চাপে পড়েছে সিপিএমের দিল্লি রাজ্য কমিটি। অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার জন্য দলের ভিতর থেকেই চাপ বাড়ছে। আবার প্রশাসনিক ব্যবস্থার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। সিপিএম সূত্রের খবর, গত ৯ এপ্রিল অমিতবাবুর নিগ্রহের ঘটনার পরে রাজ্য কমিটির দফতরে লাড্ডু বিতরণ পর্যন্ত হয়েছিল! দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “প্রথমে দিল্লির নেতাদের ধারণা হয়েছিল, দারুণ বিক্ষোভ দেখিয়ে সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দেওয়া গিয়েছে! পরে তাঁরা বুঝেছেন, জল কোথায় গড়িয়েছে। যাঁদের অভিনন্দন জানানো হয়েছিল, এখন তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার অপ্রিয় কাজ করতে হবে!”
দিল্লির উপরে চাপ বাড়লেও দলের অভ্যন্তরে অবশ্য এখন ‘দায়মুক্ত’ হতে পেরেছেন এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। নিগ্রহের ঘটনায় তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন জানিয়ে বুধবারই ক্ষমা চেয়ে নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন ঋতব্রত। দলের অবস্থানও তা-ই। তবে রাজ্য সরকারের দায়ের-করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যদি প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেফতারও করে, রাজনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ে সিপিএম এই তরুণ নেতার পাশে থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নজরুল মঞ্চে তাঁর বুধবারের স্পষ্ট কথার জন্য আলিমুদ্দিন এবং এ কে জি ভবনের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সংগঠনের নিচু তলা থেকে একই রকম ইতিবাচক বার্তা এসেছে দলে।
দিল্লিতেই ১০ মে পলিটব্যুরো এবং ১১-১২ তারিখ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসছে। তার মধ্যে ব্যবস্থা না-হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সরব হতে চায় দলের একটি বড় অংশই। দিল্লি-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত তিন সদস্যের (এক বাঙালি নেতা-সহ) ভূমিকাতেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলে। ওই কেন্দ্রীয় নেতারা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে আলিমুদ্দিনে ২৯ এপ্রিল রাজ্য কমিটির বৈঠকে। সব মিলিয়ে সিপিএমের এখন উভয় সঙ্কট!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.