|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে, চাপ বিজেপিকে |
মোদীতে ‘না’, সিদ্ধান্ত ঘোষণার পথে জেডিইউ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা |
নরেন্দ্র মোদী প্রশ্নে এত দিন যে মনোভাব জানিয়ে এসেছেন নীতীশ কুমার, এ বার তাতে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিতে পারে তাঁর দল। সেই সঙ্গে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণার জন্য বিজেপির উপর চাপও বাড়াতে চলেছে জেডিইউ। মোদী যে ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেলে ধরতে শুরু
করেছেন, তার প্রেক্ষিতে নীতীশদের এই কৌশল তাৎপর্যপূর্ণ।
আগামী শনি ও রবিবার দিল্লিতে জেডিইউয়ের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। ওই বৈঠকেই মোদীর সম্পর্কে তাঁদের চূড়ান্ত অবস্থান প্রকাশ্যে বিজেপিকে জানিয়ে দিতে চাইছেন নীতীশরা। দলের নেতাদের বক্তব্য, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে তাঁরা যে এনডিএ শিবিরে থাকবেন না, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, সরকারি ভাবে বিজেপির কাছে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণার জন্য চাপ দেওয়া হবে। আজ অবশ্য মোদী প্রশ্নে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি দলের সভাপতি শরদ যাদব। শুধু জানিয়েছেন, “আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আগেও আপস করিনি। এখনও করব না।”
মাস কয়েক আগে একটি সাক্ষাৎকারে নীতীশ জানিয়েছিলেন, তাঁর দল এক জন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন করবে। স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল মোদীর দিকেই। ইদানীং মোদী জাতীয় রাজনীতি নিয়ে অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছেন। উপরন্তু বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি। বিজেপিতে সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে কেউই টিকতে পারবে না।” রাজনাথের এই কথাতেই প্রমাদ গুনেছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। তাই মোদী সম্পর্কে চূড়ান্ত অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে চাইছেন তাঁরা। বস্তুত, জেডিইউ নেতাদের অনেকের আশঙ্কা, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে পাশে পাওয়ার জন্য সরাসরি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করেই ভোটে লড়তে পারে বিজেপি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিজেপি যদি ভাল ফল করে মোদীর নেতৃত্বে সরকার গড়ে, তা হলে নীতীশের দল কী করবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, জেডিইউ শিবিরের বক্তব্য নির্বাচন হোক বা সরকার গঠন, দল কোনও ভাবেই মোদীর হাত শক্ত করবে না।
তবে বিজেপিতে মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর অনেকের দাবি, ভোটের আগে গুজরাতের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার পরিকল্পনা নেই। বরং ভোটের পর যদি দেখা যায়, বিজেপি ১৮০টি-র কম আসন পেয়েও শরিকদের নিয়ে সরকার গড়ার পরিস্থিতিতে রয়েছে, সে ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন ফের সামনে আসবে। সেই সময়ে মোদীর বদলে অন্য কোনও নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে কি না, তা ঠিক হবে নীতীশের মতো শরিক নেতাদের মতামতেরই উপর।
এমনিতেও নীতীশের অবস্থান বিজেপি নেতাদের অজানা নয়। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে জেডিইউয়ের বৈঠকের দিকেও নজর রাখছেন তাঁরা। দেখতে চাইছেন, গোটা বিষয়টি নীতীশ নিজে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। অনেক বিজেপি নেতা মনে করছেন, নীতীশের চেয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারাই মোদী নিয়ে বেশি হইচই করছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে হয়তো জেডিইউকে একটা প্রকাশ্য অবস্থান নিতে হতে পারে, কিন্তু নীতীশ এখনই বিজেপিকে নেতৃত্বের রক্তচাপ বাড়ানোর মতো কোনও বার্তা দেননি। বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারমণ বলেন, “জেডিইউ আমাদের বহু বছরের গুরুত্বপূর্ণ শরিক। তা ছাড়া নীতীশ কুমার গোড়া থেকেই কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলেছেন। আমরা জোট শরিকদের কদর করি”।
বিজেপির একটি সূত্রের খবর, জেডিইউ যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের কাছে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে জানতে চায়, তা হলে বিজেপি-ও জানিয়ে দেবে, এ নিয়ে দলে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সভাপতি রাজনাথ সিংহ কোথাও এই নিয়ে কোনও কথা বলেননি। নীতীশের আপত্তি না থাকলেও বিজেপি সর্বসম্মতিক্রমে নরেন্দ্র মোদীর নাম অনায়াসে ঘোষণা করতে পারত না। সুতরাং জেডিইউয়ের উচিত অপেক্ষা করা।
এই টানাপোড়েনে কংগ্রেস অবশ্য উজ্জীবিত। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “শুধু জেডিইউ কেন, এনডিএ-র বাকি শরিকদের কাছে কংগ্রেস জানতে চায়, তাঁরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে থাকবেন, নাকি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বাতাবরণকে মজবুত করবেন?”
|
পুরনো খবর: মোদীর পথে কাঁটা ছড়িয়ে কংগ্রেসকে বার্তা নীতীশের |
|
|
|
|
|