এখনই ঋতব্রতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না দিল্লি পুলিশ
যোজনা কমিশনের সামনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও অন্যদের উপর হেনস্থার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কেন্দ্রের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দিল্লি পুলিশের উপর এখনও তেমন কোনও চাপ নেই।
রাজ্য সরকারের তরফে দিল্লি পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জানানো হয়েছে, তাতে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, ঋতব্রতর নেতৃত্বেই পুরো ঘটনাটা ঘটেছে। উনি নিজেও শারীরিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও অমিত মিত্রকে হেনস্থা করেছেন। সুব্রতবাবু এ দিনও কলকাতায় বলেছেন, “যোজনা কমিশনের ওই গেট দিয়ে গত বছরও মমতা, আমি ঢুকেছিলাম। গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা থাকে। তা সত্ত্বেও ২৫-৩০ জনকে প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হতে দিল কেন পুলিশ?” তিনি এমনকী কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, “পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এমনই ইঙ্গিত করছে যে, এই বিক্ষোভের পিছনে কংগ্রেসের সমর্থন থাকতেও পারে।” রাজ্যের আর এক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ওই ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে।” বস্তুত, এ দিন কলকাতায় শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত তৃণমূল যুবার মিছিল হয়েছে। আবার বিড়লা তারামণ্ডল থেকে গাঁধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত তৃণমূল শিক্ষাসেলের নেতৃত্বেও মিছিল হয়।
সাংবাদিক বৈঠকে ঋতব্রত। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু দিল্লি পুলিশের তরফে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তাতে নির্দিষ্ট কারও নাম নেই। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নয়াদিল্লি) বি এস ত্যাগী বলেন, “ভিডিও ফুটেজ দেখে বের করার চেষ্টা করছি, কারা কারা এই ঘটনায় জড়িত ছিল।” সিপিএমের কোনও নেতাকে এখনও পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করার পথে হাঁটেনি দিল্লি পুলিশ। অন্য দিকে, সুব্রতবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তার পরেও সুব্রতবাবুর এই মন্তব্য রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার প্রকাশ।” দিল্লির রাজনৈতিক নেতৃত্বও মনে করছেন, ঘটনার পরে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী থেকে অর্থমন্ত্রী, সকলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং মমতা-অমিতের খোঁজখবর করেছেন, তার পরে আর এই অভিযোগের বিশেষ ধার থাকে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও তাই দিল্লি পুলিশের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করছে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ‘ধীরো চলো’ নীতি নিচ্ছে দিল্লি পুলিশ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, দিল্লি পুলিশ নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তাতে স্পষ্ট ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশি সতর্কতায় কান না দেওয়াকেই দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে ভিআইপি গেট দিয়ে যোজনা কমিশনের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তিনি সেই পথে হাঁটেননি। মুখ্যমন্ত্রী আগাগোড়া অক্ষত ছিলেন বলেও পুলিশের দাবি। এর পরেও কাউকে ধরপাকড় করা হলে দিল্লি পুলিশের ঘাড়েই দায় এসে পড়বে বলে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের মত। সে ক্ষেত্রে কেন দোষীদের বিরুদ্ধে ঘটনাস্থলেই ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজ্য সরকারের তরফেও নতুন করে পুলিশের গাফিলতির নিয়ে আঙুল তোলা হতে পারে।
দিল্লি পুলিশের একটা বড় অংশ আবার মনে করছে, এই ধরনের বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার করতে গেলে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষকে ধরতে হয়। কারণ দেশের রাজধানী হওয়ার সুবাদে রোজই কিছু না কিছু বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে দিল্লিতে। সেখানে পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তিও হয়। কিছু দিন আগে দিল্লিতে গণধর্ষণের প্রতিবাদেও দিনের পর দিন বিক্ষোভ হয়েছে। যন্তর মন্তরে খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে বিক্ষোভকারীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল। পুলিশকর্মীররা কোনও রকমে তাঁকে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দেন। সেই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে বিক্ষোভ আরও মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
এ ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়েছে বলে দিল্লি পুলিশের কর্তাদের বক্তব্য। তাঁদের যুক্তি, এমনিতেই যোজনা কমিশনের ঘটনার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে গণ্ডগোল চলছে। তৃণমূল সিপিএমের উপরে হামলা চালাচ্ছে। এখন দিল্লিতে সিপিএমের ছাত্র নেতাদের গ্রেফতার করতে গেলে তারও পাল্টা প্রতিক্রিয়া হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি দিল্লিতেও বিক্ষোভে নেমে পড়তে পারে ছাত্রছাত্রীরা। সে জন্যই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
তবে যে সব অপরাধে মামলা হয়েছে, তাতে সিপিএমের কোনও নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে লাভ হবে বলে মনে করছেন না পুলিশ-কর্তারা। ওই দিনের ঘটনায় যে এফআইআর হয়েছে, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ ধারা (দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানো), ১৮৬ ধারা (সরকারি ব্যক্তিদের কাজে বাধা দেওয়া), ৩৩২ ধারা (সরকারি ব্যক্তিদের কাজের সময় আঘাত পৌঁছনো) এবং ৩৫৩ ধারায় (সরকারি ব্যক্তিদের উপর কাজের সময় হামলা) মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটিই জামিনযোগ্য অপরাধ। কাজেই গ্রেফতার করলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই সিপিএমের নেতারা ছাড়া পেয়ে যাবেন। দিল্লি পুলিশের বক্তব্য, “এমন গ্রেফতার করে লোক হাসানোর মানে হয় না।” যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই ঋতব্রতও জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি কারও উপর হামলা চালিয়েছি বলে ছবি থাকলে হাসতে হাসতে জেলে যাব।” দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঋতব্রত বা অন্য কাউকে গ্রেফতার করা হলে আইনত মোকাবিলা করা হবে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.